নিজস্ব প্রতিবেদক:
উত্তর ও মধ্যাঞ্চলে ৬৩ হাজারের বেশি মানুষের ঈদ কেটেছে আশ্রয়কেন্দ্রে। সারা দেশে মুসলিম সম্প্রদায় যখন পবিত্র ঈদুল আজহা উদযাপন করছিল, সে মুহূর্তে ৩৩টি জেলার অন্তত ৫৫ লাখ মানুষ পানিবন্দি। ঈদ উদযাপনে নয়, তারা ছিলেন বন্যার পানির সঙ্গে টিকে থাকার লড়াইয়ে।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত শনিবার বন্যার পানিতে বন্দি ছিলেন ১১ লাখ ১৪ হাজার ৫০৮টি পরিবারের অন্তত ৫৫ লাখ মানুষ। এ পর্যন্ত পানিতে ডুবে ৪৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। যদিও মৃত্যুর সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের উপসচিব (জাতীয় দুর্যোগ সাড়াদান সমন্বয় কেন্দ্র) কাজী তাসমীন আরা আজমিরী জানান, বন্যাদুর্গত এলাকায় জরুরি সহায়তা অব্যাহত রয়েছে। এ পর্যন্ত ১৪ হাজার ৪১০ টন চাল, বিভিন্ন খাতে প্রায় সাড়ে সাত কোটি টাকা, দেড় লাখ প্যাকেট শুকনা খাবার এবং ঢেউটিন বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। বিপুল পরিমাণ জরুরি সহায়তা মজুদ রয়েছে।
প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, এক হাজার ৫৩৩টি আশ্রয়কেন্দ্রে ৬৩ হাজার ৪০৯ জন অবস্থান করছেন। ৭৮ হাজারের বেশি গবাদিপশুরও ঠাঁই হয়েছে এসব কেন্দ্রে। মাঠ পর্যায়ে কাজ করছে ৩৯৯টি মেডিকেল টিম।
ঈদের দিন বন্যাউপদ্রুত জেলার তালিকায় যুক্ত হয়েছে গোপালগঞ্জ ও পাবনা। এ নিয়ে ৩৩টি জেলা বন্যাকবলিত হলো। এর আগে ৩১টি জেলা হলো- লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, নীলফামারী, রংপুর, সুনামগঞ্জ, সিরাজগঞ্জ, বগুড়া, জামালপুর, সিলেট, টাঙ্গাইল, রাজবাড়ী, মাদারীপুর, মানিকগঞ্জ, ফরিদপুর, নেত্রকোনা, নওগাঁ, শরীয়তপুর, ঢাকা, মুন্সিগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, চাঁদপুর, নোয়াখালী, লক্ষীপুর, নাটোর, হবিগঞ্জ, ময়মনসিংহ, রাজশাহী, মৌলভিবাজার এবং গাজীপুর।
এদিকে, দেশের প্রায় সব অঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। নামতে শুরু করেছে নদনদীর পানি। বিশেষ করে উত্তরাঞ্চরে ব্রহ্মপুত্র, ধরলা এবং মধ্যাঞ্চলের যমুনা ও ধলেশ্বরীর পানি নিচের দিকে প্রবাহের ধারা অব্যাহত রয়েছে। ঢাকার আশপাশের নদনদীর পানিও কিছুটা কমেছে।
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র বলেছে, আগামী ২৪ ঘণ্টায় মুন্সিগঞ্জ, ফরিদপুর, মাদারীপুর, চাঁদপুর, রাজবাড়ী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, শরিয়তপুর এবং ঢাকা জেলায় বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে। কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, বগুড়া, জামালপুর, নাটোর, সিরাজগঞ্জ, টাঙ্গাইল, মানিকগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ জেলা এবং ঢাকা সিটি করপোরেশনের নিম্নাঞ্চলে পরিস্থিতি স্থিতিশীল থাকবে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের পর্যবেক্ষণে নদনদীগুলোর ১০১টি পয়েন্টের মধ্যে ৩৪টিতে বৃদ্ধি পেয়েছে, কমেছে ৬৬টি পয়েন্টে। ২৭টি পয়েন্টে নদনদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে বইছে। বিভিন্ন জেলায় বন্যা পরিস্থিতি উন্নতির দিকে হলেও নদনদীর পানি এখনও বিপদসীমার ওপর দিয়ে বইছে। বিশেষ করে ধলেশ্বরীতে ৮৭ সেন্টিমিটার, কালীগঙ্গায় ৮৪ সেন্টিমিটার, আত্রাইয়ে ৮১ সেন্টিমিটার, পদ্মায় ৮০ সেন্টিমিটার এবং যমুনার পানি বিপদসীমার ৬১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে যাচ্ছে।
সেরা নিউজ/আকিব