লাইফস্টাইল ডেস্ক:
রূপচর্চায় ফুলের ব্যবহার বহু বছরের পুরোনো। বিভিন্ন সময়ে নানাভাবে রূপচর্চায় ফুলের অবদানের কথা স্বীকার না করলেই নয়। চুলের যত্নে ফুলের ব্যবহারের উপকারিতা বলে শেষ করার মতো নয়…
দিনে শেষে সব ব্যস্ততা, শহরের জ্যাম, ধুলাবালুর দ্বারা চুল আক্রান্ত হওয়ার পরও আমরা সবাই চাই নরম, পরিস্কার, সুন্দর, সজীব, নীরোগ, ঝলমলে চুল। তবে তা পাওয়ার জন্য আমাদের চুলের নিয়মিত যত্ন নেওয়া খুব দরকার। তাই আজ আপনাদের জন্য রয়েছে চুলের সমস্যা সমাধানে ফুল ব্যবহারের ঘরোয়া কিছু উপায়।
চুলের সমস্যার সমাধান প্রাকৃতিক উপায়
সাধারণত প্রতিদিন ১০০টি চুল পড়া স্বাভাবিক। কিন্তু এর বেশি চুল পড়লে তা অবশ্যই চিন্তার কারণ। আর পাতলা চুল তো নারীদের জন্য দুঃস্বপ্নের মতো। তাই সেই দুঃস্বপ্নের দিন শেষ করতে ব্যবহার করতে পারেন ঘরে বসেই ফুলের থেরাপি।
গাঁদা
চুলের বিভিন্ন সমস্যার সমাধান রয়েছে গাঁদা ফুলে। গাঁদা ফুলের পাপড়ি তাজা ও শুকনো দু’ভাবেই ব্যবহার করা যায়। তাজা পাপড়ি ব্লেন্ডারে পেস্ট করে নিতে পারেন। এ ছাড়া সারাবছর ব্যবহারের জন্য গুঁড়া করে দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করতে পারেন। এ জন্য প্রথমে গাঁদা ফুলের পাপড়ির সাদা অংশ বাদ দিয়ে শুধু হলুদ অংশ সংগ্রহ করতে হবে। ধুয়ে পরিষ্কার করে পাপড়িগুলো বড় ট্রেতে ছড়িয়ে রোদে শুকিয়ে নিন। এরপর ব্লেন্ডারে গুঁড়া করে কাচের বয়ামে সংরক্ষণ করুন।
গোলাপ ফুলের ব্যবহার
এরপরই আসি সবার প্রিয় গোলাপকে নিয়ে। শুধু প্রেয়সীকে উপহার দেওয়া কিংবা গোলাপের নানাবিধ ব্যবহারই গোলাপের কাজ নয়। গোলাপের নারিশিং ও ময়েশ্চারাইজিং উপাদান চুলের জন্য স্বাস্থ্যকর। চুল হয় ঘন ও ঝলমলে। গোলাপজল খুশকি দূর করতে কার্যকর। পাশাপাশি মাথার ত্বকে যে কোনো রকম ফাঙ্গাল ইনফেকশনের চিকিৎসায় গোলাপজল ব্যবহার হয়। চুলে গোলাপজল ব্যবহারের পদ্ধতিও খুব সহজ।
চুল নরম ও উজ্জ্বল করতে গোলাপের হেয়ার প্যাক ব্যবহার করুন। এক কাপ কুসুম গরম পানিতে একটি তাজা গোলাপের পাপড়ি ভিজিয়ে রাখুন। এর সঙ্গে এক টেবিল চামচ মধু ও এক টেবিল চামচ বাদাম তেল মিশিয়ে ব্লেন্ড করুন। মাথার তালুতে ঘষে লাগান। আধা ঘণ্টা পর শ্যাম্পু করুন।
গোলাপের পাপড়ি শুকিয়ে গুঁড়া করে রাখুন। নারিকেল তেলের সঙ্গে মিশিয়ে হালকা গরম করে চুলে ও মাথার তালুতে লাগান। চুলের আগা ফাটা থাকলে সেখানে বেশি করে লাগান। আধা ঘণ্টা পর ধুয়ে চুলে শ্যাম্পু করে ফেলুন। আগা ফাটা দূর হবে আর চুল পড়াও কমে যাবে।
চুলের জন্য গোলাপের টোনার তৈরি করতে পারেন। মৌরি ও মেথি আধা কাপ করে নিয়ে দুই কাপ পানিতে জ্বাল দিয়ে এক কাপ পরিমাণ করে নিন।
