জুয়ার টাকা জোগাড় করতেই ইউএনওর বাসায় চুরি, দেখে ফেলায় হামলা - Shera TV
  1. [email protected] : sheraint :
  2. [email protected] : theophil :
জুয়ার টাকা জোগাড় করতেই ইউএনওর বাসায় চুরি, দেখে ফেলায় হামলা - Shera TV
মঙ্গলবার, ০৭ অক্টোবর ২০২৫, ০১:৩০ অপরাহ্ন

জুয়ার টাকা জোগাড় করতেই ইউএনওর বাসায় চুরি, দেখে ফেলায় হামলা

সেরা টিভি
  • প্রকাশের সময় : শনিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২০

সেরা নিউজ ডেস্ক:

দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ওয়াহিদা খানমের বাসার আলমারিতে লাখ লাখ টাকা থাকার কথা জানতেন মালী রবিউল ইসলাম। তাই টাকা চুরি করতেই তিনি ইউএনওর বাসায় যান এবং উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ইউএনও ও তার বাবার ওপর হামলা করেন। তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

রবিউল জুয়ায় আসক্ত। কয়েক মাস আগে জুয়ার নেশায় ইউএনওর বাসা থেকে ১৬ হাজার টাকা চুরি করেন। এ টাকা ফেরত পাওয়ার পর ইউএনও ওয়াহিদা খানম তাকে হুমকি দিয়ে বলেন, ‘৬০ হাজার টাকা না দিলে তোমার নামে জেলা প্রশাসক (ডিসি) কার্যালয়ে অভিযোগ দেয়া হবে। তখন তোমার চাকরি থাকবে না।’ চাকরি রক্ষার জন্য ধার-দেনা করে রবিউল তাকে ৫০ হাজার টাকা দেন। কিন্তু তার আগেই ওয়াহিদা ডিসি অফিসে রবিউলের নামে অভিযোগ দেন। অভিযোগের তদন্ত শেষে ডিসি অফিস থেকে রবিউলকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।

সূত্র জানায়, চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত হওয়ার পর রবিউলের বেতন বেসিকের অর্ধেক হয়ে যায়। পাওনাদারদের চাপ ও জুয়া খেলতে না পারায় রবিউল মানসিক অস্বস্তিতে পড়ে যান। এরপর ইউএনওর বাসায় চুরির পরিকল্পনা করেন। ২ সেপ্টেম্বর রাতে ওয়াহিদা খানমের রুমে ঢুকে তিনি ওয়্যারড্রবের ওপর থাকা ভ্যানেটিব্যাগ থেকে ৫০ হাজার টাকা চুরি করেন।

এ সময় ইউএনওর তিন বছর বয়সী সন্তান কান্নাকাটি শুরু করলে ইউএনও জেগে যান। রবিউলকে তিনি চিনে ফেলেন। তখন ইউএনওর মাথায় হাতুড়ি দিয়ে তিনি আঘাত করেন। এতে ওয়াহিদা জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। এরপর ওয়াহিদার বাবা ওমর আলী শেখের কাছে গিয়ে আলমারির চাবি চান রবিউল। ওমর আলী চাবি দিতে রাজি না হলে তাকেও হাতুড়ি দিয়ে একের পর এক আঘাত করেন তিনি।

একপর্যায়ে ইউএনওর শিশুসন্তানকে মেরে ফেলার হুমকি দিলে ওমর আলী তাকে চাবির গোছা দেন। কিন্তু অনেকগুলো চাবি থাকায় রবিউল বুঝতে পারছিলেন না, আলমারির চাবি কোনটি। রবিউল অনেক চেষ্টা করেও আলমারি খুলতে না পেরে একপর্যায়ে চাবির রিং নিয়ে পালিয়ে যান। তাকে গ্রেফতারের পর তার দেখানো তথ্যমতে চাবির গোছা উদ্ধার করা হয়।

সূত্র জানায়, ১৬১ ধারায় রবিউল পুলিশের কাছে সব খুলে বলেছে। ঘটনার দিন রাত ২টার দিকে রবিউল প্রথম দফায় ইউএনওর বাসায় প্রবেশের চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। এরপর রাত সাড়ে ৩টার দিকে দ্বিতীয়বার চেষ্টায় সফল হন। ইউএনওর প্রতি ক্ষোভ এবং টাকা চুরি করতেই রবিউল এ হামলা করেছেন।

