অনলাইন ডেস্ক:
বরিশালে নির্যাতনে এক আসামির মৃত্যুর ঘটনায় অভিযুক্ত মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) উপপরিদর্শক (এসআই) মো. মহিউদ্দিনের বাড়ি ভাঙচুর করেছে স্থানীয়রা।
রোববার (৩ জানুয়ারি) সন্ধ্যার পর স্থানীয় জনতা এসআই মো. মহিউদ্দিনের নগরীর সাগরদী শেরে বাংলা সড়কের ভবনে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। এতে ভবনের একপাশের জানালার গ্লাস ভেঙে যায়। পরে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
এর আগে বিকেল ৫টার দিকে মারা যাওয়া আসামির মরদেহ নিয়ে সাগরদী আলীয়া মাদরাসা সংলগ্ন বরিশাল-ঢাকা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে এলাকাবাসী। এতে সড়কে প্রায় এক ঘণ্টা যান চলাচল বন্ধ ছিল। পরে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের উপকমিশনার (দক্ষিণ) মো. মোকতার হোসেন সন্ধ্যা ৬টার দিকে সুষ্ঠু তদন্ত এবং রেজাউলের মৃত্যুর জন্য সংশ্লিষ্টকে আইনের আওতায় আনার প্রতিশ্রুতি দিলে বিক্ষুব্ধরা সড়ক ছেড়ে দেয়।
মারা যাওয়া ওই যুবকের নাম রেজাউল করিম (৩০)। তিনি নগরীর ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের সাগরদী হামিদ খান সড়কের মো. ইউনুস মুন্সির ছেলে।
রেজাউল করিমের বন্ধু মো. আতিক জানান, ময়না তদন্ত শেষে রেজাউল করিমের মরদেহ বিকাল ৫টায় নগরীর সাগরদী এলাকায় নেয়া হয়। এ সময় এলকাবাসী বিক্ষোভে ফেটে পড়েন। পরে তারা রেজাউল করিমের মরদেহ নিয়ে সাগরদী আলীয়া মাদরাসা সংলগ্ন বরিশাল-ঢাকা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে। এতে সড়কে যানবহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
কোতয়ালী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. আসাদ জানান, সন্ধ্যার পর একদল জনতা এসআই মো. মহিউদ্দিনের নগরীর সাগরদী শেরে বাংলা সড়কের ভবনে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। এতে ওই ভবনের একপাশের জানালার গ্লাস ভেঙে যায়। তবে এতে ভবনের কোনো বাসিন্দা আহত হয়নি। পরে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
রেজাউল করিমের বাবা মো. ইউনুস মুন্সি বলেন, বৃহস্পতিবার (৩১ ডিসেম্বর) রাতে নগরীর ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের নিজ বাড়ি সংলগ্ন একটি চায়ের দোকানে বসা ছিল রেজাউল করিম। রাত সাড়ে ৮টার দিকে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) এসআই মো. মহিউদ্দিন সেখান থেকে তাকে ধরে নিয়ে যায়। পরে এসআই মো. মহিউদ্দিন জানান রেজাউল করিমের কাছ থেকে ১৩৮ গ্রাম গাঁজা এবং চার পিস নেশাজাতীয় ইনজাকশন পাওয়া গেছে। ওই দিন রাত সাড়ে ১১টার দিকে রেজাউল করিমকে আসামি করে কোতয়ালী মডেল থানায় মাদক আইনে মামলা করেন এসআই মো. মহিউদ্দিন। ওই মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে পরদিন শুক্রবার তাকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়।
মো. ইউনুস মুন্সি বলেন, এসআই মো. মহিউদ্দিন ধরে নেয়ার সময় রেজাউল সুস্থ ছিল। মারা যাওয়ার মত কঠিন কোনো রোগ তার ছিল না। তবে শুক্রবার আদালতে সোপর্দের সময় রেজাউল গুরুতর অসুস্থ ছিল। সে স্বাভাবিক চলাফেরাও করতে পারছিল না। আদালতের নির্দেশে রেজাউলকে প্রথমে কারা হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হয়। পরে খোঁজ নিয়ে জানতে পারি সেখানে অবস্থার অবনতি হলে শুক্রবার (১ জানুয়ারি) রাত সাড়ে ৯টার দিকে তাকে শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শনিবার রাত ১২টা ৫ মিনিটে মৃত্যু হয় রেজাউলের। নির্যাতনের কারণেই রেজাউলের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তার তিনি বিচার দাবি করেন বাবা মো. ইউনুস মুন্সি।
বরিশাল কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার প্রশান্ত কুমার বণিক বলেন, ১ জানুয়ারি রেজাউল করিমকে কারা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। তার হাজতি পরোয়ানায় বাম পায়ে একটি পুরাতন জখমের কথা উল্লেখ ছিল।
হস্তান্তরের পর প্রথমে তাকে কারা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। উন্নত চিকিৎসার জন্য ওই দিন রাতেই তাকে শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শনিবার রাতে মারা যান তিনি।
মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) এসআই মো. মহিউদ্দিনের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
তবে মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের সহকারী কমিশনার (এসি) নরেশ কর্মকার জানান, পুলিশ হেফাজতে রেজাউল করিমকে নির্যাতন তো দূরের কথা, তার সঙ্গে কেউ দুর্ব্যবহারও করেননি। রেজাউল করিম চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী ছিলেন। গত আগস্ট্রে ১৬০ পিস নেশাজাতীয় ইনজাকশনসহ আটক হয়েছিলেন তিনি। ২০১৯ সালেও তার বিরুদ্ধে মাদক আইনে মামলা হয়েছিল। রেজাউল নিজেও নেশাজাতীয় ইনজাকশন পুশ করে নেশা করতেন। এ কারণে তার বাম পায়ের উপরের অংশে একটি ক্ষত ছিল। ওই ক্ষততে ইনফেকশন হয়ে রক্ত ক্ষরণের কারণে মৃত্যু হয়েছে বলে চিকিৎসকদের মাধ্যমে জানতে পেরেছি।
বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনা মো. শাহাবুদ্দিন খান জানান, রেজাউলের মৃত্যুর সঠিক কারণ উদঘাটনে উপ পুলিশ কমিশনার (দক্ষিণ) মো. মোকতার হোসেনকে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। প্রতিবেদনে নির্যাতনের অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
|
সেরা টিভি/আকিব