লাইফস্টাইল ডেস্ক:
শুরু থেকেই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাসহ দেশে-বিদেশে বারবার বলা হয়েছে, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীরা শারীরিক বিভিন্ন জটিলতার পাশাপাশি মানসিকভাবেও আক্রান্ত হচ্ছে। অনেকে করোনায় আক্রান্ত না হয়েও কোয়ারেন্টিনে থেকে মানসিক সমস্যায় পড়ছে। আতঙ্ক থেকেও অনেকে মানসিক অসুস্থতায় ভুগছে। এ কারণে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পাশাপাশি বাংলাদেশেও করোনাজনিত মানসিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনায় গাইডলাইন তৈরি করা হয়েছে।
দেখা গেছে, করোনাজয়ীদের অনেকে শারীরিক অন্যান্য সমস্যা নিয়ে যেমন চিকিৎসকের শরণাপন্ন হচ্ছে, মানসিক সমস্যা নিয়েও হচ্ছে। আবার করোনা বিশেষায়িত হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোগীদের বিভিন্ন আচরণে মানসিক অসুস্থতার প্রকাশ ঘটছে। সম্প্রতি রাজধানীর একাধিক হাসপাতালে এ ধরনের রোগীর নেতিবাচক আচরণের শিকার হয়েছেন একাধিক চিকিৎসক ও নার্স। এই কারণে হাসপাতালে চিকিৎসাকর্মীরা খুব সতর্ক থাকছেন। কর্তৃপক্ষও দায়িত্ব পালনকারী চিকিৎসাকর্মীদের সতর্ক থাকতে পরামর্শ দিয়েছে। বিষয়টি নিয়ে সরকার গঠিত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সভায়ও গুরুত্বসহকারে আলোচনা হয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক ও জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সদস্যসচিব অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, ‘করোনাজনিত মানসিক সমস্যা নিয়ে বহুবার আলোচনা হয়েছে। সে অনুসারে বেশ কিছু পরামর্শও দেওয়া হয়েছে। এসংক্রান্ত আরো কাজ চলছে। এ ছাড়া করোনা মোকাবেলায় মানসিক স্বাস্থ্যবিষয়ক আলাদা একটি কমিটিও করা হয়েছে। ওই কমিটিতে দেশের বিশিষ্ট মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা রয়েছেন।’
জানতে চাইলে করোনা রোগীদের জন্য বিশেষায়িত চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জামিল আহম্মেদ বলেন, ‘গত এক সপ্তাহে আমাদের হাসপাতালে দুটি ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে একজন করোনা রোগী দায়িত্বরত চিকিৎসককে আক্রমণ করেন, আরেকজন রোগী আক্রমণ করেন একজন নার্সকে। ফলে ওই রোগীদের মানসিক চিকিৎসাও দেওয়া হচ্ছে।’
আরেকটি হাসপাতালের একজন চিকিৎসক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘মাঝে মাঝেই কোনো কোনো করোনা রোগীর মধ্যে হঠাৎ উত্তেজিত হয়ে পড়ার প্রবণতা লক্ষ করা যাচ্ছে। ওষুধ দেওয়ার পরও কারো কারো ঘুম হয় না। কেউ ওষুধ খেতে চান না, আবার কেউ একবার ওষুধ খেয়ে কিছুক্ষণ পরই ভুলে যান।’
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোরোগ বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. সালাহউদ্দিন কাউসার বলেন, ‘করোনার প্রভাবে বেশি সমস্যা হচ্ছে মেজাজ খিটখিটে হয়ে যাওয়া। এ ছাড়া অনেকে হঠাৎ উত্তেজিত হয়ে নিজের ওপর আর নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারেন না, কারো বা ঠিকভাবে ঘুম হয় না, আবার কেউ কিছু সময়ের জন্য সব কিছু ভুলে যান। আমরা ইতিমধ্যে মানসিক স্বাস্থ্যবিষয়ক কারিগরি কমিটিতে এ বিষয়ে জরুরি গবেষণার ব্যবস্থা করতে পরামর্শ দিয়েছি। কারণ গবেষণা না থাকায় এসব আচরণের বৈজ্ঞানিক ভিত্তি মিলছে না।’
বিভিন্ন হাসপাতাল ঘুরে করোনা রোগীর মানসিক সমস্যা পর্যবেক্ষণকারী একজন চিকিৎসক বলেন, ‘আমরা ছোট আকারে নিজেদের মতো করে পর্যবেক্ষণ থেকে করোনাজনিত বিভিন্ন মানসিক সমস্যার উপসর্গ দেখেছি। এগুলো নিয়ে ব্যাপক কাজ করা দরকার। সরকারের পক্ষ থেকে যে গাইডলাইন তৈরি করা হয়েছে, সেখানে অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আছে। এগুলো অনুসরণ করলে অনেক সুরক্ষা মিলবে।’
সেরা নিউজ/আকিব