জবানবন্দি রেকর্ড করাতে তাকে বৃহস্পতিবার আদালতে হাজির করা হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত জবানবন্দি রেকর্ড না করে ফের রিমান্ডে নেয়া হয়। তবে দ্বিতীয় দফায় রিমান্ড শেষে রবিউল আদালতে জবানবন্দি দেবেন বলে সূত্র নিশ্চিত করেছে। এ ক্ষেত্রে জবানবন্দিতে চুরির উদ্দেশ্যের বিষয়টি উল্লেখ নাও থাকতে পারে।

রোববার নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট শাহানুর রহমান, ঘোড়াঘাট থানার ওসি আজিম উদ্দিন, পরিদর্শক (তদন্ত) মমিনুল ইসলাম ও মামলার বাদী ওয়াহিদা খানমের ভাই শেখ ফরিদ উদ্দিনসহ সংশ্লিষ্টরা ইউএনওর বাসার আলমারি খুলে ৪০ লাখ টাকা, পাঁচ হাজার মার্কিন ডলার, স্বর্ণালংকার, ব্যাংকের চেক, জমির রসিদ ও দলিলপত্র পান। এগুলো জব্দ না দেখিয়ে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে মামলার বাদী শেখ ফরিদ উদ্দিনের হাতে তুলে দেয়া হয়। আলমারিতে প্রাপ্ত ৪০ লাখ টাকার সবই এক হাজার টাকার নোট এবং ৪০টি বান্ডিল ছিল বলে জানা গেছে।

পুলিশের রংপুর রেঞ্জের ডিআইজি দেবদাস ভট্টাচার্য বলেন, ইউএনওর ওপর হামলার ঘটনায় র‌্যাব তিনজনকে গ্রেফতার করেছিল। আমরা দু’জনকে গ্রেফতার করেছি। এই পাঁচজনের মধ্যে এখন পর্যন্ত রবিউলের সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পাওয়া গেছে। বাকি চারজনের কোনো সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়নি। তাই আমরা রবিউলের জবানবন্দি নেয়ার চেষ্টা করছি। তার জবানবন্দি পাওয়ার পর এ বিষয়ে বিস্তারিত বলা যাবে।

তিনি আরও জানান, তদন্তের স্বার্থে যেসব আলামত জব্দ করা দরকার, সেগুলো জব্দ করেছি। আলমারিতে কী ছিল না-ছিল, তা আমাদের তদন্তের বিষয় না। তাই আলমারি থেকে পাওয়া কোনো জিনিস জব্দ করা হয়নি।

সূত্র জানায়, ওয়াহিদা খানম ঘোড়াঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হলেও সহকারী কমিশনারের (ভূমি) অতিরিক্ত দায়িত্বে ছিলেন। জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে কয়েকজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট (সহকারী কমিশনার, ভূমি পদমর্যাদার) রয়েছেন। তাদের মধ্য থেকে একাধিকবার ঘোড়াঘাটের সহকারী কমিশনার (ভূমি) পদে পদায়নের উদ্যোগ নেয়া হলেও ইউএনও তা ঠেকিয়ে দেন বলে পুলিশের গোয়েন্দা প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।

২ সেপ্টেম্বর রাতে ইউএনও ওয়াহিদা খানমের সরকারি বাসায় হামলার ঘটনা ঘটে। পরদিন সকালে আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এ ঘটনা দেশজুড়ে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে। র‌্যাব-পুলিশের অভিযানে এ পর্যন্ত পাঁচজনকে গ্রেফতার করা হয়। তারা হলেন : আসাদুল ইসলাম (বহিষ্কৃত যুবলীগ নেতা), নজরুল ইসলাম (রংমিস্ত্রি), সান্টু কুমার দাস (স্থানীয়), নৈশপ্রহরী নাজিম হোসেন পলাশ ও মালী রবিউল ইসলাম। তাদের মধ্যে আসাদুল, নজরুল ও সান্টুকে সাত দিনের রিমান্ড শেষে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

১২ সেপ্টেম্বর রবিউলকে গ্রেফতারের পর ছয় দিনের রিমান্ড শেষে বৃহস্পতিবার ফের তিন দিনের রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ। গ্রেফতারের পর র‌্যাবের কাছে আসাদুল প্রাথমিকভাবে ঘটনার দায় স্বীকার করেছেন। চুরির জন্য বাসায় গিয়েছিলেন বলে র‌্যাবকে জানিয়েছেন। চুরির জন্য হামলা-এ বিষয়টি মেনে নিতে পারেনি প্রশাসন বিভাগের কর্মকর্তারা। র‌্যাবের ওই দাবির বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলনও করা হয়।

 

সেরা নিউজ/আকিব

Please Share This Post in Your Social Media

এই ক্যাটাগরীর আরও সংবাদ
© All rights reserved by Shera TV
Developed BY: Shera Digital 360