পাকিস্তানের মন্ত্রী-প্রধানমন্ত্রী ঘুম হারাম করে দেয়া কে এই তরুনী - Shera TV
  1. [email protected] : akibmahmud :
  2. [email protected] : f@him :
পাকিস্তানের মন্ত্রী-প্রধানমন্ত্রী ঘুম হারাম করে দেয়া কে এই তরুনী - Shera TV
সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০১:২২ অপরাহ্ন

পাকিস্তানের মন্ত্রী-প্রধানমন্ত্রী ঘুম হারাম করে দেয়া কে এই তরুনী

সেরা টিভি
  • প্রকাশের সময় : মঙ্গলবার, ৯ জুন, ২০২০

অনলাইন ডেস্ক:
একের পর এক রাজনীতিবিদের বিরুদ্ধে বিস্ফারক মন্তব্য করে চলেছেন এই সুন্দরী। মন্ত্রী থেকে শুরু করে প্রধানমন্ত্রী কাউকে বাদ দিচ্ছেন না, রীতিমতো ঘুম হারাম করে দিয়েছেন পাকিস্তানের রাজনীতিবিদদের। দেশটির রাজনীতিতে ঝড় তোলা ওই নারীর নাম সিনথিয়া ডি রিচি। তিনি আলোচিত মার্কিন নারী সাংবাদিক ও একজন ব্লগার। গত ২৮ মে সিনথিয়া অভিযোগ করেন, বেনজির ভুট্টোর স্বামী আসিফ আলি জারদারির সঙ্গে যেসব নারীর সম্পর্ক ছিল, নিজের রক্ষীদের সেইসব নারীদের ধর্ষণ করার নির্দেশ দিতেন বেনজির। সিনথিয়া এক দশকের বেশি সময় পাকিস্তানে বাস করছেন।

এর পর থেকে বিষয়টি জটিল আকার নিতে শুরু করে, এবং পাকিস্তান পিপলস পার্টির শীর্ষ নেতৃত্ব বিষয়টিতে জড়াতে থাকেন। শনিবার সিনথিয়া রিচি অভিযোগ করেন প্রাক্তন মন্ত্রী রেহমান মালিক তাঁকে ধর্ষণ করেছেন এবং প্রাক্তন পাক প্রধানমন্ত্রী ইউসুফ রাজা গিলানি ও আরেক মন্ত্রী তাঁর শ্লীলতাহানি করেছেন। মালিক ও গিলানি উভয়েই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। সিন্ধ প্রদেশের শাসক দল পিপিপি, ২০১৮ সালের সংসদ নির্বাচনে ব্যাপক পরাজয়ের পর এ ঘটনায় ফের ধাক্কা খেয়েছে এবং দাবি করেছে, ফেডারেল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সিকে দিয়ে রিচির বিরুদ্ধে তদন্ত করা হোক এবং পাকিস্তানে তাঁর বসবাসের শর্ত খতিয়ে দেখা হোক।
পাকিস্তান সংসদের উচ্চকক্ষ সেনেটে পিপিপি’র প্রতিনিধি শেরি রহমান টুইটারে পোস্ট করে বলেছেন, “আমি সাধারণত এ ধরনের নোংরা ঘাঁটি না, কিন্তু এসব মানহানিকর, জঘন্য অপবাদ সম্পূর্ণ মিথ্যানির্ভর। মহিলাদের অধিকার নিয়ে সদাসচেতন একজন শহিদ প্রধানমন্ত্রী সম্পর্কে এ ধরনের নোংরামি এই বট-চালিত হ্যান্ডেলের লেখকের পক্ষেই অবমাননাকর, তার বেশি কিছু নয়।” করোনাবাইরাসের ব্যাপক সংক্রমণ নিয়ে পাকিস্তান ভুগলেও বেশ কিছু পাকিস্তানি সিন্থিয়া রিচিকে নিয়ে মেতে উঠেছেন। পিপিপি’র বহু বিরোধী এই মুহূর্ত উপভোগ করছেন বটে, কিন্তু সমসংখ্যক মানুষ প্রশ্ন তুলেছেন, কে এই সিন্থিয়া রিচি?

