বিনোদন ডেস্ক:
ক্রমশই জটিল থেকে জটিলতর হচ্ছে রহস্য। উঠে আসছে এমন কিছু তথ্য, যা এর আগে কাক-পক্ষীতেও টের পায়নি। সুশান্তের মৃত্যুর এক মাস পর শোকের বোঝা যে মুহূর্তে হাল্কা হচ্ছি্ল, ঠিক তখনই একটি এফআইআর যেন সব হিসেব-নিকেশ বদলে দিয়েছে রাতারাতি।
এফআইআরে মূল অভিযুক্ত সুশান্তের প্রেমিকা রিয়া চক্রবর্তী। এফআই করেছেন অভিনেতার বাবা কেকে সিংহ। মুম্বই পুলিশের উপর আস্থা রাখতে না পেরেই কেকে সিংহ দ্বারস্থ হয়েছেন বিহার পুলিশের, জানা যাচ্ছে এমনটাই। কেন আস্থা হারালেন তিনি? কিছু কি আড়াল করার আপ্রাণ চেষ্টা চলছিল এত দিন ধরে? কী সেটি? রিয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগই বা কী? সুশান্তের প্রাক্তন প্রেমিকা অঙ্কিতা কী এমন লিখলেন যে, সুশান্তের দিদি পূর্ণ সমর্থন জানালেন তাতে?
গত ১৪ জুন বান্দ্রায় নিজের ফ্ল্যাটে সুশান্তের নিথর ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার করে মুম্বই পুলিশ। হতবাক হয়ে যায় গোটা দেশ। হাসিখুশি ছেলেটা আত্মহত্যা করল? কেন? এর মধ্যেই জানা যায়, গোটা লকডাউনটাই নাকি সুশান্তের সঙ্গে একই ফ্ল্যাটে ছিলেন রিয়া। অথচ তাঁরা যে সম্পর্কে রয়েছেন, সে কথা এর আগে বারে বারে অস্বীকার করেছেন রিয়া! নেটাগরিকরা মনকে বোঝালেন, অনেক সময়েই সম্পর্ক গোপন করেন সেলেবরা। সে জন্যই হয়তো রিয়াও চেপে গিয়েছেন একত্রবাসের কথা।
এরই মধ্যে জানা যায়, সুশান্তের মৃত্যুর ঠিক কয়েক দিন আগেই নাকি সুশান্তের সঙ্গে ঝগড়া করে বাড়ি ছাড়েন রিয়া। আগুনে ঘি পড়ে, যখন রিয়ার সঙ্গে পরিচালক মহেশ ভট্টর কিছু ছবি হঠাৎ করেই সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়ে যায়। সেই সব ছবিতে কখনও রিয়ার বুকে মহেশের মাথা আবার কখনও বা রিয়া মহেশকে লিখেছেন ‘মাই বুঢডা’।
শুরু হয়ে যায় রিয়ার সঙ্গে মহেশের সম্পর্কের কাটাছেঁড়া। রিয়া মহেশকে নিজের ‘মেন্টর’ বলে পরিচয় দিয়ে এসেছেন এর আগে। মহেশের হাত ধরেই তাঁর হিন্দি ছবিতে পা রাখা। রিয়া-মহেশকে জড়িয়ে যখন চারিদিকে কুৎসিত ইঙ্গিতের প্লাবন, ঠিক তখনই মহেশ-রিয়া ঘনিষ্ঠ লেখিকা সুহৃতা দাস ফেসবুকে লেখেন, “মহেশ স্যর বলেছিলেন রিয়াকে সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে আসতে। সুশান্তের অবসাদ দেখেই তিনি বুঝতে পেরেছিলে্ সুশান্ত যেন আর এক পরভিন ববি।”
আর চুপ থাকেননি নেটাগরিকরা। তাঁরা মোটামুটি নিজেরাই একটা অঙ্ক কষে নেন। মহেশ, রিয়া-সুশান্তের মাঝে নাক গলাচ্ছিলেন। সেই কারণেই তাঁদের ব্রেক আপ। আর সেই কারণেই সুশান্তের আত্মহত্যা। এরই মধ্যে সুশান্তের মৃত্যুর পর দিন অভিনেত্রী কঙ্গনা রানাউতের বলিউডের স্বজনপোষণ নিয়ে এক জ্বালাময়ী ভাষণ সুশান্ত মৃত্যু রহস্যে এক নতুন তত্ত্ব নিয়ে আসে, যার নাম ‘নেপোটিজম’।
