সেরা নিউজ ডেস্ক:
বিশ্ব জুড়ে মহামারি সৃষ্টি করা করোনা ভাইরাস কোনো কোনো দেশে কমতির দিকে। যুক্তরাষ্ট্রে সংক্রমণ পিকে পৌঁছানোর পর ধারণা করা হচ্ছিল যে এবার ধীরে ধীরে ভূমির দিকে নামছে সংক্রমণরেখা। কিন্তু দেশটিতে পুলিশের হাতে এক কৃষ্ণাঙ্গ যুবক নিহত হওয়ার পর দেশটির বিভিন্ন শহরে তুমুল বিক্ষোভ হয়, যাতে লাখ লাখ মানুষ অংশগ্রহণ করে। সপ্তাহ দুয়েক ধরেই বর্ণবাদের বিরুদ্ধে বিক্ষোভে উত্তাল যুক্তরাষ্ট্র। বেশির ভাগ জায়গাতেই মানা হচ্ছে না সামাজিক দূরত্ব। তার ওপর গত মাসে মেমোরিয়াল ডে পালন করতে সমবেত হয়েছিল অসংখ্য মানুষ। ফলে দেশটিতে আবারও করোনার সংক্রমণ হু হু করে বাড়তে শুরু করেছে। তাই বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের মানুষের অসচেতনতাই দেশটিতে আবারও বিপদ ডেকে আনবে। কারণ টানা কমতে থাকা সংক্রমণ ফের বাড়তে শুরু করেছে।
গত রবিবার রোগী শনাক্তে সর্বোচ্চ রেকর্ড গড়েছে ফ্লোরিডা, টেক্সাসসহ যুক্তরাষ্ট্রের বেশ কয়েকটি অঙ্গরাজ্য। টানা চতুর্থ দিন সর্বোচ্চ সংক্রমণ রেকর্ড হয়েছে আলাবামায়। আলাস্কা, অ্যারিজোনা, আরাকানসাস, ক্যালিফোর্নিয়া, নর্থ ক্যারোলিনা, ওকলাহোমা, সাউথ ক্যারোলিনাও টানা তিন দিন নতুন রোগী শনাক্তের রেকর্ড গড়েছে। এসব এলাকায় অসংখ্য মানুষ মুখে মাস্ক না পরেই বিক্ষোভে অংশ নিয়েছে। ফলে এক জন করোনা রোগী থেকে অন্যদের মধ্যে সংক্রমণ ছড়িয়েছে সহজে। আগে থেকেই যুক্তরাষ্ট্রে করোনা সংক্রমণের হটস্পট ছিল লুইজিয়ানা। সেখানে আবারও এক দিনে ১ হাজার ২০০-এর বেশি রোগী শনাক্ত হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে গতকাল পর্যন্ত সংক্রমিত হয়েছে ২১ লাখ ৬৩ হাজার লোক। আর মারা গেছে ১ লাখ ১৭ হাজার ৮৭৫ জন। অন্যদিকে, গতকাল পর্যন্ত ব্রাজিলে আক্রান্ত হয়েছে ৮ লাখ ৬৭ হাজার। মৃত্যু হয়েছে ৪৩ হাজার ৩৯০ জনের।
ভারত পিকে পৌঁছাবে নভেম্বরে
এদিকে ভারতেও করোনা ভাইরাস পরিস্থিতি ভয়াবহ দিকে মোড় নিয়েছে। প্রতিদিন নতুন করে সংক্রমণ বাড়ছে। গতকাল পর্যন্ত ভারতে করোনায় আক্রান্ত হয়েছে ৩ লাখ ৩৩ হাজার ৪৭৫ জন। আর মৃত্যু হয়েছে ৯ হাজার ৫২৪ জনের। দেশটিতে করোনা ভাইরাস পিক টাইমে পৌঁছাতে পারে নভেম্বরের মাঝামাঝি সময়ের দিকে। সেই সময় দেশটিতে করোনা রোগীদের জন্য চিকিত্সায় ঘাটতি দেখা দিতে পারে আইসিইউ-শয্যা ও ভেন্টিলেটরের। ভারতের শীর্ষস্থানীয় সরকারি মেডিক্যাল গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিক্যাল রিসার্চের (আইসিএমআর) অপারেশনস রিসার্চ গ্রুপের এক গবেষণায় এই শঙ্কার কথা জানানো হয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, গত ২৫ মার্চ দেশ জুড়ে লকডাউন জারি করায় ভারতে করোনার পিক টাইম ৩৪ থেকে ৭৬ দিন পিছিয়ে গেছে। এর ফলে সংক্রমণ কমেছে ৬৯ থেকে ৯৭ শতাংশ। লকডাউনের কারণে স্বাস্থ্য অবকাঠামো এবং জনস্বাস্থ্যব্যবস্থা বৃদ্ধি করা সম্ভব হয়েছে। লকডাউন কার্যকর থাকলে পিকে পৌঁছাতে বিলম্ব হবে। এই সময়ের মধ্যে মহামারি মোকাবিলায় স্বাস্থ্যব্যবস্থার উন্নয়ন, পরীক্ষার সুবিধা বৃদ্ধি, আইসোলেশন, কন্ট্রাক্ট ট্রেসিং ও চিকিত্সার ব্যবস্থা করার সক্ষমতা বৃদ্ধি করা যাবে। ভারতীয় এই গবেষকেরা বলছেন, জনস্বাস্থ্য অবকাঠামোব্যবস্থা ৮০ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি করা সম্ভব হলে ভারতে মহামারির প্রকোপ প্রশমন করা যেতে পারে।
কিছু বিধিনিষেধ তুলবে ফ্রান্স
করোনা ভাইরাস মহামারি মোকাবিলায় দেশ জুড়ে জারি করা বিধিনিষেধের মধ্যে কয়েকটি তুলে নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ। সোমবার থেকে ক্যাফে ও রেস্তোরাঁ খোলা যাবে এবং ইউরোপের অন্যান্য দেশে ভ্রমণেরও অনুমতি দেওয়া হবে, ম্যাক্রোঁর ঘোষণায় এমনটি বলা হয়েছে বলে বিবিসি জানিয়েছে।
সেরা নিউজ/আকিব