ফ্রিজেও থাকতে পারে করোনা ভাইরাস! যা বলছে গবেষনা - Shera TV
  1. [email protected] : akibmahmud :
  2. [email protected] : f@him :
ফ্রিজেও থাকতে পারে করোনা ভাইরাস! যা বলছে গবেষনা - Shera TV
সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:৩৩ অপরাহ্ন

ফ্রিজেও থাকতে পারে করোনা ভাইরাস! যা বলছে গবেষনা

সেরা টিভি
  • প্রকাশের সময় : সোমবার, ২৭ জুলাই, ২০২০

অনলাইন ডেস্ক:

যাবতীয় অশান্তির কেন্দ্রে এখন ফ্রিজ। গৃহিণী সকালে উঠে নাকে মাস্ক, হাতে গ্লাভস ও চোখে চশমা পরে ফ্রিজ থেকে আনাজপাতি, মাছ-মাংস-ডিম, দুধ-পাউরুটি, সব বার করে, কাটাকুটি ধোয়াধুয়ি সেরে, দুধ ফুটিয়ে, পাউরুটি টোস্ট করে, ডিম সেদ্ধ করে তবে মাস্ক খুলছেন, চশমা খুলছেন, গ্লাভস খুলে হাত সাবান-জলে ধুয়ে ব্রেকফাস্ট সাজাচ্ছেন টেবিলে। রান্নাবান্নার আগে আবার এক ব্যাপার। কাঁচা আনাজ, কাঁচা মাছমাংস যতক্ষণ না পুরোপুরি রান্না হচ্ছে, মুখে মাস্ক, চোখে চশমা। বিকেলে আরেকবার ফ্রিজে হাত, নাক-মুখ-চোখ-হাত ঢেকে, রান্না করা খাবার ঢোকানোর জন্য। আরেকবার রাত্রে। তখনও ফ্রিজের খাবার বার করে, গরম করে খেতে বসার আগে পর্যন্ত নাক-চোখ-মুখ ঢাকা, হাত ধোওয়া ইত্যাদি। কিন্তু কেন? হঠাৎ ফ্রিজ কী এমন দোষ করল?

উৎস খবর

সবের উৎস এক খবর। কোন চ্যানেলে বুঝি দেখিয়েছে, এক পরিবারে লকডাউন হওয়ার পর থেকে কেউ বাইরে বার হননি, অথচ তাঁদের সবার কোভিড হয়েছে। জীবাণুর উৎস খুঁজতে গিয়ে চোখ পড়েছে ফ্রিজে। দিনের মধ্যে দশবার ফ্রিজ খোলা-বন্ধ করার সময়ই নাকে-মুখে বা চোখে ঢুকেছে করোনা। শাক-সব্জি, মাছ-মাংসে লেগে সে নাকি ফ্রিজের ঠান্ডায় জমিয়ে বসেছিল, গ্লাভস না-পরা হাতে সে সব কাটা-ধোওয়ার অবসরে লেগেছে । সেই হাত নাকে-মুখে বা চোখে লেগে জীবাণু সংক্রমণ ছড়িয়েছে বা খুব কাছ থেকে ফ্রিজ খোলা বা সব্জি-মাছমাংস কাটা-বাছার সময় জীবাণু সরাসরি নাকে ঢুকেছে। তারপর পুরো পরিবারে ছড়িয়েছে সংক্রমণ।

গল্পটি খুব মনে ধরেছে অনেকের। এ রকম তো হতেই পারে। টিভিতে দেখাচ্ছে, “বিশেষজ্ঞ” নীরব বা সরব সম্মতি দিয়েছেন। তাহলে বোধহয় ফ্রিজই যত নষ্টের গোড়া। অতএব গোঁদের উপর বিষফোঁড়া, ফ্রিজে হাত দেওয়ার সময়ও মাস্ক, গ্লাভস, চশমা, হাত ধোওয়ার বাড়াবাড়ি।

ফ্রিজে কি সত্যি ভাইরাস থাকে?

