সেরা নিউজ ডেস্ক:
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এ বছর শুরু করেছেন বেশ হালকা মেজাজে। ভোটের বাজারে তখন তাঁর রমরমা অবস্থা। ডেমোক্র্যাটরা তাঁকে অভিশংসনের চেষ্টা চালিয়ে শেষ পর্যন্ত নিজেরাই নাস্তানাবুদ হয়েছেন। অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি আকাশ ছুঁচ্ছে। প্রেসিডেন্ট হিসেবে তাঁর গ্রহণযোগ্যতার হার জানুয়ারি মাসে গত চার বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ অবস্থায় ছিল।
বিপরীতে ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী জো বাইডেন যেন শক্ত হয়ে দাঁড়ানোর মতোই জোর পাচ্ছিলেন না। দলীয় প্রাইমারির প্রচার চালাতে গিয়ে তাঁর হার্ট অ্যাটাক হয়। অনিশ্চিত হয়ে পড়ে তাঁর প্রেসিডেন্ট প্রার্থিতার ভবিষ্যৎ। খুব ছোটাছুটি করে প্রচার-প্রচারণায় অংশ নিতে পারবেন কি না তা নিয়ে অনিশ্চয়তার সৃষ্টি হয়। ফেব্রুয়ারি মাসে আরেকটু ফাঁপড়ের মধ্যে পড়েন তিনি। দলীয় পর্যায়ে প্রার্থীদের মধ্যে ভোটাভুটি শুরু হয় আইওয়া ককাশের মধ্য দিয়ে। সেখানে মুখ থুবড়ে পড়েন। শনৈঃ শনৈঃ এগোতে থাকেন দলের সমাজতন্ত্রী মুখ বলে পরিচিত বার্নি স্যান্ডার্স।
এর পরেই আসে মার্চ। তার আগ পর্যন্ত চীনের উহান শহরের নাম কজন আমেরিকান শুনেছিল তা নিয়ে জরিপ চালানো হলে অবাক হতে হবে। তবে মার্চের পর থেকে শুধু নাম শোনা নয়, উহান যেন বহু আমেরিকানের ঘরে গিয়ে বাসা বেঁধেছে। অন্তত করোনাভাইরাসকে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সেভাবেই চিহ্নিত করেছেন। শুধু নির্বাচনী প্রচারই নয়, তারও বহু আগে থেকে তিনি কভিড-১৯কে অভিহিত করেছেন ‘উহান ভাইরাস’ নামে। যে ভাইরাসের কারণে তাঁর আজ এই নাজেহাল অবস্থা। যুক্তরাষ্ট্রে গত আট মাসে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে দুই লাখ ৩০ হাজারের বেশি মানুষ। এই মহামারিতে আক্রান্তের সংখ্যা ৯০ লাখ ছাড়িয়েছে।
ট্রাম্প শুরু থেকেই এ মহামারির অস্তিত্ব মানতে নারাজ। দাবি করে আসছেন, পরিস্থিতি তাঁর নিয়ন্ত্রণে। ভাইরাস অদৃশ্য হলো বলে! যদিও এই ভাইরাস ট্রাম্প নিয়ন্ত্রণ করতে পারেননি। আর এই ভাইরাস সবচেয়ে বড় ছোবলটি দিয়েছে ট্রাম্পের পুননির্বাচনের প্রচেষ্টায়। করোনা আমেরিকানদের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া তৈরি করেছে। যার ছাপ পড়েছে সব নির্বাচনসংক্রান্ত জরিপে। ট্রাম্পের চেয়ে অনেকটাই এগিয়ে গেছেন বাইডেন। প্রেসিডেন্ট হিসেবে ট্রাম্পের কাজের অনুমোদন কমে গেছে। ভাইরাস নিয়ন্ত্রণে তিনি যে ব্যবস্থা নিয়েছেন তার সঙ্গে একমত নয় বেশির ভাগ আমেরিকান। লকডাউন ঘোষণা এবং তোলা নিয়েও মতবিরোধ দেখা গেছে। টেক্সাসের কথাই ধরা যাক। রিপাবলিকান নিয়ন্ত্রিত এই রাজ্য শুরুতে লকডাউন ঘোষণা করার পরও খুব দ্রুতই তা তুলে নেয়। অল্প দিনের মধ্যেই হাসপাতালগুলো ভরে যায় করোনা রোগীতে। রিপাবলিকান গভর্নর বাধ্য হন ফের লকডাউন দিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে। সেই টেক্সাসে এবার সর্বোচ্চ সংখ্যক আগাম ভোট পড়েছে। ৯০ লাখ ছাড়িয়ে। ২০১৬ সালের মোট ভোটের সংখ্যাকে ছাড়িয়ে গেছে। গতবার বহু ডেমোক্র্যাট ভোটার কেন্দ্রে যায়নি। বলা হচ্ছে, এবার তারা ভোটের দিনের জন্যও অপেক্ষা করেনি, তার আগেই ভোট দিয়েছে। ফলে ৩৮ ইলেকটরাল কলেজের ভোটসম্পন্ন টেক্সাস এবার ট্রাম্পের মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। এমন রাজ্য শুধু টেক্সাস নয়, আরো আছে।
