অনলাইন ডেস্ক: পারিবারিক কলহের জেরে অভিমান করে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের ছাত্রী ফাবিহা সুহা আত্মহত্যা করেছেন। শনিবার (২ জানুয়ারি) সন্ধ্যা ৭টার দিকে নিজ বাড়িতে গলায় ফাঁস দেন তিনি। সুহা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন ও ভূমি ব্যবস্থাপনা বিভাগে পড়তেন। পরিবারের লোকজন তাকে উদ্ধার করে নিকটস্থ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। নিহতের প্রতিবেশী ও তার বিভাগের শিক্ষকদের সূত্রে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে।
সুহা ঝিনাইদহ শহরের আদর্শপাড়া গ্রামের বাসিন্দা ও ঝিনাইদহ প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট শেখ সেলিমের বড় মেয়ে। সুহার মৃত্যুর খবর শুনে তার বাড়িতে ছুটে যান তার বিভাগের শিক্ষক প্রভাষক মেহেদী হাসান ও শাহিদা আক্তার আশা।
পরিবার ও প্রতিবেশীদের বরাত দিয়ে ইবি শিক্ষক মেহেদী হাসান জানান, কিছু দিন আগে সুহার খালার বিবাহ বিচ্ছেদ হয়। এর পর থেকে তাদের বাড়িতে থাকা খালাতো বোনকে নিয়ে মায়ের সঙ্গে প্রতিনিয়ত কথা কাটাকাটি হতো সুহার। তার অভিযোগ ছিল, মা তার থেকে তার খালাতো বোনকে বেশি প্রাধান্য দিতেন। এসব নিয়ে সুহা ও তার বাবার সঙ্গে তার মায়ের মাঝেমধ্যেই ঝামেলা হতো। সর্বশেষ শুক্রবার বকাঝকা ও মারধর করেন সুহার মা। এ নিয়ে তার বাবা-মায়ের মধ্যে কলহের সৃষ্টি হয়। পারিবারিক কলহ ও মায়ের ওপর অভিমান থেকে আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে বলে ধারণা প্রতিবেশীদের।
তিনি আরও জানান, সুহার মা তাকে বকাঝকার বিষয়টি স্বীকার করেছেন। তবে এ নিয়ে সুহা আত্মহত্যা করতে পারে বিষয়টি ভাবেননি তিনি।
সুহার মৃত্যুুতে শোক প্রকাশ করেছেন ইবি উপাচার্য অধ্যাপক শেখ আবদুস সালাম ও উপ-উপাচার্য অধ্যাপক শাহিনুর রহমান। এছাড়া সুহার সহপাঠীরা তার মৃত্যুর বিষয়টি কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছেন না।
সুহার সহপাঠী শিমুল হোসেন বলেন, ‘সুহা একদম সাদাসিধে একটি মেয়ে। ও সবার সঙ্গে হাসিমুখে কথা বলত। আমরা তার প্রস্থান মেনে নিতে পারছি না।’
আইন ও ভূমি ব্যবস্থাপনা বিভাগের সভাপতি ও আইন অনুষদের ডিন অধ্যাপক হালিমা খাতুন বলেন, ‘সুহা চলে যাবে আমি কখনও ভাবতেও পারিনি। মায়ের প্রতি অভিমান করে মেয়েটি আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছে শুনলাম। এটা মেনে নেয়া যায় না। আমি দুজন শিক্ষককে পাঠিয়েছি তার বাড়ি। তারা খোঁজ-খবর নিচ্ছেন।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ‘আমি ঘটনাটি শুনামাত্রই ভিসি স্যারকে জানিয়েছি। স্যারের নির্দেশ মোতাবেক বিভাগীয় সভাপতির সঙ্গে কথা বলে ঘটনাস্থলে দুজন শিক্ষককে পাঠিয়েছি। তারা পরিবারকে সহানুভূতি জানিয়েছেন, পাশাপাশি আমিও কথা বলার চেষ্টা করেছি।’
এ ঘটনায় কোনো মামলা করা হবে না জানিয়ে ওই শিক্ষার্থীর মামা আনোয়ারুল ইসলাম জানান, রোববার (৩ জানুয়ারি) বাদ জোহর সুহার বাড়ির সামনে ওয়াজের আলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে তার জানাজা অনুষ্ঠিত হবে।
ঝিনাইদহ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিজানুর রহমান, ইবি শিক্ষার্থীর আত্মহত্যার খবর পাওয়া গেছে। তবে ওই শিক্ষার্থীর পরিবার এ ঘটনায় থানায় কোনো অভিযোগ দেননি।
সেরা টিভি/আকিব