স্টাফ রিপোর্টার:
কেন্দ্রীয় নেতাদের দায়িত্ব বণ্টন ও শূন্য পদে পদ প্রত্যাশীদের পদায়ন করতে না পারার ব্যর্থতা স্বীকার করেছেন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য। রোববার সংগঠনটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক জরুরী সভায় জয়-লেখক নিজেদের ব্যর্থতা মেনে নিয়েছেন বলে জানিয়েছেন সভায় উপস্থিত বেশ কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা।
আগামী ৪ঠা জানুয়ারি ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে এ সভার আহ্বান করা হয়েছিল। কিন্তু সভায় প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী থেকেও জয়-লেখকের সংগঠন পরিচালনায় ব্যর্থতার বিষয়ে বেশি আলোচনা হয়। অভিযোগ উঠেছে এ সভা আহ্বানের ক্ষেত্রে গঠনতন্ত্রের অনুসরণ করা হয়নি। আবার নিজেদের দেয়া সময়ের থেকে এক ঘণ্টা বিলম্বে সভাস্থলে উপস্থিত হয়েছেন জয়-লেখক। এরপর সভা পরিচালনা করতে গিয়েও এই দুইজন কেন্দ্রীয় নেতাদের তোপের মুখে পড়েন। তুমুল হট্টগোল হয় সভাস্থলে।
সংগঠনটির অনেক কেন্দ্রীয় নেতার অভিযোগ জয়-লেখক জরুরী সভা আহ্বানের ক্ষেত্রে সংগঠনের গঠতন্ত্রের ১৫ এর (গ) ধারার স্পষ্টত লঙ্ঘন করেছেন। গত শনিবার রাত সোয়া ২টায় জরুরী সভার আহ্বান করে এক বিজ্ঞপ্তি কেন্দ্রীয় নেতাদের ফেসবুক ম্যাসেঞ্জারে পাঠান কেন্দ্রীয় উপ-দপ্তর সম্পাদক নাজির আহমেদ।
এতে বলা হয়, ‘রবিবার বিকেল ৪টায় দলীয় কার্যালয় রাজধানীর ২৩, বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হবে।’ এরপর রোববার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে কেন্দ্রীয় নেতাদের ফোনে সভায় উপস্থিত থাকার আহ্বান জানানো হয়। নাম প্রকাশ না করা শর্তে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির এক সহ-সভাপতি বলেন, ‘জরুরী সভা আহ্বানের ক্ষেত্রে জয়-লেখক ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্রের স্পষ্টত লঙ্ঘন করেছেন। এছাড়াও নিজেদের দেয়া সময়ে উপস্থিত হতে পারেননি তারা। যা তাদের সাংগঠনিক অযৌগ্যতার দলিল।’
সভা সূত্রে জানা গেছে, সভা শুরুর পরই বিভিন্ন বিষয়ে কেন্দ্রীয় নেতারা জয়-লেখকের ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করেন। এসময় তারা অনেক বিষয়ে কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে একমত হলেও নিজেদের অবস্থান তুলে ধরেন। বিশেষ করে ১ বছরেও কেন কেন্দ্রীয় নেতাদের বিভাগীয় দায়িত্ব বণ্টন করে দেয়া হয়নি ও শূন্য পদে পদ প্রত্যাশীদের মধ্য থেকে যোগ্যদের কেন পদায়ন করা হয়নি এমন প্রশ্নের কোন সদুত্তর দিতে পারেননি জয়-লেখক। এ দু’টি বিষয়ে তারা নিজেদের ব্যর্থতা স্বীকার করে নেন। এছাড়াও কেন্দ্রীয় নেতাদের ফোন না ধরার অভিযোগ মুচকি হেসে এড়িয়ে যান জয়-লেখক।
আলোচনা হয় সম্প্রতি রোকেয়া হল শাখার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ফাল্গুনী দাস তন্বীকে মারধরে অভিযুক্ত কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বেনজির হোসেন নিশি ও শামসুন্নাহার হল শাখার সাধারণ সম্পাদক জেয়াসমিন শান্তার বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। এ বিষয়ে জয়-লেখক অতিদ্রুত তদন্ত করে বহিষ্কার করা হবে বলে কেন্দ্রীয় নেতাদের আশ্বস্ত করা হয়।
এছাড়াও কেন্দ্রীয় কমিরি যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক প্রদীপ চৌধুরী তার নিজ জেলার দুটি উপজেলা কমিটি গঠনের বিষয়ে কেন তাকে কিছু জানানো হয়নি এমন প্রশ্ন করলে সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য তার বিরুদ্ধে কমিটি নিয়ে চাঁদাবাজির অভিযোগ করেন। এসময় লেখক প্রদীপের বিরুদ্ধে কমিটি দেয়ার কথা বলে এক পদপ্রার্থী থেকে ৫ হাজার টাকা বিকাশে চাঁদা আদায় করেছেন বলে অভিযোগ করেন। এত ক্ষিপ্ত হয়ে যান প্রদীপ। তিনি লেখকের কাছে অভিযোগের প্রমাণ চান।
আরেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আরিফুজ্জামান ইমরান পটুয়াখালীর কলাপড়ায় ইয়াবাসহ আটক এক নেতার বিরুদ্ধে কেন সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হয়নি তার ব্যাখ্যা চান।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘তারা শূন্য পদে পদায়ন ও কেন্দ্রীয় নেতাদের দায়িত্ব বণ্টন করে না দিতে পারার ব্যর্থতা স্বীকার করেছেন। এছাড়াও সভায় সংগঠন পরিচালনার ক্ষেত্রে জয়-লেখকের অনেক কর্মকাণ্ডের বিষয়ে কেন্দ্রীয় নেতারা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।’
সার্বিক বিষয়ে জানতে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যের মুঠোফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তারা কল রিসিভ করেননি।
সেরা টিভি/আকিব