লাইফস্টাইল ডেস্ক:
বিশ্বব্যাপী করোনার প্রভাবে বদলে গেছে জীবনের দিনলিপি। কাজের ধরনেও এসেছে ভিন্নতা। নিত্যদিনের রুটিনে এসেছে আমূল পরিবর্তন। লাখ লাখ মানুষ মূলত ঘরবন্দি জীবন পার করছে। কিন্তু প্রতিদিনের প্রয়োজনীয় কাজগুলো চালিয়ে নিতে হচ্ছে। সৌন্দর্য চর্চায়ও উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন লক্ষণীয়। ছেলে কিংবা মেয়ে প্রত্যেকের রূপচর্চার দায়িত্ব এখন নিজের। কয়েক মাস ধরে দীর্ঘ লকডাউনে অন্য সব ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের ন্যায় সেলুন-পার্লারও বন্ধ রয়েছে। কিছু কিছু স্থানে লকডাউন তুলে নিলেও করোনা সংক্রমণ থেকে সুরক্ষিত থাকতে নিজের রূপচর্চার দায়িত্ব নিজেকেই নিতে হচ্ছে।
করোনায় আতঙ্ক থাকলেও নিজেকে পরিপাটি ও সুন্দর রাখতে চেষ্টার কমতি নেই আমাদের। করোনাকালে ঘরে যারা অফিস করেন তাদের নিয়মিত অফিস মিটিং বা সংশ্নিষ্টদের সঙ্গে ভিডিও যোগাযোগও করতে হয়। ফলে সবার সামনে নিজেকে উপস্থাপন ও ঘরের ভেতর নিজেকে পরিপাটি রাখতে প্রয়োজন নিয়মিত পরিচর্যা। নিজেকে ধরে রাখতে মেয়েদের পাশাপশি ছেলেদেরও নিতে হয় কিছু পদক্ষেপ। চুল কাটা, শেভ, অবাঞ্ছিত লোম পরিস্কার রাখতে হয় নিয়মিত। বিশেষ করে পুরুষের সৌন্দর্যচর্চাকে নিখুঁত করায় অন্যতম ভূমিকা রাখতে পারে একটি ভালো মানের ট্রিমার। চাহিদা অনুযায়ী লুক তৈরিতে সঠিক ট্রিমারই হতে পারে নিত্যসঙ্গী।
প্রয়োজন অনুযায়ী ট্রিমার
প্রয়োজন অনুযায়ী ট্রিমারের ভিন্নতা লক্ষণীয়। শুকনো বা ড্রাই শেভিংয়ের জন্য বাজারে রয়েছে ইলেক্ট্রনিক শেভার। যেটা অধিক পরিচিত। চুল কাটার জন্য রয়েছে আলাদা ট্রিমার। শুধু দাড়ি বা চুল ছাড়াও আন্ডার আর্ম হেয়ার, অবাঞ্ছিত লোম ও কানের পশমের জন্য রয়েছে ভিন্ন আকারের ট্রিমার। একই সঙ্গে নারী-পুরুষ উভয়ের শরীরের পশম দূর করার ট্রিমারও পাওয়া যায়।
ভিন্ন ভিন্ন প্রয়োজনে যেহেতু আলাদা আলাদা ট্রিমার পাওয়া যায় তাই আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী ট্রিমার বেছে নেওয়া সহজ। শুধু দাড়ি কাটার জন্য যদি ট্রিমার কিনতে চান তাহলে একটি আদর্শ দাড়ির ট্রিমারই আপনার জন্য যথেষ্ট। কিন্তু যদি দাড়িগুলো একটু লম্বা ধাঁচের হয় তাহলে আরও ভারী ও বিশেষ ধরনের দাড়ি বা চুলের ক্লিপার ব্যবহার করতে হবে। পারফেক্ট, স্টাইলিশ ও গোছানো দাড়ি রাখতে ট্রিমারের কোনো বিকল্প নেই বলা চলে। আপনি যদি হালকা চাপদাড়ি পছন্দ করেন এবং ফাইভ-ও-ক্লক শ্যাডো স্টাইলে চাপ দাড়ি রাখতে চান, তাহলে আপনার ট্রিমারে ০.৩-০.৫ মিমি. সেট করে নিতে হবে। মোটামুটি লম্বা দাড়ির জন্য ট্রিমারে ২-৫ মিমি. দৈর্ঘ্যের মধ্যে মাপ নির্ধারণ করে দেওয়া যায়। অধিকাংশ ট্রিমারেই সুবিধা ও প্রয়োজন অনুযায়ী দেওয়া লেভেলে রেখে ব্যবহার করা যায়। তবে আপনার কাটার দক্ষতার ওপর নির্ভর করে স্টাইল।
কেনার সময় দেখে নিন