এরপর ছেঁকে আধা কাপ গোলাপজল মিশিয়ে একটি স্প্রে বোতলে ভরে ফ্রিজে রাখুন। রাতে স্ক্রাপ ও চুলে ভালো করে স্প্রে করে নিন। চুল শুকিয়ে তারপর ঘুমাতে যান। এই টোনার চুল ও মাথার ত্বক ছত্রাকমুক্ত রাখবে।
জবা ফুলের ব্যবহার
চুলের যত্নে এই ফুলের উপকারিতা লিখে শেষ করা যাবে না। চুলের বিভিন্ন পণ্যে তাই এই ফুলের ব্যবহার বেশ লক্ষণীয়। চুলের খুশকি রোধ করা থেকে শুরু করে চুল বৃদ্ধিতে, নতুন চুল গজাতে এবং অকালে চুল পাকা রোধ করতে এই ফুলের জুড়ি নেই।
অনেক তেল এবং শ্যাম্পুতে জবা ফুলের নির্যাস ব্যবহার করা হয়। জবা ফুল চুল পড়া রোধ করে, নতুন চুল গজাতে এবং চুল সাদা হওয়া রোধ করে থাকে। একটি জবা ফুল বেটে পরিমাণ মতো নারিকেল তেলের সঙ্গে মিশিয়ে চুলে লাগান। এক ঘণ্টা রেখে চুল ধুয়ে ফেলুন। মুহূর্তের মধ্যেই চুল হয়ে উঠবে নরম, কোমল এবং সিল্ক্কি। চুলের যত্নে জবা জাদুকরী। চুলের দ্রুত বৃদ্ধিতে জবা ফুলের ব্যবহার দারুণ। এ জন্য প্রথমে ৮ থেকে ৯টি ফুল দুটি পাতাসহ নিয়ে ভালো করে ধুয়ে পানি ঝরিয়ে থেঁতলে নিন। এক কাপ নারিকেল তেলের সঙ্গে জবা ফুলের পেস্ট দিয়ে চুলায় জ্বাল দিন। ঠান্ডা হলে এই তেল চুল ও মাথার তালুতে ম্যাসাজ করুন। ৩০ মিনিট রেখে ধুয়ে নিলেই চলবে। কিংবা সারারাত রেখে দিয়ে পরদিন শ্যাম্পু করে নিলেও ভালো। এটি চুলকে দ্রুত বাড়তে সাহায্য করে। পাশাপাশি কোমল করে চুল।
খুশকি দূর করতে দারুণ কার্যকর এই ফুল। এজন্য এক টেবিল চামচ মেথিবীজ সারারাত ভিজিয়ে রাখুন। শুকনা জবাপাতা ও মেথিবীজ একসঙ্গে বেটে এর সঙ্গে টক দই মিশিয়ে প্যাক বানিয়ে মাথার তালুতে মোখে রাখতে হবে আধা ঘণ্টা।
জবাপাতা ও মেহেদি পাতা শুকিয়ে গুঁড়া করে তাতে লেবুর রস মিশিয়ে চুলে ব্যবহার করতে পারেন। এটিও খুশকি দূর করার পাশাপাশি চুলকে কন্ডিশনিং করতে সাহায্য করবে। চুলের গোড়া থেকে পুষ্টি জুগিয়ে চুলকে করে তুলবে উজ্জ্বল ও ঝলমলে।
পদ্ম
পদ্ম ফুলের পাপড়িতে আছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ‘সি’, ভিটামিন ‘বি’ কমপ্লেক্স, আরও বেশকিছু অত্যাবশ্যকীয় খনিজ পদার্থ। এটি তৈলাক্ত ত্বকের লোমকূপ বন্ধ হয়ে যাওয়া এবং ব্রণের সমস্যায় কার্যকর। পদ্ম ফুলের পাপড়ি পেস্ট করে অ্যালোভেরা জেল, একটি ডিম ও দুই টেবিল চামচ অলিভ অয়েল মিশিয়ে প্যাক বানিয়ে নিন। চুলের গোড়া থেকে আগা পর্যন্ত লাগিয়ে এক ঘণ্টা পর শ্যাম্পু করুন। পদ্ম থেকে তৈরি তেল চুল পড়া কমায়, অকালে চুল পেকে যাওয়া প্রতিরোধ করে। পদ্ম তেল তৈরির জন্য একমুঠো পদ্ম পাপড়ি ধুয়ে পানি ঝরিয়ে নিন। হাঁড়িতে এক কাপ নারিকেল তেল, এক কাপ অলিভ অয়েল, দুই টেবিল চামচ আমলা।