সেরা নিউজ ডেস্ক:
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রেসিডেন্ট হতে যাচ্ছেন জো বাইডেন। নতুন সরকারের পররাষ্ট্রনীতি কী হবে তা নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। বিশ্লেষকরা মনে করেন, কানাডা ও পশ্চিম ইউরোপের মিত্র দেশগুলোর সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক জোরালো হবে। এসব দেশের সঙ্গে সম্পর্ক উপেক্ষা করেছিলেন ট্রাম্প। মধ্যপ্রাচ্যের সঙ্গে সম্পর্কের ধরন তেমন পাল্টাবে না। চীনের সঙ্গে চলমান বৈরিতা থাকবেই। ভারতের সঙ্গে জোরালো সম্পর্কের ধারা অব্যাহত থাকবে। বহুপক্ষীয় ব্যবস্থায় ফিরে যেতে পারেন বাইডেন। ট্রাম্প প্যারিস জলবায়ু চুক্তি থেকে বেরিয়ে গিয়েছিলেন। ডব্লিউএইচও’র জন্য সহায়তাও বন্ধ করেছিলেন।
জানতে চাইলে সাবেক পররাষ্ট্র সচিব ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত শমশের মবিন চৌধুরী যুগান্তরকে বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রে নতুন সরকার এখনও ক্ষমতায় বসেনি। জানুয়ারির ২০ তারিখে তারা ক্ষমতায় বসবে। তারপর ক্যাবিনেট গঠন করবে। তখন বোঝা যাবে কী ধরনের ক্যাবিনেট গঠন করে। তার ওপর ভিত্তি করে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন সরকারের পররাষ্ট্রনীতি কী হবে তা সুনির্দিষ্ট করা যাবে। তবে মোটা দাগে বলা যায়, বাইডেন সরকার শুরুতেই কানাডা, ইউরোপসহ ন্যাটোভুক্ত দেশগুলোর সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের ঘাটতি মেটানোর চেষ্টা করবে। ট্রাম্পের আমলে ন্যাটোভুক্ত দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্কে ব্যবধান তৈরি হয়েছিল। ফলে ন্যাটোর সঙ্গে সম্পর্ক ঠিক করা হবে প্রধান অগ্রাধিকার।’
তিনি বলেন, মধ্যপ্রাচ্যে ট্রাম্প ইতোমধ্যে জেরুজালেমকে ইসরাইলের রাজধানী ঘোষণা করেছেন। এখন বাইডেনের পক্ষে সেখান থেকে ফিরে যাওয়া কঠিন হবে। কারণ যুক্তরাষ্ট্রে ইহুদি লবি শক্তিশালী। এশিয়ার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন সরকারের নীতি সম্পর্কে শমশের মবিন চৌধুরী বলেন, ‘এশিয়ায় চীনের ব্যাপারে শক্ত অবস্থান নতুন সরকারের সময়েও অব্যাহত থাকবে। তবে ট্রাম্পের মতো নয়। চীনকে প্রতিদ্বন্দ্বী ভাববে। তবে চীন সরাসরি যুক্তরাষ্ট্রের জন্য হুমকি নয়। কারণ চীনের অবস্থান যুক্তরাষ্ট্রের থেকে অনেক দূরে। তবে যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র জাপান, দক্ষিণ কোরিয়ার জন্য হুমকি। এ কারণে এ অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্র মহড়া বাড়াবে। ডেমোক্র্যাট সরকার ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক আরও দৃঢ় করবে। ট্রাম্প তার আমলে মোদির সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করেছিল। এবার ব্যক্তি নয়; দুই রাষ্ট্রের মধ্যে সম্পর্ক জোরালো হবে। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের ধরন কী হবে সেটা জানার জন্য আরেকটু অপেক্ষা করতে হবে। কারণ এশিয়ার সঙ্গে তাদের সম্পর্কের ধরন দেখার পর আমাদের জাতীয় স্বার্থ চিন্তা করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।’
সাবেক পররাষ্ট্র সচিব তৌহিদ হোসেন যুগান্তরকে বলেন, ‘ট্রান্স আটলান্টিক সম্পর্কে বড় পরিবর্তন হবে। ট্রাম্প ওই অঞ্চলে তাদের মিত্রদের অসন্তুষ্ট ও উপেক্ষা করেছিলেন। বাইডেনের চরিত্র অন্যরকম। তিনি সবার সঙ্গে সমঝোতা করে মিলেমিশে চলার মানুষ। তিনি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সক্রিয় হবেন বলে মনে হয়। তিনি নিজেই ঘোষণা করেছেন, ৭৭ দিন পর প্যারিস জলবায়ু চুক্তিতে যোগ দেবেন। আমার ধারণা, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাতেও (ডব্লিউএইচও) যোগ দেবেন। কারণ এসবে যোগ না দেয়ার মানে হল, বৈশ্বিক পর্যায় থেকে আমেরিকার নেতৃত্ব চলে যাওয়া।’
তিনি আরও বলেন, ‘চীনের ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান বৈরিতার অবসান নাও হতে পারে। কারণ চীনের সক্ষমতা দিন দিন বাড়তে থাকবে। লড়াইও বাড়তে থাকবে। ফলে বৈরিতার অবসান নাও হতে পারে। ভারতের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান জোরালো সম্পর্ক অব্যাহত থাকবে। কারণ ভারতও চীনের বিরোধী।’
বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়ে তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘বাংলাদেশের ক্ষেত্রে বিরাট কোনো উন্নতি কিংবা শত্রুতার সম্ভাবনা দেখি না। বাংলাদেশের ব্যাপারে মানব পাচার, মানবাধিকার এসব নিয়ে তারা প্রতিবেদন দিতে থাকবে। বাণিজ্য ক্ষেত্রে জিএসপি কিংবা নতুন কোনো সুবিধা দেবে না। ফলে সম্পর্ক একই থাকবে।’ সাবেক রাষ্ট্রদূত এম শফিউল্লাহ যুগান্তরকে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রে নতুন সরকার প্যারিস জলবায়ু চুক্তিতে ফিরে যাবে। ইরানের সঙ্গে ওবামার আমলে ফাইভ প্লাস ওয়ানের যে চুক্তি হয়েছিল; সেই চুক্তিও পুনরুজ্জীবিত হতে পারে। মহামারীতে যুক্তরাষ্ট্রে ব্যাপক আক্রান্ত ও প্রাণহানির পরিপ্রেক্ষিতে ডব্লিউএইচওতেও পুনরায় ফিরে যাবে। ফিলিস্তিনি ইস্যুতে ট্রাম্প ক্ষতি করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের দুই দলই দুই রাষ্ট্র সমাধান চায়। সেখানে ফিরে যায় কিনা সেটা দেখার বিষয়। ন্যাটোর সঙ্গে সম্পর্ক পুনরায় মেরামত করবে। তালেবানের সঙ্গে আলোচনা করে আফগানিস্তান থেকে সৈন্য প্রত্যাহারের ধারা চলমান থাকতে পারে। ট্রাম্পের ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজিতে থেকে যেতে পারেন বাইডেন। চীনের সঙ্গে বাণিজ্য যুদ্ধ কমতে পারে। ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার থাকতে পারে।
সেরা নিউজ/আকিব