কেউ পক্ষে বলেন, কেউ বিপক্ষে। মহেশ-রিয়া ছাড়াও নেটাগরিকদের চোখে ভিলেন হয়ে যান আলিয়া-সোনম সহ বহু স্টারকিড, এবং কর্ণ জোহর। সোশ্যাল মিডিয়ায় এতটাই ব্যাকল্যাশের সম্মুখীন হতে হয় তাঁদের যে, এক এক করে টুইটার ছাড়েন তাঁরা। ও দিকে তত দিনে শুরু হয়ে গিয়েছে সুশান্ত মৃত্যুরহস্যের অনুসন্ধান। মহারাষ্ট্র সরকার আশ্বাস দিয়েছেন, বিচার মিলবেই।
থানায় বয়ান রেকর্ড করতে প্রথম দিনেই ডাক পড়ে সুশান্তের বাবা কেকে সিংহর। মুম্বই পুলিশ জানান, রিয়ার বিরুদ্ধে বা কারও নাম করেই কিছু বলেননি তিনি। ডাকা হয় রিয়াকেও। রিয়া যান। জানান, বাড়িতে এক বন্ধুর থাকা নিয়েই নাকি সুশান্তের সঙ্গে ঝামেলা হয়েছিল তাঁর। জানা যায়, মৃত্যুর আগের দিন গভীর রাতে সুশান্ত তাঁকে ফোন করেন। কিন্তু রিয়া সেই ফোন ধরেননি। কেন? রিয়াই জানেন।
ইতিমধ্যেই সুশান্তের ময়না তদন্তের রিপোর্ট এবং ভিসেরা রিপোর্ট এলে তাতে সাফ বলে দেওয়া হয়– হত্যা নয়, আত্মহত্যা। সমান তালে চলতে থাকে জেরা পর্বও। আদিত্য চোপড়া, সঞ্জয় লীলা ভন্সালী থেকে শুরু করে মহেশ ভট্ট– বলিউডের নামজাদাদের ডাকা হয় থানায়। মহেশ জোর গলায় জানান, রিয়াকে তিনি বলেননি সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে আসতে। সঞ্জয় বলেন, আদিত্য চোপড়ার প্রযোজনা সংস্থার সঙ্গে কাজ করবেন বলেই তাঁর ছবি করতে চাননি সুশান্ত। ও দিকে আদিত্য বলেন, সঞ্জয় যে সুশান্তের সঙ্গে কাজ করতে চান, এমনটা তাঁকে জানানইনি পরিচালক।
দোষারোপ, পাল্টা অভিযোগ– এ সবের মাঝেই সুশান্ত ভক্তরা সোশ্যাল মিডিয়ায় চিৎকার করে ওঠেন সিবিআই তদন্তের দাবিতে। কঙ্গনা, শেখরের মতো সেলেবরাও গলা মেলান তাতে। এই গোটা সময়েই রিয়া চুপ ছিলেন। ১৪ জুলাই, সুশান্তের মৃত্যুর ঠিক এক মাস পর, সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি পোস্ট করেন রিয়া।
সেই পোস্টে সুশান্তকে প্রথম বার নিজের প্রেমিক হিসেবে পরিচয় দিয়ে আবেগঘন কথায় ভরিয়ে তোলেন ইনস্টাগ্রামের দেয়াল। ‘সুশ’-এর সঙ্গে তাঁর যে আজীবনের সম্পর্ক, তা পরিষ্কার ভাষায় লেখেন তিনি। কিন্তু ট্রোলিং তাতে থামেনি। রিয়া পেতে থাকেন ধর্ষণের হুমকিও। সোশ্যাল মিডিয়ায় সেই সব চ্যাট শেয়ার করে সাইবার সেলে অভিযোগ জানানোর কথা ঘোষণা করেন তিনি।
পাশাপাশি রিয়া অমিত শাহকে অনুরোধ করেন, তাঁর বয়ফ্রেন্ড কেন আত্মহত্যা করলেন সে জন্য প্রয়োজনে সিবিআই তদন্ত হোক। সুশান্তের শেষ ছবি ‘দিল বেচারা’ মুক্তির দিনেও সুশান্তের জন্য শুভেচ্ছা জানান তিনি। রিয়ার উপর নেটাগরিকদের ক্ষোভ-রাগ যখন কিছুটা হলেও প্রশমিত হচ্ছিল, ঠিক সেই সময়েই কেকে সিংহের ওই দু’পাতার অভিযোগপত্রটি নতুন করে বিতর্ক জাগিয়ে তুলেছে সারা দেশ জুড়ে। টুইটার খুললেই এখন ট্রেন্ডিং লিস্টে পয়লা নম্বরে #সুশান্ত রিয়া টুইট।
সেরা নিউজ/আকিব