কে এই সিনথিয়া রিচি?
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের পক্ষ থেকে তাঁকে একগুচ্ছ প্রশ্নের তালিকা পাঠানো হয়েছিল, কিন্তু তিনি জানিয়েছেন এ সপ্তাহে আসন্ন লাইভ টেলি ইন্টারভিউতে সমস্ত প্রশ্নের জবাব মিলবে। পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যমের রিপোর্ট অনুসারে যা বোঝা যাচ্ছে তা হল তিনি প্রায় এক দশক ধরে পাকিস্তানে রয়েছেন। তাঁকে একজন ব্লগার, ফিল্মমেকার ও সোশাল মিডিয়া উৎসাহী বলে বর্ণনা করা হয়েছে।

তার ফেসবুক পেজে লেখা রয়েছে তিনি লুইজিয়ানার বাসিন্দা, লুইজিয়ানা স্টেট ইউনিভার্সিটি থেকে তার মাস্টার্স ডিগ্রি ও হাউস্টন স্কুল অফ ল, পেপারডাইন ইউনিভার্সিটি ও জর্জ ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটি থেকে মাস কমিউনিকেশন, ক্রিমিনাল জাস্টিস, কনফ্লিক্ট রেজলিউশন, ক্লিনিকাল অ্যান্ড বিহেভিয়ারাল সাইকোলজি ও স্ট্র্যাটেজিক পাবলিক রিলেশনে স্নাতক স্তরের ট্রেনিং রয়েছে। তাঁর বায়োডেটায় বলা হয়েছে তিনি ফিল্মমেকিং সংস্থা ডিফারেন্ট লেনস প্রোডাকশনের সঙ্গে যুক্ত। এই সংস্থা ফেসবুক পেজে ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে সোয়াট উপত্যকার ছোট ভিডিও রয়েছে।

ইন্টারনেট সার্চ করে রিচির ব্লগের হদিশ মেলেনি, এবং যদিও তিনি গত দশ বছর ধরে বলে আসছেন যে তিনি তথ্যচিত্র বানাচ্ছেন, সেটা সম্ভবত তিনি এখনও বানিয়ে উঠতে পারেননি। পাকিস্তানি ম্যাগাজিন থেক্সপাটে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে রিচি বলেছিলেন ২০১০ সালে সে দেশে বন্যার সময় থেকে তিনি পাকিস্তান যাচ্ছেন। তিনি বলেছিলেন, তার যাতায়াতের খরচ জোগান পাকিস্তানি আমেরিকানরা।

ওই পত্রিকায় সাক্ষাৎকার দিতে গিয়ে তিনি বলেন, তাকে বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বক্তৃতা দেওয়ার আমন্ত্রণ জানানো হলে তিনি শ্রোতাদের পাকিস্তানের ইমেজ সম্পর্কে চমকে দিতে ভালবাসেন। তিনি বলেন, আমেরিকান সংবাদমাধ্যম পাকিস্তান সম্পর্কে অতীব নেতিবাচক।

সাক্ষাৎকার গ্রহণকারীকে তিনি বলেন, “পাকিস্তানিরা আমাকে বলেছেন তোমার মত মানুষ আমাদের প্রয়োজন যাতে মানুষ জানতে পারে আমরা কেমন, আমাদের সংস্কৃতি, আমাদের বিশ্বাস কী রকম… যখন লোকে আমাকে জিজ্ঞাসা করে আমি কেন পাকিস্তানকে বেছে নিলাম, তখন আমি উত্তর দিই আমি পাকিস্তানকে বাছিনি, পাকিস্তানই আমাকে বেছে নিয়েছে।”

