নিজস্ব প্রতিবেদক:
প্রযুক্তির উৎকর্ষের সঙ্গে অপরাধের ধরনও পাল্টে যাচ্ছে। মানুষ যত সচেতন হচ্ছে, ততই যেন নিখুঁত হচ্ছে প্রতারকদের কৌশল। তেমনই একটি কৌশল হলো বিদেশি ফোন নম্বর ব্যবহার করে কল দেওয়া। মাঝেমধ্যেই দেখা যায়, অপরাধীরা তাদের অবস্থান বিদেশে বোঝাতে সেই দেশের নম্বর থেকে কল করে। নম্বর যাচাই করে ভুক্তভোগী দেখেন ঠিকই আছে। এতে ভয় পেয়ে অনেক সময় অপরাধীর চাহিদা অনুযায়ী টাকা দিয়ে দেন অনেকে।
তবে ঘটনাগুলো তদন্তে দেখা যায়, প্রযুক্তির সহায়তা নিয়ে দেশে বসেই কলগুলো করা হয়েছে। সর্বশেষ রাজধানীর এক বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রীর সঙ্গে এভাবে প্রতারণা করা হয়। তাই যে কোনো ক্ষেত্রে সন্দেহ হলে উপযুক্ত মাধ্যমে যাচাই ও প্রয়োজনে পুলিশের সহায়তা নিতে বলছেন সংশ্লিষ্টরা।
পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) সাইবার পুলিশ সেন্টারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার খায়রুল আলম বলেন, ‘অপরাধীরা যতই কৌশলি হোক, পুলিশ তাদের চেয়ে এক ধাপ এগিয়ে থাকে। ফলে যেভাবেই তারা নিজেদের আড়াল করুক না কেন, ধরা তাদের পড়তেই হয়। ওই বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রীর গোপন ছবি অনলাইনে ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে অর্থ দাবির ক্ষেত্রেও তেমনটা হয়েছে। অভিযুক্ত শাকিল মাহমুদ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি ফোন নম্বর ব্যবহার করে ছাত্রীকে হুমকি দিয়েছিলেন। তদন্তের মাধ্যমে অবস্থান শনাক্ত করে তাকে গাজীপুর থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।’
সিআইডির সাইবার পুলিশ সেন্টার সূত্রে জানা যায়, কিছু ঘটনায় সংশ্লিষ্ট অপরাধীর অবস্থান নির্দিষ্ট কোনো দেশে বোঝাতে প্রযুক্তির অপব্যবহারের ঘটনা ঘটেছে। এর আগে প্রতিবেশী দেশ বা মধ্যপ্রাচ্যের ফোন নম্বর রোমিং করে ব্যবহারের প্রবণতা দেখা গেছে। এখনও কোনো কোনো ঘটনায় তেমনটা হয়। ঢাকার কোনো শীর্ষ সন্ত্রাসী দাবি করে হয়তো দুবাইয়ের নম্বর থেকে কল করা হয়। নানা অজুহাতে চাওয়া হয় মোটা অঙ্কের টাকা। তবে এখন প্রতারণার কৌশল আরও সহজ হয়ে গেছে। প্রযুক্তিগত জ্ঞান রাখে এমন কেউ বা তার সহায়তা নিয়ে অন্য কেউ ইন্টারনেটের মাধ্যমে কল করতে পারে। এমনটাই ঘটেছিল ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীর সঙ্গে।
তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানান, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে থাকা এক যুবকের সঙ্গে ওই ছাত্রীর বিয়ের কথা চূড়ান্ত হয়েছিল। এরপর তারা নিজেদের মধ্যে কথা বলেন ও একসময় কিছু গোপন ছবি আদান-প্রদান করেন। হঠাৎ যুক্তরাষ্ট্রে এক সন্ত্রাসী হামলায় যুবকের মৃত্যু হয়। কিছুদিন পর যুক্তরাষ্ট্রের একটি নম্বর থেকে ছাত্রীকে ফোন দিয়ে হ্যাকার ও সাইবার বিশেষজ্ঞ পরিচয়ে কথা বলে এক যুবক। ছাত্রী ও নিহত যুবকের গোপন ছবি-ভিডিও তার কাছে রয়েছে জানিয়ে বিপুল পরিমাণ ডলার চায় সে। প্রমাণ হিসেবে কিছু ছবি ছাত্রীর কাছে পাঠায়।
সিআইডির এক কর্মকর্তা বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রে ওই যুবকের মৃত্যুর পর ঘটনা তদন্ত করে সেখানকার পুলিশ তার ব্যবহৃত ল্যাপটপ ও অন্যান্য ডিভাইস বাংলাদেশে তার পরিবারের কাছে পাঠায়। ডিভাইসগুলো লক করা থাকায় তা খুলতে তারা একটি দোকানে যান। তাদের ধারণা, সেখান থেকেই কিছু ঘটে থাকতে পারে। এরপর সাইবার পুলিশের একটি বিশেষ দল যুক্তরাষ্ট্রের যে নম্বরটি ব্যবহার করে ছাত্রীকে কল করা হয়, সেটির সূত্র ধরে তদন্ত এগিয়ে নেন। একপর্যায়ে গাজীপুর থেকে শাকিল মাহমুদকে গ্রেপ্তার করা হয়। ডলার চেয়ে হুমকি দেওয়ার সব তথ্যপ্রমাণও তার কাছে পাওয়া যায়। ডিভাইসগুলো যে দোকানে আনলক করতে দেওয়া হয়েছিল, শাকিল ছিল সেখানকার ম্যানেজর ও দক্ষ টেকনিশিয়ান।’
সেরা নিউজ/আকিব