অনলাইন ডেস্ক:
করোনাভাইরাস মহামারি ঠেকাতে জারি করা বিভিন্ন বিধিনিষেধের আলোকে সীমিত পরিসরে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ঈদুল আজহার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়েছে। সামাজিক দূরত্ব বজায় ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে মসজিদে বা বাসাতেই ঈদের নামাজ পড়েছেন মুসলমানরা। তবে আয়ারল্যান্ডের ডাবলিনে বসবাসরত মুসলিমরা রোদ ঝলমলে সকালে ঈদের নামাজ পড়েছেন স্থানীয় একটি স্টেডিয়ামে। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা এখবর জানিয়েছে।
স্টেডিয়ামে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে অবস্থান নেন মুসল্লিরা। অনেকের সঙ্গে তাদের সন্তানেরা ছিল। শিশুরা জায়নামাজের আশেপাশে ঘোরাঘুরি করছিল। আবার কেউ কেউ আয়ারল্যান্ডের ক্ষুদে পতাকা উড়াচ্ছিল।
অনেক মুসল্লির জন্য শুক্রবারের আয়োজনটি ছিল নিজেদের দ্বৈত পরিচয় তুলে ধরার। একই সঙ্গে তারা মুসলিম ও আইরিশ হতে পেরে গর্বিত।
ব্যবস্থাপনা কমিটির কারেন কিরওয়ান বলেন, মুসলিম বিশ্বের হৃদস্পন্দন হলো কাবা। আর ক্রোক পার্ক আয়ারল্যান্ডে আইরিশদের হৃদস্পন্দন।
আইরিশদের মনোজগতে ক্রোক পার্ক শুধুই একটি স্টেডিয়াম নয়। ঐতিহাসিক টিম ক্যারে বলেন, ক্রোক পার্কটি জাতীয়তাবাদী, সাংস্কৃতিক ও ক্রীড়া সংস্থার দৈহিক অভিব্যক্তি। ইতিহাসে সঙ্গেও তা জড়িয়ে আছে।
স্টেডিয়ামের কয়েকটি স্ট্যান্ডের নামকরণ করা হয়েছে ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্ব বা বিদ্রোহীদের নামকরণে। যেমন- ১৯১৬ সালের অভ্যুত্থানে ধ্বংসস্তূপের স্মৃতিবিজড়িত হিল ১৬ স্ট্যান্ড। ওই ব্যর্থ বিদ্রোহে আইরিশদের স্বাধীনতার সংগ্রাম পুনরায় জাগরিত হয়।
স্টেডিয়াম প্রাঙ্গণটি আয়ারল্যান্ডের স্বাধীনতা যুদ্ধের সবচেয়ে ভয়াবহ হত্যাযজ্ঞেরও স্থান। একটি খেলা চলাকালে ব্লাডি সানডে হত্যাযজ্ঞে ১৪ জনকে গুলি করে হত্যা করে পুলিশ। স্বাধীনতার পরও স্টেডিয়ামটিকে নতুন ক্যাথলিক জাতির প্রতিফলন হিসেবে দেখা হতো। ক্যারে বলেন, ১৯৭০ এর দশক পর্যন্ত প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ খেলার আগে বিশপ বল নিক্ষেপ করতেন।
শুক্রবার ঈদের নামাজ আয়োজনের ফলে ক্যাথলিক ধর্মাবলম্বীদের একাংশ বিক্ষোভ করেছেন। বিক্ষোভকারীদের অনেকেই ইসলামবিরোধী প্রতীকসহ হাজির হয়েছিলেন। পাশাপাশি স্টেডিয়ামের বাইরে বর্ণবাদবিরোধী পাল্টা বিক্ষোভও হয়েছে। ঈদের জামাতে উপস্থিত হওয়া মুসল্লিদের সঙ্গে কথা বলেছেন আয়ারল্যান্ডে ক্যাথলিক ধর্মাবলম্বীদের সর্বোচ্চ নেতা ডিয়ারমুইড মার্টিন। এসময় তার সঙ্গে অ্যাংলিকান ও ইহুদিদের প্রতিনিধিও। তারা ঈদ উদযাপনে সমর্থন জানিয়েছেন।
স্টেডিয়ামের বাইরে অল্প সংখ্যক বিক্ষোভকারীদের উপস্থিতি ছাড়াও ঈদের নামাজ আয়োজন বন্ধের জন্য একটি অনলাইন পিটিশনে ২৪ হাজার স্বাক্ষর পড়ে। একটি অভিবাসীবিরোধী অ্যাক্টিভিস্টদের সংগঠন এই পিটিশন তৈরি করে। এতে ঈদের জামাত আয়োজনকে খ্রিস্টান সংস্কৃতির উপর আঘাত হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
ঈদের জামাত আয়োজনের বিষয়ে প্রথম ঘোষণার পর স্থানীয় সংবাদমাধ্যমে একটি ভুল খবর প্রকাশিত হয়। এতে বলা হয়েছিল, কোরবানির অংশ হিসেবে স্টেডিয়ামে পশু জবাই হবে। তবে দ্রুতই এই দাবি খারিজ হয়ে যায়।
আয়ারল্যান্ডের ২০১৬ সালের আদমশুমারি অনুসারে, ওই বছর দেশটিতে ৬৩ হাজার মুসলিম বাস করতেন। ১৯৯১ সালে এই সংখ্যা ছিল ৪ হাজারের কম। এখন ধারণা করা হয় এই সংখ্যা এক লাখের বেশি হতে পারে।
সেরা নিউজ/আকিব