স্পোর্টস ডেস্ক:
সীমান্তে সংঘর্ষের ঘটনায় ভারতজুড়ে চলছে চীনা পণ্য বয়কট। ভারতীয়দের ঘরের চাইনিজ টিভি এবং অন্যান্য ব্যবহার্য জিনিসপত্র ধ্বংস করার ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। ভারতের ক্রীড়াঙ্গনে এর প্রভাবটা কেমন হবে তারও চলছে পর্যালোচনা। আর সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, ভারতীয় খেলাধুলার বাজারে চীনা পণ্য বয়কট করা এত সহজ নয়। টেবিল টেনিস বল, শাটলকক, ব্যাডমিন্টন ও টেনিসের র্যাকেট, কুস্তির মাদুর, বর্শা, হাই জাম্পের থাম, বক্সিংয়ের শিরস্ত্রান (হেলমেট), পর্বত আরোহণের জিনিসপত্র ও অন্যান্য খেলাধুলার সামগ্রী চীন থেকে আমদানি করে ভারত।
ভারতীয় খেলার বাজারে চীনের আধিপত্য নিয়ে কোনো প্রশ্ন নেই। ভারতের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাব মতে, ২০১৮-১৯ চক্রে শতকরা ৫০ শতাংশের বেশি ক্রীড়াসামগ্রী চীন থেকে আমদানি করেছে ভারত। দেশটির অভ্যন্তরীণ উৎপাদন প্রতিষ্ঠান ভিএটিএস এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক লোকেশ ভাট বলেন, ‘খেলার বাজারে তাদের শেয়ার ৫০ শতাংশের বেশি।
আমরা বলি স্থানীয়দের সঙ্গে থাকুন। কিন্তু সরকারের নীতি চীনের পণ্যকে বাজারে একচ্ছত্র আধিপত্যের সুযোগ করে দিয়েছে।’
আইটিএফ র্যাঙ্কিংয়ে ভারতের সেরা টেবিল টেনিস খেলোয়াড় সাথিয়ান গনসেকরান জানান, র্যাকেট ও টেবিলে ভারত স্বয়ংসম্পূর্ণ। কিন্তু বলের বাজারে তা নয়।
সেখানে চীনের তৈরি বলের একাধিপত্য। গনসেকরান বলেন, ‘স্পিন ও বাউন্সের সঙ্গে মানিয়ে নিতে সব ভারতীয় খেলোয়াড় চীনের তৈরি বল দিয়ে অনুশীলন করে। অন্যান্য পর্যায়ে আলাদা ব্র্যান্ডের আলাদা বল দেখবেন। এমনকি স্টিগা (সুইডেন) কিংবা ভারতের স্ট্যাগ কিনলেও দেখবেন এ বলগুলো সব চীনে তৈরি।’
ভারতের বক্সিং ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক জয় কোওলি জানান, অস্ট্রেলিয়ার ‘স্টিং’ প্রতিষ্ঠাণের ক্রীড়াপণ্য ভারতীয় বক্সারদের মাঝে জনপ্রিয়। তবে এগুলো সব চীনে তৈরি হয়। ভারতের অভ্যন্তরীণ টুর্নামেন্টে অবশ্য দেশি বক্সিং ক্রীড়াসরঞ্জামের কদর আছে। ঘরোয়া টুর্নামে›ন্টের চাহিদা মেটায় বক্সিংয়ের ভারতে তৈরি ক্রীড়াসরঞ্জাম। কিন্তু উঁচু মানের টুর্নামেন্ট ও ভালো বক্সারের জন্য বাইরে থেকে সরঞ্জাম আমদানি করতে হয়। ২০১৮-১৯ চক্রে বক্সিংয়ে ভারতের খরচ করা ৩ কোটি রুপির মধ্যে ১.৩৮ কোটি পেয়েছে চীন।
হকি স্টিক, বল, ক্রিকেট ব্যাট ও বল এসব মূলত রপ্তানি করে থাকে ভারত। সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস-এর প্রতিবেদনে জানানো হয়, এসব সরঞ্জাম তৈরির কাঁচামালের জন্য ভারত চীনের ওপর নির্ভরশীল। ভারতের ফুটবল, ভলিবল, বাস্কেটবল ব্র্যান্ড ভেক্টর-এর মুখপাত্র বিকাশ গুপ্ত জানান, বল তৈরিতে পলিইউরেথ্রিন এবং ইথিলিন-ভিনাইল তারা চীন থেকে আমদানি করেন। বিকাশ বলেন, ‘ভারতের কাঁচামাল তৈরির প্রক্রিয়া ভালো না। ইউরোপে এবং যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি করতে কাঁচামালে যে মানের প্রয়োজন তা হয় না।’
শরীরচর্চায় জিমনেশিয়ামের নানা জিনিসপত্রেও রয়েছে চীনা পণ্যের আধিপত্য। লোকেশ ভাট বলেন, ‘জিমে লোহার রড, বেঞ্চ এবং অন্যান্য জিনিসপত্র চীন থেকে আমদানি করা হয়। ট্র্যাকস্যুটের সুতোও চীনের। কারণ, ওদেরগুলো সস্তা। লোকেশ বলেন, বাজার গবেষণা, উন্নয়ন এবং দামের সমস্যাগুলো আগে ঠিক করতে হবে। হুট করেই আমরা চাইনিজ পণ্য বয়কট শুরু করতে পারি না।’
সেরা নিউজ/আকিব