অনলাইন ডেস্ক:
বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ বিমান সংস্থা এমিরেটস এয়ারলাইন্সের বিদায়ী প্রেসিডেন্ট টিম ক্লার্কের একটি সাক্ষাৎকারে এভিয়েশন সেক্টরের চিত্র উঠে এসেছে। দুনিয়াজুড়ে নানাভাবে এ শিল্পের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিরা নিউজটি ব্যাপকভাবে শেয়ার করছেন বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। পোড় খাওয়া ওই এভিয়েশন এক্সপার্ট মনে করেন- এমিরেটস তথা এভিয়েশন ইন্ডাস্ট্রিতে কোভিড-১৯ এর ধাক্কা সামলে ওঠা মোটেও সহজ হবে না। যদিও এমিরেটস প্রায় দু’মাস পুরোপুরি বন্ধ থাকার পর হাইজিন নিরাপত্তা সংক্রান্ত নব-সংযোজিত আন্তর্জাতিক নীতিমালা মেনে অনেক রুটেই কমার্শিয়াল ফ্লাইট ফের চালু করেছে। টিম ক্লার্ক কোনোরকম রাখঢাক না করেই বলেন, এমিরেটস পুরোপুরিভাবে তার আগের নেটওয়ার্কে ফিরতে কমপক্ষে ৪ বছর সময় লাগবে। যদি দুনিয়া স্বাভাবিক থাকে ফের আর কোনো প্রাণঘাতী করোনা বা এমন রোগ-বালাই’র প্রাদুর্ভাব না হয়।
আমিরাত সরকারের মালিকানাধীন ওই বিমান সংস্থা প্রতি সপ্তাহে সারা দুনিয়ায় কমবেশি ৩৬০০ ফ্লাইট পরিচালনা করতো। দুবাই’র অত্যাধুনিক বিমানবন্দরের টার্মিনাল থ্রিকে ঘিরেই ছিল এমিরেটস-এর বিশাল ওই কর্মযজ্ঞ। সেখান থেকে প্রায় ৮০টি রাষ্ট্রের দেড় শতাধিক শহরে এমিরেটস-এর বিচরণ ছিল।
বিভিন্ন মডেল ও সাইজের প্রায় ৩০০ এয়ারক্রাফট দিয়ে যাত্রীবাহী ফ্লাইটগুলো পরিচালিত হতো। এর বাইরে কার্গোর জন্য ছিল স্বতন্ত্র ব্যবস্থা। স্কাই কার্গোর নেটওয়ার্কও ছিল ভিন্ন।
করোনা পরিস্থিতির কারণে দেশে দেশে লকডাউন, ইমার্জেন্সি বা কারফিউ জারির কারণে সব ধরনের যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। সঙ্গত কারণেই এমিরেটসসহ বেশিরভাগ আন্তর্জাতিক ফ্লাইটও তাদের উড়ান মাটিতে নামাতে বাধ্য হয়। মার্চের মাঝামাঝি থেকে অধিকাংশ গন্তব্যে যাত্রীবাহী ফ্লাইট বন্ধ করতে শুরু করে এমিরেটস, যার প্রেক্ষিতে পুরোপুরি ফ্লাইট অপারেশন সাসপেন্ড হয় ২৩শে মার্চ। যা চলে ২০শে মে অবধি। ২১শে মে করোনা প্রতিরোধে স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করে সীমিত পরিসরে ফ্লাইট অপারেশন শুরু করে বিমান সংস্থাটি। বৃটেন ও অস্ট্রেলিয়ার মধ্যে ট্রানজিট ফ্লাইট চালু করাসহ ৮টি দেশের ৯টি শহরে ফ্লাইট অপারেশন শুরু করেছে এমিরেটস। আগামী ১লা জুলাই থেকে আরো ১৬টি গন্তব্যে এবং আরব বিশ্বের ১২টি দেশে ফের পরিপূর্ণ ফ্লাইট অপারেশনের ঘোষণা দিয়েছে সংস্থাটি। সম্প্রতি এক ওয়েবকাস্ট ইন্টারভিউতে ক্লার্ক বলেন, আমি মনে করি ২০২৪ সাল নাগাদ আমাদের কার্যক্রম স্বাভাবিক ছন্দে ফিরতে পারবে, তার আগে নয়। তবে এজন্য যৌক্তিকভাবেই পরিস্থিতির উন্নতির ধারাবাহিকতা থাকা জরুরি। যদি তা-ই হয় তবে এমিরেটস তার পুরনো গন্তব্যে ফ্লাইট পরিচালনা করতে সফল হবে আগের মতোই।
টিম ক্লার্কের মতে, বিদ্যমান করোনাকালটি তার দেখা ৩৫ বছরের ইতিহাসে সবচেয়ে কঠিন সময়। বৈশ্বিক ওই মহামারীর প্রভাবে তাদের কত কর্মীকে ভার্চুয়াল গোল্ডেন হ্যান্ডশেক করতে হয়েছে। এজন্য দুঃখ প্রকাশ করেন প্রতিষ্ঠানটির প্রেসিডেন্টের পদ ছেড়ে উপদেষ্টার দায়িত্ব নিতে যাওয়া টিম ক্লার্ক। অবশ্য তিনি ব্যাপকভাবে আশাবাদী যে, আগামী গ্রীষ্মের পর থেকে এই শিল্পে আগের অবস্থা ফিরতে শুরু করবে, যদি ২০২১ সালের শুরুতে ব্যাপকভাবে করোনার ভ্যাকসিন বাজারে পাওয়া যাবে। ক্লার্ক আরো বলেন, আমরা ধীরে ধীরে ভ্রমণের চাহিদা বাড়তে দেখবো, আর যদি তা-ই হয়, প্রয়োজনে আমরা ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে আমাদের বহর প্রস্তুত করতে সক্ষম হবো। বিশ্ব অর্থনীতিতে আর কোনো বড় ধরনের আঘাত না আসলে ২০২৩ এবং ২০২৪ এর দিকে ভ্রমণের চাহিদা বাড়তে পারে বলে তিনি দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
তবে সাক্ষাৎকারে তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় ছিল, ক্লার্কের ‘শারীরিক দূরত্ব’ ধারণার সঙ্গে দ্বিমত পোষণ। তার মতে, প্লেনে শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখাটা অর্থনৈতিকভাবে এবং পরিবেশগত খুব একটা কার্যকর পদ্ধতি নয়। তবে তিনি স্বাভাবিক অবস্থায়ও গ্লাভস ও ফেস মাস্ক পরার পক্ষপাতি। জানান, করোনাকালে তারা এটি সাপ্লাই করবেন আর পরবর্তীতে সেই ধারা অব্যাহত রাখতে উৎসাহিত করবেন।
সেরা নিউজ/আকিব