পাঁচ দিন বন্ধ থাকার পর আসছে ভারতের পেঁয়াজ - Shera TV
  1. [email protected] : sheraint :
  2. [email protected] : theophil :
পাঁচ দিন বন্ধ থাকার পর আসছে ভারতের পেঁয়াজ - Shera TV
সোমবার, ২৮ জুলাই ২০২৫, ০৪:০৬ অপরাহ্ন

পাঁচ দিন বন্ধ থাকার পর আসছে ভারতের পেঁয়াজ

সেরা টিভি
  • প্রকাশের সময় : রবিবার, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২০

স্টাফ রিপোর্টার:
ভারতে আটকে থাকা পেঁয়াজ অবশেষে দেশে আসতে শুরু করেছে। পাঁচ দিন বন্ধ থাকার পর শনিবার দেশের তিনটি স্থলবন্দর দিয়ে প্রায় ১২০০ টন পেঁয়াজ দেশে এসেছে। তবে এই পেঁয়াজের মানভেদে ৩০ থেকে ৫০ শতাংশ নষ্ট হয়েছে বলে জানান আমদানিকারকরা।

এদিকে ভারতীয় পেঁয়াজ দেশে আসার খবরে রাজধানীসহ দেশের বাজারে পণ্যটির দাম কমেছে। শনিবার পাইকারি আড়তে পেঁয়াজের কেজিতে ৫ টাকা কমেছে। আগেও পাইকারিতে কিছুটা দাম কমেছিল। খুচরা বাজারেও শনিবার পেঁয়াজের দাম কেজিতে ১০ টাকা পর্যন্ত কমেছে।

সাতক্ষীরার ভোমরা, চাঁপাইনবাবগঞ্জের সোনামসজিদ এবং দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দর দিয়ে পেঁয়াজ আসছে। দেশে পর্যাপ্ত সরবরাহ নিশ্চিত হওয়ায় বাজারে কম দামে পেঁয়াজ বিক্রির পরামর্শ দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বাজার মনিটরিং টিম।

শনিবার রাজধানীর পাইকারি আড়ত শ্যামবাজারের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠকে এবং অন্যান্য বাজার তদারকিতে আমদানি করা পেঁয়াজ ৫০ টাকার কমে বিক্রির পরামর্শ দেয় কমিটি। ব্যবসায়ীরাও ওই দামে বিক্রিতে সম্মত হয়েছেন বলে জানান বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সংশ্নিষ্ট কর্মকর্তারা।

বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের সদস্য শাহ মো. আবু রায়হান আলবেরুনী বলেন, ভারতের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে আমদানি পর্যায়ে থাকা পেঁয়াজের মধ্যে মোট ২৫ হাজার টন বাংলাদেশে আসবে। এলসি নিষ্পত্তি হওয়ার পরে বন্দরে আটকে থাকা এবং এলসি নিষ্পত্তি না হওয়া সব ধরনের পেঁয়াজ আসবে। তবে ন্যূনতম রপ্তানি মূল্য বেঁধে দিয়ে ভারতের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার নিয়ে যে আলোচনা হয়েছে সে ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত দেয়নি নয়াদিল্লি।

তিনি বলেন, দেশি পেঁয়াজের পর্যাপ্ত সরবরাহ আছে। ভারতে আটকে থাকা পেঁয়াজও দেশে ঢুকছে। এই পেঁয়াজ মজুদ থাকা অবস্থাতেই টিসিবির মাধ্যমে বিভিন্ন দেশ থেকে এক লাখ টন পেঁয়াজ আনার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন। পাশাপাশি সিটি গ্রুপ, মেঘনা গ্রুপ, এস আলমসহ আমদানিকারকরা আরও এক লাখ টনের বেশি আমদানির জন্য এলসি খুলেছে। এসব পেঁয়াজ দেশে এলে নতুন মৌসুম পর্যন্ত বাজারে পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকবে। ফলে বাজারে স্বাভাবিক দামে পেঁয়াজ বেচাকেনা হবে।

আলবেরুনী আরও বলেন, পেঁয়াজের বাজার নিয়ন্ত্রণে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, ট্যারিফ কমিশনসহ সব সংস্থা কঠোর অবস্থানে রয়েছে। মন্ত্রণালয়ের মনিটরিং টিমের জোরদার তদারকি চলছে। এতে সিন্ডিকেট পিছু হটেছে।

শনিবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, পেঁয়াজের বেচাকেনা আগের চেয়ে কমেছে। এর মধ্যে আমদানি পেঁয়াজ দেশে আসছে। ফলে বাড়তি দাম ধরে রাখতে পারছেন না ব্যবসায়ীরা। পাইকারিতে পেঁয়াজের দাম কমায় খুচরা বাজারেও কমতে শুরু করেছে। এক দিনের ব্যবধানে খুচরা বাজারে দেশি ও আমদানি করা পেঁয়াজের দাম কেজিতে ১০ টাকা কমেছে। তবে মহল্লার দোকানে দামের হেরফের রয়েছে। খুচরায় ব্যবসায়ীরা দেশি পেঁয়াজ বিক্রি করছেন ৮০ থেকে ৯০ টাকা কেজিতে, যা আগের দিন ছিল ৯০ থেকে ১০০ টাকা। অপরদিকে ভারতের পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৭০ টাকায়, যা আগের দিন ছিল ৭০ থেকে ৮০ টাকা।

শ্যামবাজারে শনিবার ভালো মানের দেশি পেঁয়াজের কেজি ৭২ টাকা এবং দেশি ক্রস পেঁয়াজ ৬৫ টাকায় পাওয়া গেছে, যা আগের দিন ছিল যথাক্রমে ৭৭ টাকা ও ৭০ টাকা। আমদানি করা ভারতের পেঁয়াজ মানভেদে বিক্রি হয় ৫০ থেকে ৫৫ টাকা কেজি, যা আগে ছিল ৫৫ থেকে ৬০ টাকা।

শ্যামবাজারের পাইকারি ব্যবসায়ী রাকিব হোসেন বলেন, বন্দরের পেঁয়াজ বাজারে এলে দাম আরও কমবে। কারণ, ১০ দিন ট্রাকে আটকা থাকা পেঁয়াজের অনেক অংশ নষ্ট হয়েছে। ওই পেঁয়াজ দ্রুত বাজারে ছাড়তে হবে। ওই পেঁয়াজের কেজি পাইকারিতে ৩০ থেকে ৪০ টাকায় নামতে পারে। তবে শেষদিকে এলসি করা আমদানি পর্যায়ে থাকা ভালো পেঁয়াজ বাজারে ৪০ টাকায় বিক্রি হতে পারে। ভারতীয় পেঁয়াজ এলে বাজার আগের দামে ফিরতে পারে।

তিনি বলেন, ভারতের পাশাপাশি মিয়ানমারসহ অন্যান্য দেশ থেকেও পেঁয়াজ আসছে। এতে ১৫ থেকে ২০ দিনের মধ্যে সংকট কেটে যাবে।

চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়, আমদানি পেঁয়াজের সরবরাহ বৃদ্ধিতে চট্টগ্রামের পাইকারি মোকাম খাতুনগঞ্জে আরও কমছে পেঁয়াজের দাম। তিন দিনে কেজিতে ৫ থেকে ১০ টাকা কমেছে। গত বৃহস্পতিবার প্রতি কেজি পেঁয়াজ ৬০ থেকে ৬৫ টাকায় বেচাকেনা হলেও শনিবার দাম ছিল ৫৫ থেকে ৬০ টাকা।

চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট উমর ফারুক বলেন, সরকারের কঠোর পদক্ষেপে পেঁয়াজের দাম কমতে শুরু করেছে। মিয়ানমার থেকেও পেঁয়াজ আসছে। সরবরাহ আগের তুলনায় কিছুটা বেড়েছে।

খাতুনগঞ্জের হামিদুল্লাহ মার্কেটের সাধারণ সম্পাদক মো. ইদ্রিস বলেন, রপ্তানি বন্ধের খবরে তিন দিন আগে বাড়তি পেঁয়াজ কিনতে খাতুনগঞ্জে ভিড় জমান অনেকে। এ কারণে দাম একটু বাড়তি ছিল। তবে খাতুনগঞ্জের পাইকারি আড়তে পেঁয়াজের দাম কমলেও বন্দর নগরীর খুচরা বাজারে প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৮০ টাকা। অলিগলির ভ্যান গাড়িতেও এই দামে বিক্রি হচ্ছে পেঁয়াজ।

গত সোমবার হঠাৎ করে বাংলাদেশে পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দেয় ভারত। এতে এক দিনেই পেঁয়াজের দাম দ্বিগুণ হয়ে যায়। আর পাইকারিতে ৫০ টাকা থেকে বেড়ে ৯০ টাকায় পৌঁছে। সংকটের আশঙ্কায় বাড়তি পেঁয়াজ কেনার হিড়িক পড়ে। তবে এই দাম পরদিনই আবার কমতে শুরু করে। শুক্রবার নিষেধাজ্ঞার আগে এলসি খোলা ২৫ হাজার টন পেঁয়াজ বাংলাদেশকে পাঠানোর অনুমতি দিয়েছে ভারত।