তবে পাকিস্তানের কেউ কেউ তার সম্পর্কে সন্দেহ প্রকাশ করেছিলেন। সোশাল মিডিয়ায় তাঁরা বলেছিলেন ভদ্রমহিলা ক্ষমতার কাছাকাছি থাকা ব্যক্তি এবং তারা প্রশ্ন তুলেছিলেন, কীভাবে তিনি বছরের পর বছর পাকিস্তানে থাকার ভিসা পেয়ে যান, এবং সেই সব জায়গায় যাওয়ার অধিকার পেয়ে যান যেখানকার ক্লিয়ারেন্স দিয়ে থাকে পাকিস্তান শাসনকারী সামরিক প্রতিষ্ঠান।

তার ফেসবুক পেজে দেখা যাচ্ছে তিনি কাশ্মীর নিয়ে ভারতের বিরুদ্ধে লবিইংয়ে সক্রিয়। কেউ কেউ মনে করেন তিনি সিয়ার চর যার পাকিস্তানের নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠানের গভীরে যোগাযোগ রয়েছে। অন্যরা মনে করেন, তিনি পাক মিলিটারির হয়ে কাজ করছেন এবং এই টুইট অসামরিক রাজনীতিবিদদের বিরুদ্ধে, বিশেষ করে পিপিপি-র বিরুদ্ধে তাদের সাম্প্রতিকতম আঘাত।

সাংবাদিক, ভারত-পাক শান্তিকর্মী তথা মানবাধিকার কর্মী বীণা সারওয়ার বলেন, “আমি জানি না উনি সর্বসমক্ষে যা বলছেন তেমন অভিজ্ঞতা ওর হয়েছে কি না। এ ব্যাপারে তদন্ত হওয়া উচিত। তবে উনি এমন সময়ে এই অভিযোগ এনেছেন যার ফলে এখন দেশ মূল যে বিপদের সামনে রয়েছে সেই স্বাস্থ্য ও অর্থনীতির সংকট থেকে দৃষ্টি সরে গেল।” পিপিপি নেতৃত্বাধীন সিন্ধ সরকার সংক্রমণ আটকাতে অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছে, কেন্দ্রীয় সরকার যার চরম বিরোধিতা করছে।

পাকিস্তানি সামরিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক আয়েষা সিদ্দিকি বলেন, “এই ধরনের অভিযোগ রাজনৈতিক দলগুলির উপর চাপ সৃষ্টি করে, তাদের জনসমক্ষে সম্মানহানি ঘটে, সম্ভবত প্রশাসনিক অভাবঅভিযোগের মত বিষয় থেকে নজর ঘোরাতে এরকম করা হয়ে থাকে।” পাকিস্তানে এখন প্রায় ১ লাখ কোভিড পজিটিভ কেস রয়েছে, মারা গিয়েছেন ২০০০ জন। এমনটাও কাকতালীয় হতে পারে যে অভিযোগ এমন সময়ে এসেছে যখন সবে দশম জাতীয় অর্থ কমিশন গঠিত হয়েছে। কোভিড উত্তর পাকিস্তানে চারটি প্রদেশের পক্ষে চরম গুরুত্বপূর্ণ হবে অর্থের বরাদ্দ।

পিপিপি ১০ বছর আগে ক্ষমতায় এসে প্রদেশগুলির মধ্যে সম্পদবণ্টনে বদল এনেছিল যা বর্তমান সরকার বদল আনার চেষ্টা করলেও তা প্রতিরোধ করেছে একই সঙ্গে সংবিধানে প্রগতিশীল অষ্টাদশ সংশোধনী বাতিলের বর্তমান সরকারের চেষ্টাও আটকিয়েছে। রিচি পাকিস্তান তহাফুজ মুভমেন্ট (পিটিএম)কেও টেনে এনেছেন। এই গোষ্ঠী খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশে ব্যাপক জনসমর্থনপুষ্ট, বিশেষ করে পাকিস্তানে আফগান নীতির ভৌগোলিক কেন্দ্র দক্ষিণ ও উত্তর ওয়াজিরিস্তানে।

