স্পোর্টস ডেস্ক:
ভারতের কুখ্যাত ক্রিকেট জুয়াড়ি দীপক আগারওয়াল অনেকদিন ধরেই লেগে ছিলো বিশ্ব সেরা অল রাউন্ডার সাকিব আল হাসানের পেছনে। মাঝে মধ্যেই হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে সাকিবকে ম্যাসেজ পাঠাতো আগারওয়াল। চ্যাটিং-এর মাধ্যমে তাদের কথা হয় একসময়। সেই সব গোপন কথোপকথন ফাঁস হতে শুরু করেছে। সাকিবকে আর্থিক সুবিধা দেয়ার আভাস দেয় জুয়াড়ি দীপক আগারওয়াল। তবে সাকিব সেই প্রস্তাব গ্রহণ না করলেও আগারওয়ালের সঙ্গে কোথাও দেখা করার প্রস্তাব রাখেন। তবে তাদের সেই গোপন বৈঠকের জায়গাটি ঠিক করা হয় মুম্বাইয়ের কোন একটি অ্যাপার্টমেন্টে। ওই সময়টায় সাকিব ভারতেই একটি ম্যাচ খেলছিলেন। শেষ পর্যন্ত তাদের গোপন বৈঠকটি পন্ড হয়ে যায় সাকিবেরই কারণে। সাকিব সেই বৈঠকে অংশ নেননি। তারপরও তাকে শাস্তির মুখোমুখি করা হলো। তবে অল রাউন্ডার সাকিব এসব গুরুত্বপূর্ণ তথ্য আগে কখনো ‘এসিইউ’কে জানতে দেননি। সংশ্লিষ্ট কোন কর্মকর্তার কাছে নিজ থেকে প্রকাশও করেননি। কি কারণে সাকিব জুয়াড়ি আগারওয়ালের সঙ্গে দেখা করেননি শেষ পর্যন্ত তা রহস্যই থাকছে।
সাকিব আল হাসানের বিরুদ্ধে দুর্নীতিবিরোধী আইনের তিনটি নীতিমালা ভঙ্গের অভিযোগ এনেছে আইসিসি। সব ধরণের ক্রিকেট থেকে তাকে দুই বছর নিষিদ্ধ করেছে তারা, এরমধ্যে এক বছরের স্থগিতাদেশ নিষেধাজ্ঞা। এই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে দুর্নীতিবিরোধী ইউনিট (এসিইউ) গত ২৩ জানুয়ারি ও ২৭ আগস্ট সাকিবের সাক্ষাৎকার নেয়। সেখানে তিনি জানান, দীপক আগারওয়াল নামের এক জুয়াড়ির ডলারের প্রস্তাব পেয়ে তার সঙ্গে দেখা করতে চেয়েছিলেন।
সাকিব ওই সাক্ষাৎকারে নিশ্চিত করেছেন, ২০১৭ সালের নভেম্বরে ঢাকা ডায়নামাইটসের হয়ে খেলার সময় তিনি জানতেন, তারই পরিচিত একজন আগারওয়ালকে তার ফোন নম্বর দেন। ওই ব্যক্তিকে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের খেলোয়াড়দের ফোন নম্বর দেওয়ার জন্য বলেছিলেন দীপক আগারওয়াল।
জুয়াড়ি আগারওয়ালের সঙ্গে হোয়াটসঅ্যাপে কয়েকবার মেসেজও চালাচালি হয়েছে সাকিবের। ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে জিম্বাবুয়ে ও শ্রীলঙ্কার সঙ্গে ত্রিদেশীয় সিরিজের দলে ডাক পান বাঁহাতি বিশ^ সেরা এই অলরাউন্ডার। ওই সিরিজেও হোয়াটসঅ্যাপে তাদের সঙ্গে কথোপকথন হয়। ওই বছর ১৯ জানুয়ারির ম্যাচে ম্যাচসেরা হওয়ার পর সাকিবকে অভিনন্দন জানান আগারওয়াল। সেখানে একটি বার্তা ছিল, ‘আমরা কী কাজ শুরু করবো নাকি আইপিএল পর্যন্ত অপেক্ষা করবো।’ কাজ বলতে বোঝানো হয়েছে, দলের ভেতরের তথ্য তাকে দেওয়ার কথা। এই যোগাযোগের কথা দুর্নীতিবিরোধী ইউনিটের কাছে গোপন করেন সাকিব।
চারদিন পর ২৩ জানুয়ারি আবারও আগারওয়াল হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজে আরেকটি প্রস্তাব দেন, ‘ব্রো, এই সিরিজে কিছু হবে?’ সাকিব স্বীকার করেছেন, ওই ত্রিদেশীয় সিরিজের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ ভেতরের তথ্য তাকে সরবরাহ করতে এই বার্তা দেন আগারওয়াল। এই প্রস্তাবও গোপন রাখেন সাকিব।
২৬ এপ্রিল কিংস ইলেভেন পাঞ্জাবের বিপক্ষে আইপিএল ম্যাচে সানরাইজার্স হায়দরাবাদের সঙ্গে ম্যাচ খেলার সময় তৃতীয়বার প্রস্তাব পান সাকিব। ওইদিন তার কাছে আগারওয়াল জানতে চান একটা নির্দিষ্ট খেলোয়াড়ের ব্যাপারে যে, তিনি খেলবেন কিনা ওই ম্যাচে। এরপর আরও ভেতরের খবর জানতে চান ওই জুয়াড়ি।
কথা আরও চালিয়ে যান আগারওয়াল। একপর্যায়ে সাকিবের বিটকয়েন, ডলার অ্যাকাউন্ট সম্পর্কে জানতে চান তিনি। ডলার অ্যাকাউন্টের বিস্তারিত জানতে বেশি তোড়জোড় করেন আগারওয়াল। এরপরই সাকিব তাকে বলেন, ‘আগে’ তার (আগারওয়াল) সঙ্গে দেখা করতে চান তিনি।
ওইদিনের বেশ কয়েকটি মেসেজ ডিলিট করা হয়েছিল। সাকিব নিশ্চিত করেন, ভেতরের খবর জানতে চেয়েই ছিল ওই মেসেজগুলো। আগারওয়ালকে নিয়ে আগে থেকেই উদ্বেগের মধ্যে ছিলেন সাকিব। এই কথোপকথনে তিনি বুঝতে পেরেছিলেন, আগারওয়াল একজন জুয়াড়ি। কিন্তু তৃতীয় প্রস্তাবও দুর্নীতিবিরোধী ইউনিটকে জানাননি সাকিব। পুরো কথোপকথনের বিষয়টি তিনি গোপন রাখেন।
সেরা নিউজ/আকিব