ভাইরাস বিশেষজ্ঞ অমিতাভ নন্দী জানিয়েছেন, “থাকে, যদি সে ফ্রিজের তাপমাত্রা -১৯০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড হয়। এটা একমাত্র সম্ভব গবেষণাগারে। ভাইরাস নিয়ে গবেষণা হয় যে সমস্ত ল্যাবরেটরিতে সেখানে তরল নাইট্রোজেনের সাহায্যে ফ্রিজের তাপমাত্রা কমিয়ে ভাইরাসের নমুনা জমিয়ে রাখা হয়। যাকে বলে ক্রায়ো প্রিজারভেশন। তারপর কাজের সময় তাকে বাইরে বার করে ধাপে ধাপে তাপমাত্রা ৩৭ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডে নিয়ে এলে ভাইরাস জ্যান্ত হয়ে ওঠে। অসাবধান হলে তখন সংক্রমণের আশঙ্কা থাকে। কিন্তু সাধারণ ফ্রিজে সে ভয় নেই। কারণ ঘরোয়া ফ্রিজে ফ্রিজারের তাপমাত্রা থাকে ০ থেকে -২/-৩ ডিগ্রির মতো। ফ্রিজের সাধারণ অংশে ৪-৮/১০ ডিগ্রি, কখনও আরও বেশি। এই তাপমাত্রায় করোনাভাইরাস কতক্ষণ জীবিত থাকে তা নিয়ে কোনও গবেষণা হয়েছে বলে শুনিনি। যদি তর্কের খাতিরে ধরে নিই বেঁচে থাকে, সে ছড়ায় কীভাবে? ফ্রিজ খোলামাত্র লাফ দিয়ে নাকে-মুখে ঢুকে যায়? ক’টা ঢোকে? কোন পথে ঢোকে? ফ্রিজের তাপমাত্রা থেকে ঝট করে শরীরের তাপমাত্রায় এসে কতক্ষণ বেঁচে থাকে, কীভাবে বংশবৃদ্ধি করে? যাঁরা এসব রটাচ্ছেন, তাঁরা কি ফ্রিজে ভাইরাস ঢোকার, বেঁচে থাকার, তারপর মানুষের শরীরে ঢুকে তাঁকে সংক্রমিত করার পুরো পদ্ধতিটা নথিবদ্ধ করেছেন? তা যদি না করে থাকেন, এ রকম অবৈজ্ঞানিক ও ভুল তথ্য রটিয়ে মানুষকে ভয় দেখানো অপরাধের সামিল।

আনাজ-মাছমাংস থেকে সংক্রমণ হতে পারে?

“পারে। যদি আপনি হাত দেওয়ার ঠিক আগে কোনও করোনা রোগী সেটা ঘাঁটাঘাটি করে থাকেন, আর আপনি সে সবে হাত দেওয়ার ঠিক পরেই নিজের নাকে-চোখে-মুখে হাত দেন। ” জানালেন ডা নন্দী। “তার পরেও প্রশ্ন ক’টা ভাইরাস ঢুকল? দু-চারটে ঢুকলে তো সংক্রমণ হবে না। প্রচুর ঢুকতে হবে। তবু সাবধানতা হিসেবে বাজার আনার পর বেশ কিছুক্ষণ বাইরে রেখে, ভাল করে ধুয়ে ফ্রিজে তোলার নিয়ম। তারপর হাত সাবান দিয়ে ধুয়ে নিতে হবে অবশ্যই। কিন্তু মাস্ক বা চশমা পরার কোনও প্রয়োজন নেই। ভাইরাস তো লাফ দিয়ে নাকে-মুখে ঢোকে না। ”

বাজার আনার পর বেশ কিছুক্ষণ বাইরে রেখে, ভাল করে ধুয়ে ফ্রিজে তোলার নিয়ম। ছবি: শাটারস্টক

“ঘরোয়া ফ্রিজের যা তাপমাত্রা তাতে ভাইরাস খুব বেশিক্ষণ বাঁচে না! কাজেই আনাজপাতি বাইরে থাকলেও যা, ভিতরে থাকলেও তাই। তাও আবার একদিন কি দু-দিন আগে ভাল করে ধুয়ে সে সব ফ্রিজে ঢুকিয়েছেন। সাবধানতা হিসেবে কাটা-ধোওয়ার পর হাত সাবান দিয়ে ধুচ্ছেন। আর কিছু করার দরকার নেই। ” জানালেন ডা নন্দী।

তাহলে কেন এত দোটানা?

“আসলে ভাইরাস ছড়ানোর ব্যাপারটা নিয়ে ধন্দ আছে বলেই মানুষ টেনশন করছেন। ” বললেন ডা নন্দী। “একটা ব্যাপার ভাল করে বুঝুন, কোভিড হয়েছে এমন মানুষ হাঁচলে-কাশলে তাঁর লালা-থুতুর সঙ্গে যে ভাইরাস বেরোয় তাতে ভাইরাস জীবিত থাকে। খুব কম দূরত্ব থেকে তা সরাসরি নাকে-মুখে ঢুকলে সংক্রমণ হতে পারে। কিন্তু কোনও জীবিত শরীর ছাড়া তো ভাইরাস বেশিক্ষণ বাঁচতে পারে না। কাজেই সেই লালা-থুতুর কণা যেখানে পড়ে সেখানে ভাইরাস খানিকক্ষণই কেবল বেঁচে থাকে। এবার সেই খানিকক্ষণের মধ্যে সেখানে হাত দিলেন, হাতে ভাইরাস লাগল, তারপর সে হাত নাকে-মুখে লাগালেন, তাতে পর্যাপ্ত পরিমাণে ভাইরাস শরীরে ঢুকল, এই এত কিছু সব ঠিকঠাক হলে তবে সংক্রমণ হবে। আর আমরা যে বলছি, এখানে ভাইরাস এতক্ষণ বাঁচে, সেখানে ততক্ষণ বাঁচে, এর বেশিরভাগটাই তো গবেষণাগারে যে সব প্রমাণ পেয়েছি, তার ভিত্তিতে। গবেষণাগারে যা ঘটে, জীবনেও একেবারে ঠিক তাই তাই ঘটবে, এমন কিন্তু নয়!”
গবেষণাগার ও সংক্রমণ