ভোমরা স্থলবন্দরের সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান নাসিম জানান, ভারতে আটকেপড়া ৩২টি ট্রাকে গড়ে ২৫ টন করে পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে। বাকি পেঁয়াজভর্তি ট্রাকগুলো পর্যায়ক্রমে আসবে। ভারত থেকে অনুমতি দেওয়া ২৫ হাজার টন পেঁয়াজের মধ্যে আট হাজার টন ভোমরা বন্দর দিয়ে আসবে। ট্রাকগুলো বন্দরে পাঁচ দিন আটকে থাকায় ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ পেঁয়াজ নষ্ট হয়েছে।

শিবগঞ্জ (চাঁপাইনবাবগঞ্জ) প্রতিনিধি জানান, ভারত থেকে ১৯৯ টন পেঁয়াজ দেশে এসেছে। শনিবার সকাল সোয়া ১১টার দিকে ভারতের মাহদীপুর স্থলবন্দরে আটকে থাকা চার শতাধিকের মধ্যে মাত্র আটটি ট্রাকে এ পেঁয়াজ সোনামসজিদ স্থলবন্দরে আসে।

সোনামসজিদ স্থলবন্দরের সাদিয়া এন্টারপ্রাইজে স্বত্বাধিকারী আজিজুল ইসলাম জানান, ভারত থেকে তাদের আটকে থাকা একটি ট্রাকও আসেনি। এ পেঁয়াজ কবে আসবে, তা অনিশ্চিত। এতে তার পেঁয়াজগুলো আরও বেশি নষ্ট হবে। সোনামসজিদ বন্দরের পানামা পোর্ট লিঙ্কের পোর্ট ম্যানেজার মাঈনুল ইসলাম জানান, অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পেঁয়াজের ট্রাকগুলো ছাড় করে দেশের বাজারে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হচ্ছে।

সাতক্ষীরা প্রতিনিধি জানান, ভোমরা স্থলবন্দর দিয়ে শনিবার দুপুর থেকে পেঁয়াজ আমদানি শুরু হয়েছে। ভারতের ঘোজাডাঙ্গা বন্দরে আটকে থাকা ২৫৫ ট্রাকের মধ্যে ৩২টি ভোমরা বন্দরে এসেছে বলে জানিয়েছেন ভোমরা সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের বন্দরবিষয়ক সম্পাদক আমির হামজা।

হিলি (দিনাজপুর) সংবাদদাতা জানান, শনিবার বিকেলে ভারত থেকে পেঁয়াজ নিয়ে ভারতীয় ট্রাকগুলো বন্দরের পানামা বন্দরে এসেছে। হিলি স্থলবন্দরের আমদানি-রপ্তানিকারক গ্রুপের সভাপতি হারুন উর রশিদ জানান, ১৪ সেপ্টেম্বরের আগে এলসি করা পেঁয়াজগুলো রপ্তানির অনুমতি দিয়েছে ভারত। এ কারণে ২০০ টন পেঁয়াজ শনিবার দেশে এসেছে। এ বন্দর দিয়ে আরও ১০ হাজার টন পেঁয়াজ পর্যায়ক্রমে আমদানি হবে। তবে পাঁচ দিন ধরে সীমান্তে আটকে থাকার কারণে কিছু পেঁয়াজ নষ্ট হয়েছে।

বেনাপোল প্রতিনিধি জানান, বেনাপোলের বিপরীতে ভারতের পেট্রাপোল বন্দরে পেঁয়াজের কোনো গাড়ি ছিল না। এ কারণে এ বন্দর দিয়ে বাংলাদেশে কোনো পেঁয়াজ আসেনি। তবে বনগাঁ অঞ্চলে আটকে থাকা পেঁয়াজে পচন ধরছে। অনেকে এসব পেঁয়াজ ভারতের খোলা বাজারে বিক্রি করছে বলে জানিয়েছেন পেট্রাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক কার্তিক চক্রবর্তী।

বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের কার্গো সম্পাদক রফিকুল ইসলাম রাকিব বলেন, আগে থেকেই পেট্রাপোলে পেঁয়াজের পাঁচটি ট্রাক ছিল। এ ছাড়া বনগাঁ অঞ্চলে ৩৯টি ট্রাক এবং ভারতের বিভিন্ন রাজ্য থেকে এসে রানাঘাট রেলস্টেশনে তিনটি ট্রেনে ১২৬টি ওয়াগন পেঁয়াজ নিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে আছে। শার্শার পেঁয়াজ আমদানিকারক রফিকুল ইসলাম রয়েল বলেন, ৭৪০ টন পেঁয়াজের এলসি খোলা আছে। এর মধ্যে গত সোমবার মাত্র এক ট্রাক পেঁয়াজ এসেছে।

সেরা নিউজ/আকিব

Please Share This Post in Your Social Media

এই ক্যাটাগরীর আরও সংবাদ
© All rights reserved by Shera TV
Developed BY: Shera Digital 360