পিপিপি-র তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের পর তদন্তকারী সংস্থাকে দেওয়া এক চিঠির উল্লেখ করে তিনি বলেন, তিনি পিপিপি-র সঙ্গে পিটিএম-এর যোগাযোগ নিয়ে তদন্ত করছেন। পিটিএম জিহাদি গোষ্ঠীগুলিকে কাজে লাগিয়ে পাকিস্তানের ছায়াযুদ্ধের কট্টর সমালোচক। রাজনৈতিক দল হিসেবে দু বছর মাত্র বয়স হলেও এরাই একমাত্র সংগঠিত রাজনৈতিক শক্তি যারা পাক সেনাবাহিনীকে খোলাখুলি চ্যালেঞ্জ জানিয়েছে।

পিটিএমের সদস্য সমর্থকরা রিচির স্বার্থ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। নিজের উল্লিখিত তথাকথিচ চিঠিতে রিচি বলেছেন তিনি সরকার ও পাকিস্তান সেনার সঙ্গে যুক্ত বেশ কিছু সংস্থার সঙ্গে “নিবিড়ভাবে যুক্ত” থেকে কাজ করেছেন, “যেমন কাউন্টার টেররিজম বিভাগ, খাইবারপাখতুনওয়ারার মহিলা কম্যান্ডো, হাইওয়ে ও মোটরওয়ে পুলিশ, মিলিটারি, নাকটা প্রভৃতি”।

সিদ্দিকার কথায় বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। “ভারতে যখন ভারতের নীতি নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ অ্যাকাডেমিক কাজ হচ্ছে তখন পাকিস্তানকে তাদের ভাবমূর্তির জন্য এইরকম অদ্ভুত পথের আশ্রয় নিতে হচ্ছে এটা খুবই দুর্ভাগ্যজনক। এ থেকে বোঝা যায় যে ক্ষমতাসীনদের পাকিস্তানিদের উপর কোনও ভরসা নেই, তার চেয়ে তাঁরা বিদেশি সন্দেহজনক চরিত্রের উপর বেশি ভরসা করেন।”

এরই মধ্যে পরিচিত টেলিভিশন সেলিব্রিটি আলি সালিম দাবি করেছেন ইমরান খান যে রিচিকে প্রস্তাব দিয়েছিলেন, সে কথা রিচি নিজেই তাকে জানিয়েছেন। রিচি এর জবাব দিতে গিয়ে বলেছেন, আলি সালিমের নেশা করার ইতিহাস সুবিদিত এবং এখন তাঁর স্বাস্থ্য ভাল নেই। যুদ্ধ চলছে মূলত টুইটারেই। সেখানে রিচির সমর্থকরা যেকোনও প্রশ্নকারীকে দেশদ্রোহী ও পাকিস্তান বিরোধী বলে দাগিয়ে দিচ্ছে এবং রিচিবিরোধীরা তাঁর ভিসা, কাজ ও কে তাঁকে অর্থ জোগাচ্ছে সে নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন।

মানবাধিকার কর্মী মারভি সিরমেদ রিচিকে নিয়ে স্লাট শেমিং করতে নিষেধ করেছেন। তিনি বলেছেন, “আমাদের বন্ধুরা কেন ওকে গাল দিচ্ছেন, অপমান করছেন, যখন আমরা সকলেই জানি যে কে ওঁকে নিয়োগ করেছেন? উনি পাকিস্তানে হয়ত তাদেরই হাতে পণবন্দী। প্লিজ কখনও মহিলাদের স্লাট শেমিং করবেন না। কখনও না।”

সেরা নিউজ/আকিব

Please Share This Post in Your Social Media

এই ক্যাটাগরীর আরও সংবাদ
© All rights reserved by Shera TV
Developed BY: Shera Digital 360