নিজস্ব প্রতিবেদক:
করোনকালে মালয়েশিয়ায় প্রবাসী কর্মীদের সঙ্গে বৈষম্যের কথা জানিয়ে আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম আল-জাজিরায় সাক্ষাৎকার দেওয়ায় গ্রেপ্তার বাংলাদেশি তরুণ রায়হান কবির মুক্তি পেয়েছেন। প্রায় এক মাস মালয়েশিয়ার পুলিশ হেফাজতে থাকার পর শনিবার মধ্যরাতে তিনি দেশে ফিরছেন।
ব্র্যাক অভিবাসন কর্মসূচির প্রধান শরিফুল হাসান জানিয়েছেন, শুক্রবার স্থানীয় সময় রাত নয়টার দিকে মালয়েশিয়ার অভিবাসন কর্তৃপক্ষ রায়হানকে বিমানবন্দরে পাঠায়। কুয়ালালামপুর বিমানবন্দর থেকে মালয়েশিয়ান এয়ারলাইন্সের এমএইচ-১৯৬ ফ্লাইটে তার ঢাকায় আসার কথা। বাংলাদেশ সময় রাত ১টায় রায়হান দেশে পৌঁছাবেন।
নারায়নগঞ্জের বন্দর এলাকার বাসিন্দা রায়হান কবির। তার বাবা শাহ আলম ছেলের দেশে ফেরার খবর নিশ্চিত করেছেন। তিনি শুক্রবার রাত সাড়ে আটটার দিকে জানান, বিস্তারিত জানেন না। ছেলে ছাড়া পেয়ে দেশে ফিরছে, এতেই তিনি খুশি। কখন, কীভাবে আসছে, তা নিয়ে ভাবছেন না। রায়হানের মুক্তির দাবিতে সোচ্চার হওয়া বিভিন্ন সংগঠন ও সংবাদ মাধ্যমকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন তার বাবা।
করোনাকালে মালয়েশিয়া সরকার ‘মুভমেন্ট কন্ট্রোল অর্ডার’ (এমসিও) জারি করে। গত ৩ জুলাই আল-জাজিরায় প্রচারিত ‘লকড আপ ইন মালয়েশিয়াস লকডাউন’ তথ্যচিত্রে বলা হয়, এ আদেশের ফলে অভিবাসী কর্মীরা বৈষম্যের শিকার হয়েছেন। এতে রায়হান কবিরের সাক্ষাৎকার প্রচারিত হয়। তিনি অভিবাসীদের ওপর নিপীড়নের তথ্য তুলে ধরেন। তার এ বক্তব্যে মালয় জাতীয়তাবাদীরা ক্ষুব্ধ হয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে রায়হান ‘বুলিং’র শিকার হন। তবে নিরপেক্ষ বিশ্লেষকরা বলেছেন, রায়হান সাক্ষাৎকারে মিথ্যা বলেননি। অভিবাসীদের প্রকৃত অবস্থা তুলে ধরেছেন। তিনি সত্য বলার মূল্য দিয়েছেন।
গত ৮ জুলাই ওয়ার্ক পারমিট বাতিলের পর ২৬ জুলাই গ্রেফতার করা হন রায়হান কবির। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা ছাড়াও মালয়েশিয়ার মানবাধিকার সংগঠনগুলোও তাকে গ্রেফতারের নিন্দা করে মুক্তির দাবি জানায়। ২৫ জুলাই রায়হানকে ১৪ দিনের এবং পরে আবার ১৩ দিনের রিমান্ডে নেয় মালয় পুলিশ। আল-জাজিরার কার্যালয়েও তল্লাশি চলে। গত বুধবার তার আইনজীবী সুমিথা শান্তিনি কিশনার বরাতে ‘ফ্রি মালয়েশিয়া টুডে’ জানিয়েছিল, রায়হানের বিরুদ্ধে আদালতে কোনো অভিযোগ দায়ের করেনি অভিবাসন কর্তৃপক্ষ।
রায়হানের আটক হওয়া ও মুক্তি নিয়ে কর্মকর্তাদের এক দফা সাক্ষাৎ ছাড়া মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশ হাইকমিশনের দৃশ্যমান কোনো তৎপরতা ছিল না। প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণণালয় সূত্র জানিয়েছে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়ানো ঘৃণার কারণে মালয় জনমত রায়হানের বিপক্ষে ছিল। তার মুক্তির জন্য সরকার প্রকাশ্য চাপ দিলে দেশটিতে থাকা লাখ লাখ বাংলাদেশি সমস্যার মুখে পড়তে পারত। এ কারণেই আগাগোড়াই রায়হান ইস্যুতে নিরব ছিল তারা। তবে অপ্রকাশ্য তৎপরতা চালানো হয়েছে।
সেরা নিউজ/আকিব