সেরা নিউজ ডেস্ক:
টানটান উত্তেজনার নির্বাচনে জো বাইডেনের কাছে হেরে যাওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এখন কী করবেন, কোন পথে হাঁটবেন তা নিয়ে মানুষের মধ্যে আগ্রহের শেষ নেই। কারণ, তাৎক্ষণিকভাবে পরাজয় স্বীকার করার বিষয়ে কোনো কথা বলেননি ট্রাম্প। তার ঘনিষ্ঠজন এবং উপদেষ্টারা বলেছেন, খুব শিগগির হার মেনে নেওয়ার পরিকল্পনা নেই প্রেসিডেন্টের।
শনিবার যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যমগুলোতে বাইডেনের জয় ঘোষণার সময় ভার্জিনিয়ায় গলফ খেলছিলেন ট্রাম্প। যখন তিনি গলফ খেলতে বের হন, তখন হোয়াইট হাউসের সামনের এলাকা ছিল ফাঁকা। মাঠ থেকে ফিরে দেখেন হোয়াইট হাউস ঘিরে হাজার হাজার মানুষ। তারা বাইডেনের জয়ে উচ্ছ্বসিত। ট্রাম্পকে হোয়াইট হাউস ছাড়ার জন্য নানা স্লোগান দিতে শোনা যায়। অর্থাৎ পরাজয় স্বীকার না করলেও যুক্তরাষ্ট্রের মানুষ যে তাকে আর বেশি দিন সহ্য করবেন না, তা শনিবারই স্পষ্ট হয়ে গেছে।
নির্বাচনের ফল নিয়ে ট্রাম্প যে পানি ঘোলা করবেন, তা আগেই বোঝা গিয়েছিল। নির্বাচনের আগে থেকেই ডেমোক্র্যাটদের বিরুদ্ধে সম্ভাব্য ভোট জালিয়াতির অভিযোগ তুলে সেই পট প্রস্তুত করেছেন ট্রাম্প। বাইডেন জয়ী হওয়ার পর ট্রাম্প ও তার সমর্থকরা জোরালোভাবে জালিয়াতির অভিযোগ তুলেছেন। ফল প্রত্যাখ্যান করে অনেক শহরে ট্রাম্পের সশস্ত্র সমর্থকরা জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করেছেন।
পরাজিত হলে আগেই আদালতে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন ট্রাম্প। সুপ্রিম কোর্টের ওপর তার ভরসা অসীম। কারণ সর্বোচ্চ আদালতের ৯ বিচারপতির ৬ জনই রক্ষণশীল। তবে আদালতে গিয়ে ব্যর্থ হলে ক্ষমতা হস্তান্তর করা ছাড়া রিপাবলিকান এই প্রেসিডেন্টের সামনে আর কোনো উপায় থাকবে না। যদিও শনিবার বাইডেনের জয়ী হওয়ার খবর প্রকাশিত হওয়ার পরই এক বিবৃতিতে ট্রাম্প বলেছেন, ‘নির্বাচন শেষ হতে এখনও অনেক দেরি। কারণ কোনো রাজ্য থেকেই বাইডেন বিজয়ীর সনদ পাননি।’ যেসব রাজ্যে তাদের ব্যবধান খুবই কম সেসব রাজ্যে ভোট পুনর্গণনার জন্য আইনি পথে হাঁটার কথাও বলেছেন ট্রাম্প। সোমবার থেকে তার এ আইনি লড়াই শুরু হওয়ার কথা। নির্বাচনে অনিয়মের অভিযোগে জর্জিয়া, মিশিগান এবং নেভাদায় বেশ কয়েকটি মামলা করেছেন ট্রাম্পের আইনজীবীরা।
নিউইয়র্কের আবাসন ব্যবসায়ী ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ উপদেষ্টারাও জানেন, হোয়াইট হাউসকে বিদায় জানানো প্রেসিডেন্টের জন্য এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র। তবে আইনি লড়াইয়ের পথে তারা হাঁটবেনই। আদালতের রায়ে যদি কোনো পরিবর্তন না হয়, তবে হোয়াইট হাউস ছেড়ে বেরিয়ে যাবেন ট্রাম্প। তবে পরাজয় স্বীকার করবেন কিনা, তা এখনও পরিস্কার নয়। যদিও এই স্বীকার করা না করার বিষয়টি প্রথা, কোনো আইন নয়।
ধারণা করা হচ্ছে, ক্ষমতা হস্তান্তর সংক্রান্ত বেশ কিছু রেওয়াজ ভাঙতে পারেন ট্রাম্প। এরই মধ্যে কিছু রেওয়াজ তিনি ভেঙেছেন। পরাজিত প্রার্থী ফোন করে বিজয়ী প্রার্থীকে অভিনন্দন জানাবেন, এটি যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘদিনের রেওয়াজ। এবার ট্রাম্প ফোন করে বাইডেনকে অভিনন্দন জানাননি। যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘ গণতান্ত্রিক ঐতিহ্যে এটি কালো দাগ হয়ে থাকলেও ক্ষমতা হস্তান্তরে কোনো বাধা হবে না।
জারেড কুশনার ট্রাম্পের জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা। তার স্ত্রী ট্রাম্পের মেয়ে ইভানকা ট্রাম্প। তিনিও ট্রাম্পের উপদেষ্টা। প্রেসিডেন্টের জামাই ও উপদেষ্টা জারেড হার মেনে নিতে শ্বশুরকে বুঝিয়েছেন। তবে ক্ষমতা হস্তান্তরের ব্যাপারে শ্বশুরকে জামাই রাজি করাতে পেরেছেন কিনা তা জানা যায়নি।
হারের পরও ট্রাম্প ক্ষমতা ছাড়তে না চাওয়ায় তার দল রিপাবলিকান পার্টির অনেক নেতা বেশ চিন্তিত। তারা মনে করেন, দল থেকে ভবিষ্যতে যারা যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হবেন, তাদেরও ট্রাম্পের আচরণের কলঙ্ক বয়ে বেড়াতে হবে। এ ছাড়া প্রেসিডেন্টের রাজনৈতিক ক্যারিয়ারেও তা নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। ২০২৪ সালে ট্রাম্প ফের প্রেসিডেন্ট পদের জন্য লড়তে পারেন বলে জানিয়েছেন তারই এক সাবেক উপদেষ্টা। তবে কংগ্রেসের একজন রিপাবলিকান সদস্য জানিয়েছেন, ‘এমন আচরণ করতে থাকলে ২০২৪ সালে ফের নির্বাচন করার পথ ট্রাম্পের জন্য বন্ধ হয়ে যাবে।’ সূত্র :রয়টার্স ও সিএনএন।
সেরা নিউজ/আকিব