কিছুটা শ্লথ, কিছুটা জবুথবু, ট্রাম্পের দৃষ্টিতে ‘স্লিপি বাইডেনও’ এবার প্রেসিডেন্টের পুনর্নির্বাচনের জন্য একটা ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়িয়েছেন। গতবারের ডেমোক্রেটিক প্রার্থী হিলারি ক্লিনটন নানা কারণেই খোদ দলীয় ভোটারদের কাছে খুব একটা গ্রহণযোগ্য ছিলেন না। তাঁর ব্যাপারে বহু ভোটারের মধ্যেই অনীহা দেখা গেছে। ভোট দেয়নি তারা। ডেমোক্র্যাটদের বাইডেনের বিষয়ে ওই অপ্রীতি বা ঘৃণা নেই। বাইডেন ক্যারিশমাটিক নন, কিন্তু স্থিতধী। দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক ক্যারিয়ার তাঁর। ব্যক্তিজীবনে তাঁর শোক যন্ত্রণাও ডেমোক্র্যাট ভোটারদের প্রভাবিত করে। সবচেয়ে বড় বিষয় তাঁর গ্রহণযোগ্যতা বা ভোটারদের মধ্যে অনুমোদনের হার অসাধারণ। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ট্রাম্পের অযোগ্যতা, বাগাঢ়ম্বড়, মিথ্যাচার—পরিস্থিতিটা এমন একটা আকার নিয়েছে যে বাইডেন খুব প্রচার না চালিয়েও শুধু ভুলভাল কথাবার্তা ও কাজকর্ম থেকে বিরত থাকলেই তাঁর সম্ভাবনা জিইয়ে থাকে। হয়েছেও তাই। বাইডেন শুধু টিকে নেই, প্রবলভাবে আছেন।
আর বাইডেনের এই প্রাবল্যকে রুখতেই দিন-রাত এক করে দোদুল্যমান রাজ্যগুলোতে চষে বেড়াচ্ছেন ট্রাম্প। দিনে গড়ে তিনটি, চারটি করে সমাবেশ করছেন তিনি। নির্বাচনের আর মাত্র দুই দিন বাকি। এর মধ্যে ১৩টি সমাবেশ করার পরিকল্পনা রয়েছে। মরিয়া হয়ে উঠেছেন তিনি নিজের রাজনৈতিক জীবনকে দীর্ঘায়িত করতে। তীব্র শীত বা উত্তাপ তার কোনো পরোয়া নেই। মাস্কের তো ধারই ধারেন না তিনি। একই সঙ্গে এমন ইঙ্গিতও দিয়েছেন, পরাজিত হয়ে ফলাফল মেনে নেবেন না তিনি। সে ক্ষেত্রে নির্বাচনের পর যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক সংকট দীর্ঘায়িত হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
পোস্টার প্ল্যাকার্ড ছেঁড়া বিকৃতি চুরির উৎসব
প্রতিপক্ষের পোস্টার ছেঁড়া, বিকৃত করা, চুরি করা গরিব দেশের নির্বাচনী সংস্কৃতি। রাতের অন্ধকারে ঘটে যাওয়া এসব কুকীর্তি দমনের জন্য প্রার্থীদের প্রস্তুতি থাকে, পাহারাদার থাকে। মজার বিষয় হচ্ছে, এবার যুক্তরাষ্ট্রের প্রচার-প্রচারণায়ও পোস্টার রাজনীতি দারুণভাবে স্থান করে নিয়েছে। কোটি কোটি পোস্টার ছেঁড়া হচ্ছে। কালি দিয়ে বিকৃত করা হচ্ছে। তবে যুক্তরাষ্ট্রে পোস্টার ছেঁড়া রুখতে প্রার্থীরা মোটেই তৎপর নন। তৎপর সমর্থকরা। পোস্টারের গায়ে ভ্যাসলিন, গ্লিটার লাগিয়ে তারা ধরার চেষ্টা করে, কে করছে এই নষ্টামি। কারণ ও দেশে পোস্টার লাগানো হয় মূলত সমর্থকদের বাড়িতেই। শুধু এটুকুই নয়, কাঁটাতার ঘিরে পোস্টারকে সুরক্ষিত করার চেষ্টাও চালায় তারা। সিসি ক্যামেরা তো রয়েছেই। পোস্টারে যেন কেউ হাত না লাগায় তার জন্য মধু, আঠা পোস্টারের ওপর লাগিয়ে রাখা হয়। তবে এ বছর কোনোভাবেই পোস্টার চুরি আটকানো যাচ্ছে না। এ কাজ যেমন করছে রিপাবলিকান সমর্থকরা, তেমনি থেমে নেই ডেমোক্র্যাটরাও। যেন পাল্লা দিয়ে পোস্টার নষ্টের উৎসব চলছে। বিষয়টি নিয়ে বহু সমর্থকই পুলিশের দারস্থ হয়েছে। কিন্তু কাজ হয়নি। পুলিশ অভিযোগ গ্রহণ করে, কিন্তু নির্বাচনের এই ভরা মৌসুমে পোস্টার ছেঁড়ার দায়ে কোনো দলের সমর্থককে আটক করে পক্ষপাতদুষ্টতার দায় নিতে চায় না তারা। সূত্র : এএফপি, বিবিসি।
সেরা নিউজ/আকিব