ভাইরাস জড় বস্তুর উপর কতক্ষণ বেঁচে থাকে তা দেখার জন্য বিজ্ঞানীরা কালচার মিডিয়াম থেকে এক ফোঁটা ভাইরাস সে সব বস্তুর উপর ফেলে নির্দিষ্ট সময় অন্তর সেখান থেকে নমুনা নিয়ে পরীক্ষা করে দেখেছেন কোথায় কতক্ষণ বেঁচে থাকে সে। তার ভিত্তিতে মোটামুটি বলা যায় কোভিড আক্রান্তের হাঁচি-কাশির ড্রপলেট কোথায় পড়লে কতক্ষণ ভাইরাস বেঁচে থাকবে। কিন্ত সেখানে হাত দিয়ে নাকে-মুখে হাত দিলে সংক্রমণ হবেই তা নিশ্চিত করে বলা যায় না। কারণ কালচার মিডিয়ামে ভাইরাস থাকে লক্ষ কোটিতে। সেই তুলনায় ড্রপলেটে থাকে অতি নগণ্য সংখ্যায়। তার মধ্যে সবকটাই যে যতটুকু সময় বেঁচে থাকার কথা, বেঁচে থাকবে, তা নয়। যে কটা বেঁচে থাকবে, তা হাতে লাগার কতক্ষণ পরে নাকে-মুখে-চোখে লাগছে সেটাও বিচার্য বিষয়। অর্থাৎ কোথাও গোটা কয়েক ভাইরাস পড়ে রয়েছে মানেই আপনার সংক্রমণ হবে, এমন নয় ব্যাপারটা। সে শাক-সব্জি-ফল বা মাছ-মাংসে থাকলেও নয়। ফ্রিজে থাকলেও নয়। এটা পুরোপুরি নির্ভর করে কত সময় পরে সেখানে হাত দেওয়া হল ও ক’টা ভাইরাস ঢুকল তার উপর। ডা. নন্দীর কথায়, “ভাইরাস সংক্রমণ হওয়া ও সেখান থেকে রোগ হওয়া এক জটিল প্রক্রিয়া। করোনা ভাইরাসের ক্ষেত্রে ব্যাপারটা আরও জটিল। কারণ এই ভাইরাসের বিশেষ কিছুই আমরা জানি না এখনও। যে সব কথা ভাবছি এবং বলছি, তার অনেকটাই এই জাতীয় অন্য ভাইরাসের ক্ষেত্রে ঘটেছিল বলে এ ক্ষেত্রেও ঘটতে পারে তা অনুমান করে বলছি। তার সবটাই যে ধ্রুব সত্য হবে এমন নয়। কাজেই অহেতুক ভয় পেয়ে জীবন দুর্বিষহ করে কোনও লাভ নেই। ”

শেষ কথা

ডা. নন্দীর মতে, যখন রোগ এ রকম মারাত্মক হারে বাড়ছে, তখন দরকার এক বিরাট সমন্বয়ের। কেউ নিজের খুশিমতো মিডিয়াতে কিছু বলে দেবেন আর তা নিয়ে মানুষ প্যানিক করে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে আরও বেশি করে রোগে পড়বেন, তা হতে দেওয়া যায় না। এর আবার উলটো দিকও আছে। এসব শুনে কিছু মানুষ ভাবতে শুরু করছেন, এত নিয়ম মেনে চলার চেয়ে রোগ হওয়া ভাল। ফলে তাঁরা ‘কেয়ারলেস’ হয়ে রোগ ছড়াচ্ছেন। অর্থাৎ কাজের কাজ তো কিছু হচ্ছেই না, উলটে অতিমারির প্রকোপ বাড়ছে। কাজেই এই সব অপপ্রচার কড়া হাতে দমন করা দরকার।

Please Share This Post in Your Social Media

এই ক্যাটাগরীর আরও সংবাদ
© All rights reserved by Shera TV
Developed BY: Shera Digital 360