৩ দেশ ঘুরে ঠাই মিলল বাংলাদেশে - Shera TV
  1. [email protected] : akibmahmud :
  2. [email protected] : f@him :
৩ দেশ ঘুরে ঠাই মিলল বাংলাদেশে - Shera TV
সোমবার, ১৩ জানুয়ারী ২০২৫, ০৯:৪৯ পূর্বাহ্ন

৩ দেশ ঘুরে ঠাই মিলল বাংলাদেশে

সেরা টিভি
  • প্রকাশের সময় : শুক্রবার, ১৭ এপ্রিল, ২০২০

নিজস্ব প্রতিবেদক:

থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া ও মিয়ানমারে প্রবেশে ব্যর্থ হয়ে অবশেষে বাংলাদেশে আশ্রয় পেয়েছেন প্রায় ৪শ’ রোহিঙ্গা। দুই মাস সাগরে দুর্বিষহ দিন কাটানোর পর বুধবার (১৫ এপ্রিল) রাতে টেকনাফ সৈকতের জাহাজপুরা ঘাট থেকে তাদের উদ্ধার করেন বাংলাদেশ কোস্টগার্ডের সদস্যরা। উদ্ধার কাজে বিজিবি-পুলিশ সদস্য ও স্থানীয়রাও সহযোগিতা করেন। বৃহস্পতিবার (১৬ এপ্রিল) দুপুরে উদ্ধার করা রোহিঙ্গাদের জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনে (ইউএনএইচসিআর) হস্তান্তর করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন টেকনাফ স্টেশন কোস্টগার্ডের কর্মকর্তা লে. কমান্ডার এম. সোহেল রানা।

উদ্ধার হওয়াদের মধ্যে ৬৪ শিশু, ১৮২ জন নারী ও ১৫০ জন পুরুষ। তাদের মধ্যে অর্ধশতাধিক অসুস্থ হয়ে পড়েছেন খাবারের অভাবে। আরও ৩০ জন ট্রলারে মারা গেছেন বলে জানিয়েছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।

সোহেল রানা বলেন, ‘করোনাভাইরাস প্রতিরোধে উদ্ধার হওয়া রোহিঙ্গাদের ইউএনএইচসিআর-এর মাধ্যমে উখিয়া-টেকনাফে ১৪ দিন কোয়ারেন্টিনে রাখা হবে। এ সময় তাদের কারও মধ্যে করোনাভাইরাসের উপসর্গ দেখা দিলে নমুনা নিয়ে পরীক্ষা করা হবে। পরে ক্যাম্প ইনচার্জের মাধ্যমে তাদের স্ব-স্ব পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে। সীমান্তে মানবপাচার রোধে কোস্টগার্ড শক্ত অবস্থানে রয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘বুধবার রাতে সৈকতের জাহাজপুরা ঘাট থেকে উদ্ধারের পর তাদের ৪টি ট্রাকে করে পৌরসভার বাংলাদেশ-মিয়ানমার ট্রানজিট ঘাটে নিয়ে আসা হয়। সেখানে অসুস্থদের চিকিৎসা এবং শুকনো খাবার দেওয়া হয়। তারা এতটাই ক্ষুধার্ত ছিল যে, খাবার দেওয়ার পর হামলে পড়ে। এরপর তাদের ইউএনএইচসিআর-এ হস্তান্তর করা হয়।’

উদ্ধার করা একাধিক রোহিঙ্গা জানান, এ বছরের ফেব্রুয়ারির শেষে অনেকে মহেশখালী, কুতুবদিয়া, টেকনাফের সাবরাং, শাহপরীর দ্বীপ, বাহারছড়া ও খুরের মুখসহ বিভিন্ন জায়গা থেকে ছোট ছোট নৌকা নিয়ে সাগরে অবস্থানরত বড় জাহাজে ওঠেন। এরপর সাগরপথে মালয়েশিয়া যাত্রা করেন। ট্রলারে অনাহার ও নির্যাতনে প্রায় ৩০ জনের মৃত্যু হয়েছে। তাদের সাগরে ফেলে দেওয়া হয়েছিল। আবার অনেকে খেতে না পেরে কঙ্কালের মতো হয়ে গেছে।