বাজারে ব্র্যান্ড ও ননব্র্যান্ড উভয় ট্রিমারই পাওয়া যায়। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ট্রিমারের সঙ্গে পরিবর্তনশীল গাইড কম্ব ও অন্যান্য আনুষঙ্গিক যন্ত্রপাতি দেওয়া থাকে, যা ট্রিমার ব্যবহার সহজ করে। তবে কেনার সময় কিছু বিষয় দেখে নিলে ভালো ও সঠিক পণ্যটি কেনা যায়। ব্র্যান্ড, আকার, ওজন, কালার, ব্লেডের ধরন ও স্থায়িত্ব, উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান, শার্পেনিং সিস্টেম, লুব্রিক্যান্ট বা পিচ্ছিলকারক পদার্থ ইত্যাদি দেখে নিন। আনন্দময় ও আরামদায়ক ব্যবহারের জন্য ট্রিমারে অনেক রকম ফিচার থাকে, এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- রক্ষণাবেক্ষণের জন্য পরিবর্তনযোগ্য ব্যাটারি, সর্বোচ্চ স্টাইলিংয়ের জন্য বিভিন্ন দৈর্ঘ্য নির্ধারণের সেটিংস, বহনযোগ্যতা ইত্যাদি।
নারী-পুরুষ উভয়ের ট্রিমারগুলোর বৈশিষ্ট্য ও চাহিদা প্রায় একই রকম, পার্থক্য শুধু তাদের ব্যবহারে। মেয়েদের জন্য বিশেষভাবে ডিজাইন করা ট্রিমারগুলো পাতলা চুল বা পশম কাটার মতো করে তৈরি এবং এর আকৃতি কিছুটা ফ্লেক্সিবল ও বাঁকানোর সিস্টেম দেওয়া থাকে, ফলে ব্যবহারে সুবিধা হয়। এছাড়া তেমন কোনো বিশেষ পার্থক্য নেই। তবে বর্তমানে আধুনিক প্রযুক্তির লেজার ট্রিমারও পাওয়া যাচ্ছে, যা দিয়ে সূক্ষ্ণভাবে অবাঞ্ছিত লোম পরিষ্কার করা যায়।
তারবিহীন বনাম তারসহ ট্রিমার
কর্ডলেস অর্থাৎ তারবিহীন নাকি তারসহ- কোনটি বেশি ভালো, কোনটি ব্যবহারে স্বাচ্ছন্দ্য দেয়। ট্রিমার ব্যবহারের ক্ষেত্রে আরাম, স্বাচ্ছন্দ্য ও সুবিধা- যেই জিনিসটি নিয়ে আমরা সবচেয়ে বেশি ভাবি তা হলো তারবিহীন নাকি তারসহ ট্রিমার, কোনটি কেনা উচিত। এ প্রশ্নের উত্তরে উভয় ট্রিমারের পক্ষ্যেই যুক্তি মেলে। তবে তারবিহীন ট্রিমার যে কোনো অবস্থানে সুবিধামতো ব্যবহারের সুবিধা দেয়। বহনযোগ্য ও নিরাপদভাবে ব্যবহার করা যায়। ব্যাটারিচালিত বা তারবিহীন দাড়ির ট্রিমারগুলো তারসহ বা কর্ডেড ট্রিমারের চেয়ে কম শক্তিশালী, এমন ভুল ধারণা অনেকেরই রয়েছে। ভালো মানের ট্রিমার কোনোভাবেই দুর্বল বা কম শক্তিশালী হয় না। অনদিকে তারসহ ট্রিমার দীর্ঘ সময় ব্যবহারের স্বাধীনতা দেয়। চার্জ শেষ হওয়ার বাড়তি চিন্তা করতে হয় না। তবে অনেক তারবিহীন বা ব্যাটারিচালিত ট্রিমার তারযুক্ত অবস্থায় ব্যবহার করার অপশনও থাকে। তাই ব্যবহার ও সুবিধার কথা বিবেচনায় রেখে পছন্দের ট্রিমারটি কিনুন।
কেনাকাটা
ব্র্যান্ডের ট্রিমারগুলো নির্দিষ্ট শোরুম বা আউটলেটে পাওয়া যায়। যমুনা ফিউচার পার্ক, বসুন্ধরা শপিং মল, ইস্টার্ন প্লাজা, মোতালেব প্লাজা, প্লাজা এআর, মোতালেব প্লাজাসহ বড় শপিংমল, সুপারশপ ছাড়াও হাতের কাছের দোকানেও এখন পাওয়া যায় ট্রিমার। বাজারে চায়না নির্মিত বিভিন্ন দাম ও ধরনের ট্রিমারে ছেয়ে গেছে।
দারাজ, ইভ্যালি, বিক্রয়ডটকম, রকমারিসহ বিভিন্ন অনলাইন প্ল্যাটফর্মে অনলাইনে কেনা যায় পছন্দের ট্রিমার। করোনা পরিস্থিতি বিদ্যমান থাকায় অনলাইনে হোম ডেরিভারির মাধ্যমে বেশি বিক্রি হচ্ছে ট্রিমার। মান ও ব্র্যান্ড অনুযায়ী ট্রিমারের দাম নির্ভরশীল। ৪০০ টাকা থেকে শুরু করে ১৫ হাজার টাকার ট্রিমার বাজারে পাওয়া যাচ্ছে। তবে ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য দুই থেকে চার হাজার টাকার মধ্যে ভালো ট্রিমার পাওয়া যায়। পারফেক্ট, স্টাইলিশ ও গোছানো অবয়ব ও নিত্যদিনের ব্যবহারের ফলে ট্রিমার হয়ে গেছে আধুনিক জীবনের নিত্যসঙ্গী।
সেরা নিউজ/আকিব