সেরা টেক ডেস্ক:
কমালা চলো, আমাদের দেরি হয়ে যাবে। আমার মা তার ধৈর্য্য হারাতে বসেছিলেন। এক মিনিট মাম্মি, আমি ফোন দিচ্ছি (আমার মাও আমাকে সব সময় মাম্মি বলে ডাকতেন)। আমরা আমাদের প্রধান নির্বাচনী কার্যালয়ের দিকে ছুটলাম। যেখানে ভিড় করেছে আমাদের স্বেচ্ছাসেবীরা। আমার মা প্রায়ই স্বেচ্ছাসেবকদের দায়িত্ব নিতেন। যদিও তিনি প্রতিদিন এটি করতেন না। সকলেরই জানা ছিল, যখনই শ্যমলা কথা বলবে তা শুনতে হবে।
কিন্তু একইরকম ভাবে যুদ্ধ পরবর্তীতে অনেকেই এই এলাকা ছেড়ে চলে গেছে। যখন নৌ-ঘাঁটি বন্ধ হয়ে যায় তখন কেউ এই জায়গাটিতে আর আসেনি। সুন্দর সুন্দর পুরনো বাড়ি এখানে পরিত্যক্ত হয়, এখানকার বাতাস ও মাটি দূষিত হয়ে যায়, মাদক ও সন্ত্রাসে ছেয়ে যায় এখানকার পথঘাট। ফলশ্রুতিতে এ এলাকায় দীর্ঘ সময়ের জন্য দরিদ্রতা স্থায়ী রূপ পায়। এখানকার বাসিন্দারা অনুপাতহীনভাবে অপরাধে জর্জরিত হয়ে পড়ে যা ছিল সমাধানের বাইরে। বে ভিউ এলাকায় বসবাসরতদের অনেকেরই শিকড় ছিল সান ফ্রান্সিসকোতে। এলাকাটি সমৃদ্ধ হওয়া সত্ত্বেও অনেকেই আক্ষরিক এবং আলঙ্করিক অর্থে এই এলাকা ছেড়ে যায়। বে ভিউ এমন একটি স্থানে পরিণত হয় যে শহরে প্রয়োজন ছাড়া কেউই ব্যবসায়িক কারণে সেখানে যেতে চাইতো না।
মুক্তভাবে এই এলাকায় কেউই যেতে পারতো না। শহরের একপাশ থেকে আরেক পাশে যাওয়া যেত না। এটি ছিল অত্যন্ত বেদনাদায়ক। এ যেন দুনিয়ার বাইরে অদৃশ্য কিছু। আমি এর পরিবর্তনে কাজ করতে চেয়েছি। সুতরাং, আমি বে ভিউ এর কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত গালভেজের থার্ড এভিনিউতে আমার নির্বাচনী প্রচারণার জন্য প্রধান অফিস স্থাপন করি। আমার রাজনৈতিক পরামর্শদাতারা মনে করলেন আমি বোকামি করেছি। তারা বললো, শহরের অন্যান্য স্থান থেকে স্বেচ্ছাসেবকরা কেউই এখানে আসতে পারবে না। বে ভিউ-এর মতো স্থানগুলোই আমাকে রাজনীতিতে আনতে প্রেরণা যুগিয়েছে। জাঁকজমকপূর্ণ অফিসের জন্য আমি রাজনীতিতে আসিনি। আমি রাজনীতিতে এসেছি যাদের কথা কেউ শুনে না তাদের জন্য, সকল মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিতের জন্য। আমি বিশ্বাস করি না মানুষ কখনও বে ভিউতে আসবে না। আমি সঠিক ছিলাম তারা ফিরে আসছিল ডজনে ডজনে।
সান ফ্রান্সিসকো হচ্ছে ছোট একটি আমেরিকা। এটি ছিল বৈচিত্র্যপূর্ণ কিন্তু একইসঙ্গে বৈষম্যে ভরপুর। আভিজাত্যের বিপরীতে ছিল হাহাকার। তারপরও আমাদের প্রচারণা মানুষকে আকৃষ্ট করেছিল। প্রচারণার লক্ষ্য ছিল সমগ্র সম্প্রদায়ের স্পন্দন তুলে ধরা।
স্বেচ্ছাসেবীদের মধ্যে ছিল চায়না টাউন, ক্যাস্ট্রো, প্যাসিফিক হাইটস ও মিশন ডিস্ট্রিক্ট-এর। এখান থেকে স্বেচ্ছাসেবী ও সমর্থকরা আসছিল। তারা ছিলেন শ্বেতাঙ্গ, কৃষ্ণাঙ্গ, এশীয়, লাতিন। এদের কেউ ছিল ধনী, কেউ ছিল গরিব। এরা কেউ ছিল নারী, কেউ ছিল পুরুষ। কেউবা ছিল তরুণ কেউবা ছিল বৃদ্ধ। কেউ ছিল সমকামী, কেউবা ছিল স্বাভাবিক জীবনের। গ্রাফিথি শিল্পীদের একটি তরুণ দল প্রচারণা শিবিরের পেছনের দেয়ালটি সাজিয়ে ছিল। সেখানে তারা স্প্রে প্রিন্টিং দিয়ে বড় অক্ষরে ‘জাস্টিস’ শব্দটি লিখেছিল। প্রচারণা শিবিরটি সবসময় স্বেচ্ছাসেবীতে কোলাহলমুখর হয়ে থাকতো। কেউ ভোটারদের ডাকছে, কেউ প্রচারণাপত্র রাখার টেবিলে বসে গল্প করছে। আর কেউবা বাড়ি বাড়ি যাচ্ছে আমরা যে রাজনীতি করছি তা মানুষকে বোঝাবার চেষ্টা করছে। আমরা যথাসময়ে প্রধান নির্বাচনী কার্যালয় তৈরি করতে সক্ষম হলাম। আমি আমার মাকে নিয়ে ছুটলাম প্রচারাভিযানে।
তোমার ইস্ত্রি করা বোর্ড কি নিয়েছ? মা জানতে চাইলেন। আমি বললাম, হ্যাঁ, অবশ্যই এটি গাড়ির পেছনের সিটে রাখা। মা বললেন- ওকে, আমি তোমাকে ভালোবাসি। এরপর গাড়ির দরজাটি বন্ধ করে দিলেন।
যখন আমি গাড়ি চালিয়ে যাচ্ছিলাম তখন আমার মা পেছন থেকে জিজ্ঞেস করলেন, ডাক টেপটি কি সঙ্গে নিয়েছ? আমার সঙ্গেই ডাক টেপটি ছিল।
কমালা হ্যারিসের অটোবায়োগ্রাফি
‘দ্য ট্রুথ উই হোল্ড’ বই থেকে
সেরা টিভি/আকিব