অনলাইন ডেস্ক:
ঊর্বশী যাদব। ভারতের গুরুগ্রামের এক খেটে খাওয়া নারী। এক সময় নূন আনতে পান্তা ফুরোনোর দশা থেকে এখন কোটিপতি। ছিলেন ঠেলাগাড়ির মালিক। আর এখন তিনকোটি রুপির বাড়ির গ্যারেজে তার চড়ার জন্য অপেক্ষা করে কোটি টাকার এসইউভি গাড়িও। কীভাবে হলো এটা?
অবশ্যই পরিশ্রম। পরিশ্রম করলে সাফল্য এক সময় ধরা দেবেই। উর্বশীর এই সাফল্যের পেছনেও রয়েছে পরিশ্রমের গল্প।
‘ঊর্বশী’জ ছোলা-কুলচা’। গুরুগ্রামের বেশ পরিচিত একটি নাম। এই দোকানেরই মালিকের ঊর্বশী যাদব। রাস্তার পাশে ছোট একটা ঠেলাগাড়িতে ছোলা-কুলচা বিক্রি করতেন তিনি। আর এখন এক রেস্তোরাঁর মালিক।
ঊর্বশী কিন্তু স্বেচ্ছায় এই পেশায় আসেননি। পরিস্থিতিই তাকে টেনে এনেছিল এই ব্যবসায়। সম্ভ্রান্ত পাঞ্জাবি পরিবারের মেয়ে। স্নাতক শেষ দিল্লিতে একটি নামী রেস্তোরাঁয় অফিস নির্বাহীর কাজ নেন। ২০১০ সালে অবসরপ্রাপ্ত বিমান বাহিনীর সদস্যের ছেলে অমিত যাদবের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। অমিত একটি নামী রিয়েল এস্টেট সংস্থায় ম্যানেজারের কাজ করতেন। ২০১০ সালেই ক্রিকেট খেলতে গিয়ে অমিতের একটি দুর্ঘটনা ঘটে। ঊর্বশী ফের সিদ্ধান্ত নেন কাজ শুরু করার। স্কুলশিক্ষকের প্রশিক্ষণ নেন। ২০১৩ সালে একটি স্কুলে শিক্ষকতা শুরু করেন। সব কিছুই এ পর্যন্ত ঠিকঠাক চলছিল। কিন্তু ২০১৬ সালে তার জীবনে ভয়ঙ্কর অন্ধকার নেমে আসে।
সে বছর বাড়ির ছাদ থেকে পড়ে গিয়ে গুরুতর জখম হন অমিত। বাধ্য হয়ে তাকে কাজ ছাড়তে হয়। এদিকে সন্তানদের পড়াশোনা, সংসার চালানো- সব কিছুই ঊর্বশীর ঘাড়ে এসে পড়ে। এখান থেকেই তার জীবনটা অন্য খাতে বইতে শুরু করে। সন্তানদের পড়াশোনা, সংসার ভালভাবে চালানোর জন্য স্বামী-স্ত্রী মিলে ব্যবসায় নামার চিন্তাভাবনা শুরু করেন। কিন্তু কীসের ব্যবসা করবেন স্থির করতে পারছিলেন না। কোনও রেস্তোরাঁ বা বিউটি পার্লার খোলার চিন্তাভাবনা শুরু করেন। কিন্তু অত পুঁজি পাবেন কোথায়?
একদিন ঊর্বশী রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলেন। হঠাৎই তার চোখে পড়ে রাস্তার ধারে ঠেলাগাড়িতে এক ব্যক্তি ছোলা-কুলচা বিক্রি করছেন। তার সঙ্গে কথা বলে এই ব্যবসা সম্পর্কে সব কিছু জেনে নেন। বিষয়টা অমিতকে গিয়ে বলার পর তিনি একটু আশ্চর্যই হন।
তবে সব দ্বিধাদ্বন্দ্ব ঝেড়ে ফেলে একটা ঠেলাগাড়ি কিনে ছোলা বিক্রি করতে শুরু করেন। ঠেলাগাড়ির নাম দিলেন ‘ঊর্বশী’জ ছোলা-কুলচা’।
প্রথম প্রথম অবশ্য আত্মীয়স্বজনরা নিরুৎসাহিত করেন উর্বশীকে। উর্বশীর নিজেরও সন্দেহ ছিল শেষ পর্যন্ত সফল হবেন কিনা।
কিন্তু মাস দেড়েকের মধ্যেই প্রচুর গ্রাহক আসতে শুরু করে। এর পর ঊর্বশীর এই ঠেলাগাড়ির খাবার সম্পর্কে কোনও গ্রাহক ফেসবুকে শেয়ার করেন। তারপর থেকে আর ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। দিনে আড়াই-তিন হাজার রুপি উপার্জন করতেন। সকাল সাড়ে ৮টায় দোকান শুরু করতেন। বন্ধ করতেন বিকাল সাড়ে ৪টায়। এভাবেই কোটিপতি হয়ে যান ঊর্বশী। সূত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা।
সেরা নিউজ/আকিব