নিজস্ব প্রতিবেদক:
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার স্থায়ী মুক্তির জন্য সরকারের কাছে আবেদন করেছে তার পরিবার। মঙ্গলবার এ সংক্রান্ত আবেদনপত্র স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের কাছে হস্তান্তর করা হয়। আবেদনপত্রে খালেদা জিয়ার পরিবারের পক্ষে তার ভাই শামীম ইস্কান্দার স্বাক্ষর করেছেন।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, খালেদা জিয়ার পরিবারের পক্ষ থেকে তার মুক্তির জন্য সরকারের কাছে আবেদন করা হয়েছে। মতামতের জন্য আবেদনটি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। তাদের মতামত পেলে এ বিষয়ে পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে।
একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, আবেদনপত্রে বলা হয়, করোনাকালীন দুর্যোগে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসা নিশ্চিত করা যায়নি। পাশাপাশি তার সুচিকিৎসা নিশ্চিতের জন্য শারীরিক অসুস্থতায় কোনো পরীক্ষাও করা সম্ভব হয়নি। করোনাভাইরাসের কারণে স্থবির হয়ে যাওয়া অফিস-আদালতসহ গণপরিবহন ও ব্যবসা-বাণিজ্য প্রায় স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে ফিরে আসতে শুরু করেছে। এতে অসুস্থ খালেদা জিয়ার চিকিৎসা ও এ সংক্রান্ত শারীরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এতে বলা হয়, বয়স, শারীরিক অসুস্থতা ও মানবিক বিবেচনায় খালেদা জিয়ার স্থায়ী মুক্তির আবেদন করা হল।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে খালেদা জিয়ার ভাই শামীম ইস্কান্দারকে ফোন করা হলে তা বন্ধ পাওয়া যায়। খালেদা জিয়ার বোন সেলিমা ইসলাম বলেন, তিনিও শারীরিকভাবে অসুস্থ। আবেদনের বিষয়ে তিনি জানেন না।
দুই বছরের বেশি সময় কারাভোগের পর গত ২৫ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতাল থেকে মুক্তি পান বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। পরিবারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২৪ মার্চ খালেদা জিয়ার দণ্ডাদেশ ছয় মাসের জন্য স্থগিত করে শর্ত সাপেক্ষে তাকে মুক্তি দেয় সরকার। যার মেয়াদ শেষ হবে আগামী ২৪ সেপ্টেম্বরে। শর্ত ছিল- খালেদা জিয়া ঢাকায় নিজ বাসায় থেকে চিকিৎসা গ্রহণ করবেন এবং এই সময়ে দেশের বাইরে যেতে পারবেন না। সে সময় আইনমন্ত্রী আনিসুল হক গুলশানে নিজ বাসভবনে এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে বলেছিলেন, খালেদা জিয়ার ভাই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে একটি আবেদন করেন। এছাড়া আমার কাছে একটি আবেদন করেছিলেন যেন খালেদা জিয়াকে নির্বাহী আদেশে মুক্তি দেয়া হয় । এরপর খালেদা জিয়ার ভাই শামীম ইস্কান্দার, বোন সেলিমা ইসলাম, বোনের স্বামী রফিকুল ইসলাম প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে একই বিষয়ে সাক্ষাৎ করেছিলেন। সেখানেও এই আবেদনের ব্যাপারে তারা কথা বলেছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে বয়স বিবেচনায় মানবিক কারণে তাকে মুক্তি দেয়া হয় বলে তখন জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক খালেদা জিয়ার একজন আইনজীবী বলেন, এখন করোনা মহামারী চলছে। এটা আরও লম্বা সময় ধরে চলবে। সবচেয়ে বড় কথা, এখন পর্যন্ত খালেদা জিয়া মুক্তির কোনো শর্ত ভঙ্গ করেননি। ফলে তার ব্যাপারে সরকার কঠোর হবে না বলেই তার পরিবার মনে করছে।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার কথা বলে আসছেন। ঈদুল আজহার দিন তিনি সাংবাদিকদের বলেছেন, বিদেশে না যাওয়ার জন্য খালেদা জিয়াকে শর্ত দেয়া হয়েছে। কিন্তু তার বিদেশে চিকিৎসাই এখন বেশি প্রয়োজন। তিনি বলেন, খালেদা জিয়া বিদেশে চিকিৎসার সুযোগ পাবেন, সেই সুযোগের অপেক্ষায় আছি। তবে সূত্র জানায়, খালেদা জিয়ার ভাইয়ের আবেদনে বিদেশে নেয়া সংক্রান্ত কোনো বিষয় উল্লেখ করা হয়নি। তবে মুক্তির ক্ষেত্রে শর্ত শিথিলের কথা বলা আছে।
খালেদা জিয়ার এক চিকিৎসক জানান, ম্যাডামের শারীরিক অবস্থার কোনো উন্নতি নেই। হাত ও পায়ের ব্যথা একই রকম আছে। ডায়াবেটিস কোনো কোনো সময় ১১, আবার কোনো সময় ৯ থাকে। অন্যের সাহায্য ছাড়া চলতে পারেন না। মুক্তির দিন থেকেই খালেদা জিয়া আইসোলেশনে আছেন।
খালেদা জিয়া মুক্তির পর থেকে গুলশানে তার ভাড়া বাসা ‘ফিরোজায়’ আছেন। তিনি নিকট-আত্মীয় ছাড়া কোনো নেতাকর্মীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করছেন না। শুধু ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহা- এ দু’দিন রাতে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্যরা তার সঙ্গে দেখা করেন। এছাড়া ব্যক্তিগতভাবে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম একাধিবার খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন।
সেরা নিউজ/আকিব