মিয়ানমারের আকিয়াবের গরু বহনকারী একটি বড় ট্রলারে ৫২৮ জন রোহিঙ্গার মালয়েশিয়া যাত্রার কথা উল্লেখ করে বালুখালী ক্যাম্পের আবদুল মাজেদ বলেন, ‘সাত দিনের মাথায় মালয়েশিয়া পৌঁছায় তারা। এরপর সেখানে খাবার শেষ হয়ে যায়। এ সময় খাবারের অভাবে ১২ জন নারী ও ২৫ জন পুরুষ মারা যান। পরে তাদের মৃতদেহ সাগরে নিক্ষেপ করা হয়েছিল।’

টেকনাফের মৌচনি রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বাসিন্দা মো. ইয়াছিন বলেন, ‘এখানে কোনও কাজকর্ম নেই, বেকার জীবন কাটছিল। উন্নত জীবনের আশায় অন্যদের সঙ্গে সাগর পথে মালয়েশিয়া পাড়ি দিই। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক, সেখানেও ঠাঁই মেলেনি; বরং কাটাতে হয়েছে দুর্বিষহ দিন।’

তিনি বলেন, ‘খেয়ে না খেয়ে গত ৮ মার্চ আমাদের ট্রলারটি মালয়েশিয়া পৌঁছায়। সে দেশে দুইবার ওঠার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। সেখান থেকে এসে থাইল্যান্ডে ওঠার চেষ্টাও সফল হয়নি। তবে সেখান থেকে খাবার সংগ্রহ করা হয়েছিল। এক বেলা পানি ও ভাত খেয়ে কিছু দিন সাগরে ভাসার পরে নিজ ভূমি মিয়ানমারে ওঠার চেষ্টা করি। কিন্তু দেশটির নৌবাহিনী আমাদের আটক করে। পরে টাকার বিনিময়ে বাংলাদেশে ঠেলে দেয়। এ সময় ট্রলারের ক্রুদের মধ্যে মারামারি হয়। এতে বেশ কিছু যাত্রী আহত হন। পরে আমরা টেকনাফের উপকূল দিকে রওনা দিই।’

টেকনাফ-২ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অতিরিক্ত পরিচালক (অপারেশন) মেজর রুবায়াৎ কবীর বলেন, ‘সাগরে ট্রলারে নিজেরা নিজেরা মারামারিসহ বিভিন্নভাবে ৩০ জনের মতো প্রাণহানি হতে পারে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। মূলত ছোট ছোট নৌকায় করে সাগরে অবস্থানরত বড় জাহাজে ওঠে তারা। এরপর তারা সাগর পথে মালয়েশিয়া যাত্রা করে বলে শুনেছি। এই অঞ্চলে মানবপাচার বন্ধ করতে সমুদ্রে আমাদের সক্ষমতা বাড়াতে হবে।’

স্থানীয় একজন জনপ্রতিনিধি বলেন, ‘বুধবার রাতে বিশাল এক রোহিঙ্গাভর্তি জাহাজ টেকনাফ সৈকতে ভিড়ে। সেখানে ৪শ’র বেশি রোহিঙ্গা ছিলেন। এরমধ্যে কিছু লোক উপকূলে ঢুকে পড়েন। তারা মালয়েশিয়ায় ঢোকার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে এখানে ফিরে আসেন। তারা বলেছেন, সাগরে ট্রলারে অনেকে অনাহার ও নির্যাতনে মারা গেছেন।’

প্রসঙ্গত, ২০১৭ সালে রোহিঙ্গাদের ওপর মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর নির্যাতন শুরুর পর ৭ লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আসেন। এর আগে থেকে বাংলাদেশে ৪ লাখ অবস্থান করছিল। সব মিলিয়ে ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গা অবস্থান করছে কক্সবাজারে। এর আগে ২০১৫ সালের মে মাসে মালয়েশিয়া ও থাইল্যান্ড কর্তৃপক্ষের অভিযানে ওয়াং বার্মা ও ওয়াং পেরাহ পার্বত্য এলাকায় ২৮টি মানবপাচার শিবির ও ১৩৯টি গণকবরের সন্ধান পাওয়া গিয়েছিল। সেখান থেকে শতাধিক বাংলাদেশি ও মিয়ানমারের রোহিঙ্গা অভিবাসীর লাশ উদ্ধার করা হয়েছিল। এ ঘটনায় তখন বিশ্বজুড়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়।

সেরা নিউজ/আকিব

Please Share This Post in Your Social Media

এই ক্যাটাগরীর আরও সংবাদ
© All rights reserved by Shera TV
Developed BY: Shera Digital 360