ইন্টারন্যাশনাল ডেস্ক:
করোনা ভাইরাসে বেশুমার মৃত্যুতে ব্রাজিলকে বৃটেনের অনলাইন দ্য সান বিশ্বের কবরস্থান হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। ‘দ্য ওয়ার্ল্ডস গ্রেভইয়ার্ড’ শিরোনামে বলা হয়েছে, সোমবার ২৪ ঘন্টায় সব দেশকে ছাড়িয়ে ব্রাজিলে সবচেয়ে বেশি মানুষ মারা গেছেন। এক্ষেত্রে করোনা ভাইরাসের যে হটস্পট যুক্তরাষ্ট্র, তাকেও একদিনের মৃত্যুর সংখ্যায় ছাড়িয়ে গেছে দেশটি। সোমবার ২৪ ঘন্টায় ব্রাজিলে মারা গেছেন ৮০২ জন। যুক্তরাষ্ট্রে মারা গেছেন ৬২০ জন। সব মিলে ব্রাজিলে মারা গেছেন কমপক্ষে ২৪,০০০ মানুষ। এক গবেষণায় বলা হয়েছে, আগস্টের শুরু পর্যন্ত সেখানে মৃতের সংখ্যা এক লাখ ২৫ হাজারে উন্নীত হতে পারে। কমপক্ষে তিন লাখ ৭৭ হাজার মানুষ করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন সেখানে।
মোট আক্রান্তের দিক দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পরে এখন দ্বিতীয় স্থানে ব্রাজিল।
সাও পাওলোর সেমিটেরিরও ডি ভিলা ফরমোসা সমাধিক্ষেত্রের যে ছবি প্রকাশ পেয়েছে তাতে দেখা যাচ্ছে সারি সারি কবর খুঁড়ে রাখা হয়েছে। এ দৃশ্য দেখে যে কারো আতঙ্কে বুক কেঁপে ওঠার কথা। রিপোর্টে বলা হচ্ছে, দেশটিতে বছরে যে পরিমাণ মানুষ মারা যান তার চেয়ে শতকরা ৫০ ভাগ বেশি মানুষ মারা যাচ্ছেন করোনা ভাইরাসের কারণে।
এ অবস্থায় ইউনিভার্সিটি অব ওয়াশিংটনের ইনস্টিটিউট ফর হেলথ মেট্রিক্স অ্যান্ড ইভ্যালুয়েশন (আইএইচএমই) পূর্বাভাষ দিয়েছে, যদি ব্রাজিল লকডাউন কঠোর না করে তাহলে আগস্ট নাগাদ সেখানে মারা যেতে পারেন সোয়া এক লাখ মানুষ। আইএইচএমই-এর ড. ক্রিস্টোফর মারে লিখেছেন, ব্রাজিলকে অবশ্যই চীনের উহান মডেল, ইতালি, স্পেন ও নিউ ইয়র্কের মডেল অনুসরণ কতে হবে। মহামারি নিয়ন্ত্রণ এবং সংক্রমণ কমাতে তাদেরকে এটা করতেই হবে। দেশটিতে রয়েছে চিকিৎসক, কফিন ও কবরস্থানের সঙ্কট।
অন্যদিকে করোনা মোকাবিলার বিষয়ে ক্রমাগত চাপের মুখে রয়েছে সরকার। প্রেসিডেন্ট জায়ের বলসোনারো করোনা ভাইরাসকে ‘লিটল ফ্লু’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। এ ছাড়া রাজ্য সরকারগুলোর লকডাউন বন্ধের দাবিতে আয়োজিত র্যালিতে যোগ দিয়েছেন তিনি। ছবি তুলেছেন ছেলেমেয়েদের সঙ্গে। এসব কারণে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছেন প্রেসিডেন্ট বলসোনারো। এ মাসে একটি জনমত জরিপ করে ডাটাফোলহা। তাতে দেখা গেছে শতকরা ৪৫ ভাগ মানুষ মনে করেন তিনি করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলা করছেন বাজেভাবে অথবা খুব ভয়ানক উপায়ে। তবে শতকরা ২৭ ভাগ মানুষ মনে করেন তিনি পরিস্থিতি মোকাবিলা করছেন ভালভাবে অথবা চমৎকারভাবে।
এ সপ্তাহে সিএনএন’কে মানাউস শহরের মেয়র আর্থার ভারগিলিও নেতো বলেছেন, তার শহর এখন দেশে করোনা ভাইরাসের এপিসেন্টার। প্রেসিডেন্ট বলসোনারোর উচিত এখন তার পদ নিয়ে ভাবা। তিনি বলেছেন, ব্রাজিলে করোনা ভাইরাসে যেসব মানুষ মারা গেছেন তার জন্য প্রেসিডেন্টের দায়বদ্ধতা রয়েছে। আমি মনে করি, যারা এর জন্য দায়ী তার মধ্যে তিনিও একজন। মিস্টার প্রেসিডেন্ট বলসোনারো দয়া করে চুপ থাকুন। ঘরেই থাকুন। পদত্যাগ করুন।
অ্যামাজন অববাহিকায় সবচেয়ে বড় শহর মানাউস। সেখানে হাসপাতালগুলোতে ভেন্টিলেশনে রাখা আশঙ্কাজনক রোগী, হাসপাতালের কর্মীরা কফিন নিয়ে যাচ্ছেন স্থানীয় এক মর্গে- এমন চিত্রে সয়লাব ইন্টারনেট। এ অবস্থায় সম্প্রতি এক সপ্তাহান্তে ব্রাজিলের রাস্তায় বাচ্চাদের সঙ্গে ছবি তুলতে পোজ দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট বলসোনারো। এর ফলে অধিবাসীরা তাকে খুনি হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। পক্ষান্তরে প্রেসিডেন্ট বলসোনারো করোনা চিকিৎসায় ম্যালেরিয়া বিরোধী ওষুধ হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন ব্যবহার শুরুর পরামর্শ দিয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টও এমন পরামর্শ দিয়েছেন। এমনকি তিনি নিজে এই ওষুধ সেবন করেছেন বলে জানিয়েছেন। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র সরকারের ফুড অ্যান্ড ড্রাগ এডমিনিস্ট্রেশন (এফডিএ) সতর্ক করে বলেছে, করোনা চিকিৎসায় এই ওষুধ নিরাপদ ও কার্যকর এমন কোনো তথ্যপ্রমাণ নেই।
এ মাসের শুরুতে করোনা মোকাবিলায় গৃহীত পদক্ষেপের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে ব্রাজিলের স্বাস্থ্যমন্ত্রীর পদ ত্যাগ করেছেন নেলসন টেইক।
সেরা নিউজ/আকিব