সেরা নিউজ ডেস্ক:
নির্বাচনের বাকি আর মাত্র ৫ দিন। এরইমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে রেকর্ড ৭ কোটি মানুষ আগাম ভোট দিয়েছেন। ২০১৬ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে যত মার্কিনি ভোট দিয়েছিলেন এ সংখ্যা তার অর্ধেকেরও বেশি। যুক্তরাষ্ট্রের ইলেকশন প্রজেক্টের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, আগাম ভোটের এ ধারা অব্যাহত থাকলে তা গত এক শতাব্দির মধ্যে সর্বোচ্চ হতে পারে।
ব্লুমবার্গের খবরে জানানো হয়েছে, যারা ভোট দিতে এসেছিলেন তাদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ দেখা গেছে। একইসঙ্গে করোনাভাইরাস পরিস্থিতি মাথায় রেখে ভোটাররা যথাযথ নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা নিয়ে ভোট দিতে আসেন। গত মঙ্গলবার বিকাল পর্যন্ত যত মানুষ ভোট দিয়েছেন তা ২০১৬ সালে পড়া মোট ভোটের ৫০.৪ শতাংশ। ইলেকশন প্রজেক্ট যুক্তরাষ্ট্রের আগাম ভোটের হিসাব করে এবং তারাই এইসব পরিসংখ্যান প্রকাশ করেছে।
এতে জানানো হয়েছে, এবার যত আগাম ভোট পড়েছে তার মধ্যে ৪ কোটি ৬৩ লাখ ডাকযোগে ভোট দিয়েছেন। সরাসরি এসে ভোট দিয়েছেন ২ কোটি ৩১ লাখ মানুষ। অপরদিকে ২০১৬ সালে মোট আগাম ভোটই পড়েছিল ৪ কোটি ৭২ লাখ।
৩রা নভেম্বরের নির্বাচনে রেকর্ড সংখ্যক ডাকযোগে ভোট গণনা হবে বলে ধারণা করছেন বিশ্লেষকরা। কিছু কিছু আগাম ভোটকেন্দ্রে তুলনামূলক অধিক মাত্রায় ভোট পড়ছে। ব্লুমবার্গ জানিয়েছে, নির্বাচনের দিন জড়ো হয়ে ভোট দিতে হতে পারে চিন্তা করে করোনা সুরক্ষা নিশ্চিতে আগেই ভোট দিচ্ছেন মার্কিনিরা। এরমধ্যে টেক্সাসে যে আগাম ভোট পড়েছে তা ২০১৬ সালের মোট ভোটের প্রায় ৮৭ শতাংশ। মন্টানায় এই হার ৭৫.৪ শতাংশ এবং নর্থ ক্যারোলিনাতে ৭১.৫ শতাংশ। এ নিয়ে ফ্লোরিডা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ও ইলেকশন প্রজেক্টের প্রধান মাইকেল ম্যাকডনাল্ড বলেন, এটি একটি দারুণ বিষয়। মহামারির মধ্যে নির্বাচনী কর্মকর্তারা কীভাবে কার্যক্রম পরিচালনা করবেন তা নিয়ে ব্যাপক উদ্বেগ ছিল। তবে এখন মানুষ শুধু ভোট দিচ্ছেন তা না, তারা দীর্ঘ সময় ধরে ভোট দিয়েই যাচ্ছেন। তিনি আরো বলেন, এবার অন্তত ১৫ কোটি আগাম ভোট পড়তে পারে। এটি যদি হয় তাহলে তা হবে মোট ভোটের প্রায় ৬৫ শতাংশ। এই আগাম ভোটের হার হবে ১৯০৮ সালের পর সর্বোচ্চ।
ইলেকশন প্রজেক্ট জানিয়েছে, ডাকযোগে ভোট দেয়ায় ডেমোক্রেটরা অনেক বেশি এগিয়ে রয়েছে। রিপাবলিকানরা মূলত ডাকযোগে ভোট কম দিচ্ছেন। তারা ৩রা নভেম্বরই ভোট দেবেন সে অপেক্ষায় রয়েছেন। যদিও ঐতিহাসিকভাবে রিপাবলিকানরাই মার্কিন নির্বাচনে আগাম ভোট বেশি দিয়ে থাকে। তবে এবারে নির্বাচনের পূর্বে রিপাবলিকান প্রার্থী ডনাল্ড ট্রামপ একাধিকবার ডাকযোগে ভোট নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তিনি আশঙ্কা জানিয়ে বলেছেন, এবার ডাকযোগে ভোট ব্যবস্থাপনায় ব্যাপক কারচুপি হতে পারে। ফলে রিপাবলিকানরা এবার ডাকযোগে ভোট দিচ্ছেন কম- এমন ধারণা করা হচ্ছে। পরিসংখ্যান বলছে, আগাম ভোটে ডেমোক্রেটরা রিপাবলিকানদের থেকে দুইগুণ এগিয়ে রয়েছে। যদিও সামপ্রতিক সপ্তাহগুলোতে রিপাবলিকান শিবির ভোটের এই ব্যবধান কমিয়ে এনেছে। রেজিস্ট্রার করা ডেমোক্রেটরা এবার রিপাবলিকানদের থেকে অন্তত এক কোটি বেশি ‘এবসেন্টি ব্যালটের’ আবেদন করেছে।
এদিকে একদম শেষ সময়ে এসে সুইং স্টেটগুলোতে জোর প্রচারণা চালাচ্ছেন প্রধান দুই প্রার্থী ডনাল্ড ট্রামপ ও জো বাইডেন। এই প্রদেশগুলোকেই ধরা হচ্ছে আসল ব্যাটলগ্রাউন্ড। এখানেই নির্ধারিত হতে পারে কে হচ্ছেন যুক্তরাষ্ট্রের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট। জয় নিশ্চিত করতে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে রিপাবলিকান ও ডেমোক্রেট শিবির। রিপাবলিকান দলের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত জর্জিয়া। সেখানে প্রচারণা চালিয়েছেন ডেমোক্রেট প্রার্থী জো বাইডেন। তিনি সেখানে ট্রামপকে কনম্যান বলে আখ্যায়িত করেন। ট্রামপকে ঘায়েল করতে তিনি বেছে নিয়েছেন চলমান করোনাভাইরাস পরিস্থিতিকে। প্রতিটি বক্তৃতাতেই তিনি বিষয়টি নিয়ে আসছেন। বাইডেন বলেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প করোনাভাইরাস মোকাবিলার ক্ষেত্রে আত্মসমর্পণ করেছেন।
আবার এদিকে ২০১৬ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে নিজে যেসব সুইটং স্টেটে বিজয়ী হয়েছিলেন, সেসব রাজ্যে প্রচারণা চালাচ্ছেন ট্রাম্প। মিশিগান প্রদেশে গিয়ে তিনি ভোটারদের উদ্দেশ্যে বলেন, এবারের নির্বাচন ‘অর্থনৈতিকভাবে টিকে থাকার’ লড়াই। যদিও জাতীয় পর্যায়ের সব ধরনের জরিপেই পিছিয়ে আছেন ট্রাম্প। তবে অ্যারিজোনা, ফ্লোরিডা এবং নর্থ ক্যারোলাইনার মতো রাজ্যগুলোতে ব্যবধান কমে আসছে। সব মিলিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে নির্বাচন-পূর্ব অবস্থা জমে উঠেছে।
সেরা নিউজ/আকিব