নিজস্ব প্রতিবেদক:
করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্র থেকে বিশেষ ফ্লাইটে দেশে ফিরেছেন ২৪২ জন বাংলাদেশি। রোববার ভোরে ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছান তারা। কাতার এয়ারলাইন্সের বিশেষ চার্টার্ড এ ৩৫০-৯০০ এয়ারবাসটি শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় রাত ১১টা ০৪ মিনিটে ডুলস আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ত্যাগ করে।
ওয়াশিংটনে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস জানিয়েছে, কাতারের দোহা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এক ঘণ্টা প্রযুক্তিগত বিরতির পর রোববার ভোর ৪টায় বিমানটি হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে।
যাত্রীদের মধ্যে বেশিরভাগ যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করা বাংলাদেশি শিক্ষার্থী, পর্যটন ও ব্যবসায় ভিসায় যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়া বাংলাদেশি নাগরিক এবং কিছু সরকারি ও বেসরকারি কর্মকর্তা রয়েছেন।
এছাড়া যাত্রীদের মধ্যে স্কুল এবং কলেজের ৪৯ শিক্ষার্থীও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে যারা শিক্ষামূলক এবং সাংস্কৃতিক বিষয়াদি (ইসিএ) কার্যক্রমের আওতায় যুক্তরাষ্ট্রে গিয়েছিলেন।
দেশে ফেরত আসা যাত্রীদেরকে বিমানবন্দরে বিদায় জানান যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ জিয়াউদ্দিন। এসময় দূতাবাসের অন্যান্য কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন।
যাত্রীদের মধ্যে আটকে পড়া বেশ কিছু বাংলাদেশি শিক্ষার্থী রয়েছেন। এমন কয়েকজন শিক্ষার্থীকে পৌঁছে দেয়া এবং বাংলাদেশে করোনায় সম্মুখযোদ্ধাদের জন্য সুরক্ষা সামগ্রী পাঠানোর জন্য নিউইয়র্ক থেকে গাড়ি চালিয়ে ওয়াশিংটন যান নিউইয়র্কের খ্যাতিমান মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. ফেরদৌস খন্দকার।
এসময় তিনি সেখানে অন্য যাত্রীদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন। সেইসঙ্গে তাদের শারীরিক অবস্থার খোঁজও নেন। অনেক যাত্রীকে সুরক্ষা সামগ্রী মাস্ক ও গ্লাভস দেন।
পরে ডা. ফেরদৌস খন্দকার বলেন, বাংলাদেশিদের ফিরিয়ে নেয়ার এই ব্যবস্থা করা হলো, এটি দারুণ একটি উদ্যোগ। অনেকেই করোনার এই সময়টায় এখানে আটকে পড়েছিলেন। যেহেতু আমি নানাভাবে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছি, তাই কিছু সুরক্ষা সামগ্রী পাঠালাম। বাংলাদেশের যেকোন প্রয়োজনে আমি আছি।
ডুলস আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বাংলাদেশি যাত্রীদের পাশে যুক্তরাষ্ট্রের প্রবাসী ডা. ফেরদৌস খন্দকার
যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশ দূতাবাসের প্রেস মিনিস্টার শামীম আহমেদ জানিয়েছেন, যারা রওনা হয়েছেন, তারা সবাই যে করোনাভাইরাসমুক্ত সে বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের চিকিৎসকদের কাছ থেকে সনদ নিয়েছেন। ঢাকায় পৌঁছে সেই সনদ তাদেরকে যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে দেখাতে হবে বলে জানান তিনি।
প্রসঙ্গত, গত ৪ মে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আটকেপড়া নাগরিকদের ফেরাতে এই বিশেষ ফ্লাইটের ব্যবস্থা করে। এর আগে মহামারির মধ্যে আটকেপড়া বাংলাদেশি যারা দেশে ফিরতে ইচ্ছুক, তাদের তালিকা করে দূতাবাস এবং নিউইয়র্ক ও লসএঞ্জেলেসের কনস্যুলেট জেনারেল অফিস।
এর আগে ৩০ মার্চ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে ওয়াশিংটনে বাংলাদেশ দূতাবাস এবং নিউইয়র্ক ও লস অ্যাঞ্জেলেসের দুই কনসুলেটে তাদের ওয়েবসাইটের মাধ্যমে করোনাভাইরাস মহামারির কারণে যুক্তরাষ্ট্রে আটকেপড়া বাংলাদেশিদের কাছ থেকে তথ্য চেয়ে একটি নোটিশ প্রচার করে।
পরে বিপুল সংখ্যক আটকে থাকা বাংলাদেশি নাগরিক তাদের নিজস্ব ব্যয়ে একটি বিশেষ চার্টার ফ্লাইটে বাংলাদেশে ফেরার আগ্রহ প্রকাশ করে ৩০ মার্চ থেকে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত বাংলাদেশ মিশনগুলোতে ই-মেইলের মাধ্যমে তাদের তথ্য সরবরাহ করেন।
তারা বাংলাদেশ মিশনগুলোর মাধ্যমে বাংলাদেশ সরকারকে একটি বিশেষ বিমানের মাধ্যমে তাদেরকে ফিরতে সহায়তা করার অনুরোধ জানান। তারই অংশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ২৪২ জন বাংলাদেশি দেশে ফিরলেন।
সেরানিউজ/আকিব