লাইফস্টাইল ডেস্ক:
পরিস্থিতি যা, তাতে ক্লান্তির কোনও দোষ নেই। একে তো ঘরের যাবতীয় কাজ, অফিসের কাজের চাপ, তার সঙ্গে নিরন্তর অনিশ্চয়তার সঙ্গে বসবাস আর চূড়ান্ত একঘেয়েমি। এইসবই মিলেমিশে ক্লান্ত করে তুলছে আমাদের অনেককে। তা সত্ত্বেও চিন্তা বাড়ছে এই ভেবে যে, এ কি শুধু দিনগত পাপক্ষয়ের ক্লান্তি, না অজান্তেই হানা দিয়েছে কোভিড। কোভিডেও তো ক্লান্তির শেষ থাকে না বলে জানাচ্ছেন চিকিৎসকরা।
চিকিৎসক সব্যসাচী সেন জানিয়েছেন, “ক্লান্ত লাগলেই কোভিড ভেবে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। কারণ এর মূলে যদি কোভিডের হাত থাকে, অন্য কিছু না কিছু উপসর্গ সঙ্গে থাকবেই। হালকা জ্বর, হতে পারে ৯৯-১০০ ডিগ্রির মধ্যে, বা একটু গলাব্যথা বা শুকনো কাশি বা অন্য কিছু। এ সব কিছুই নেই, শুধু দিনের পর দিন ক্লান্তি, তা হলে কোভিড হওয়ার আশঙ্কা নেই। ভাল করে বিশ্রাম নিন। পুষ্টিকর খাবার খান ও নিয়ম মেনে চলুন, ক্লান্তি কমে যাবে। আর তাতেও না কমলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।”
কখন কী খেলে, খাওয়ার কোন নিয়ম মেনে চললে ক্লান্তি কমবে তা জানালেন পুষ্টিবিদ বিজয়া আগরওয়াল।
সঠিক খাবার খান, সঠিক সময়ে খান
• সময়মতো খাওয়াদাওয়া করুন। বহু ক্ষণ খালিপেটে থাকলে রক্তে শর্করার মাত্রা কমে গিয়ে ক্লান্ত লাগতে পারে।
• আধ ঘণ্টা অন্তর কয়েক চুমুক করে জল খান। সারাদিনে যেন আড়াই-তিন লিটার অন্তত খাওয়া হয়। ঠিকঠাক জল না খেলে জলশূন্যতার জন্য দেখা দিতে পারে ক্লান্তি।
• কফি-কোলা জাতীয় পানীয়-মদ বেশি খেলে জলশূন্যতার আশঙ্কা বাড়ে। ক্লান্ত শরীরে মুড সুইং হতে থাকে ঘন ঘন। আবার বিকেলের দিলে চা-কফি বেশি খেলে ঘুম কমে যায়। সে কারণেও ক্লান্ত লাগতে পারে। কাজেই দিনে ২-৩ কাপের বেশি চা-কফি খাবেন না। ঘুমের সমস্যা থাকলে বিকেলের পর থেকে আর নয়, বিশেষ করে কফি।
• দিনের প্রতিটি খাবারের সঙ্গে পর্যাপ্ত প্রোটিন খান। ডিম, দুধ, দই, মাছ, মাংসের পাশাপাশি উদ্ভিজ্জ প্রোটিনও খান সমানতালে। যেমন ডাল, ছোলা, রাজমা, বিভিন্ন ধরনের বাদাম, বিনস ইত্যাদি। এতে পুষ্টি যেমন হবে, ক্লান্তি কমবে। অল্প খাবারে পেট ভরবে ও বেশি ক্ষণ পেট ভরা থাকবে বলে ওজনও বাড়তে পারবে না। উদ্ভিজ্জ প্রোটিন বেশি খেলে অবশ্য পেটের সমস্যা হতে পারে। অম্বল-বদহজম হলেও কিন্তু ক্লান্তি বাড়বে।
• ক্লান্তির একটা বড় কারণ হল রক্তাল্পতা। সে বিপদ ঠেকাতে আয়রনসমৃদ্ধ খাবার খান। সবরকম আমিষ খাবারেই আয়রন থাকে। থাকে সবুজ শাকসব্জিতে। ভাতের পাতে লেবু তথা ভিটামিন সি খেলে সেই আয়রন ভাল ভাবে শোষিত হয়। খাওয়ার পর ফ্রুট স্যালাড খেলেও একই কাজ হবে। চা-কফি-কোলা আয়রন শোষণে বাধা দেয়। কাজেই খাওয়ার এক-দেড় ঘণ্টার মধ্যে এ সব খাবেন না।
• ম্যাগনেশিয়ামের ঘাটতি হলে ক্লান্তি বাড়তে পারে। এ বিপদ এড়াতে কলা, বাদাম, ছোলা, সবুজ শাকসব্জি খান ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে।
• মিষ্টি বেশি খেলে এক ধাক্কায় অনেকটা শর্করা রক্তে চলে আসে বলে সাময়িক ভাবে তরতাজা লাগে। কিন্তু আখেরে তাতে ক্ষতিই হয়। বেশি শর্করা জাতীয় খাবার খেলে তাকে প্রশমিত করতে শরীরে ক্ষরিত হয় বেশি ইনসুলিন। তার হাত ধরে শরীর নানান রোগের আকর হয়ে ওঠে। তার পাশাপাশি খানিক ক্ষণের মধ্যে শর্করার মাত্রা একদম কমে যায়, যাকে বলে ‘সুগার ক্র্যাশ’। তখন খুব ক্লান্ত লাগে। কাজেই চিনি, মিষ্টি যত কম খাওয়া যায়, তত ভাল। রোগ প্রতিরোধক্ষমতারও উন্নতি হয় তাতে।
• ভিটামিন সি-সমৃদ্ধ ফল খান পর্যাপ্ত। যে কোনও ফলেই তা আছে। বেশি আছে আমলকি, সবেদা, পেয়ারা, লেবু ও যে কোনও টক ফলে।
নিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন করুন
অনিয়মিত, অগোছালো জীবনে ক্লান্তি বেশি আসে। কাজেই নিয়ম মেনে চলার অভ্যাস তৈরি করুন। সকালে নির্দিষ্ট সময় ঘুম থেকে উঠুন। হালকা ব্যায়াম করুন। ব্যায়ামে শরীরে ভাল লাগার হরমোন ক্ষরিত হয়। ক্লান্তি কমাতে যার বিরাট ভূমিকা। স্ট্রেস কমিয়ে মন ভাল রাখতেও সে অদ্বিতীয়। তার পাশাপাশি চেষ্টা করুন ভাল করে ঘুমাতে। ঘুমের ক্ষতি হয় যা যা করলে, সে সব থেকে দূরে থাকুন।
সেরা নিউজ/আকিব