ইন্টারন্যাশনাল ডেস্ক:
যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জো-বাইডেন ট্রাম্পকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে অযোগ্য মনে করলেও তার অভিসংশন চান না।
শুক্রবার নিজ প্রদেশ ডেলোওয়্যারে নতুন মন্ত্রিসভায় পছন্দকৃত সদস্যদের পরিচয় করে দেয়া অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের উদ্দেশ্য করে বাইডেন এই কথা বলেন।
বাইডেন জানান, তার প্রেসিডেন্ট পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতার করার মূল কারণ হলো সুদীর্ঘ সময় ধরে তিনি ভেবেছেন ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট পদের যোগ্য নয়। ‘আমি এখন এবং এক বছরের বেশি সময় ধরে বলছি ট্রাম্প সেবা দেয়ার যোগ্য নন।’ বলেন বাইডেন। এসময় তিনি ট্রাম্পকে যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসের সবচেয়ে অযোগ্য প্রেসিডেন্ট হিসেবেও উল্লেখ করেন।
প্রসঙ্গত, গত বুধবার ট্রাম্প সমর্থকরা র্যালির পর ক্যাপিটল হিলে তাণ্ডব চালায়। অধিকাংশ ডেমোক্র্যাট এবং অনেক রিপাবলিকান কংগ্রেস ভবন ভাঙচুর ও ধ্বংসের ঘটনায় ট্রাম্পকে দায়ী করছেন। তাদের অভিযোগ, ট্রাম্প মিথ্যা তথ্য দিযে সহিংসতা উস্কে দেন। ওই ঘটনায় এক পুলিশ কর্মকর্তাসহ পাঁচজন নিহত হন।
যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে কলঙ্কজনক ওই ঘটনার পর থেকে ডেমোক্র্যাট এবং নিজ দল রিপাবলিকান থেকেও ট্রাম্পকে প্রেসিডেন্টের পদ থেকে সরানোর দাবি উঠেছে। প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি প্রতিনিধিদের উদ্দেশে দেয়া এক চিঠিতে বলেছেন, ‘প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প অবিলম্বে পদত্যাগ না করলে আগামী সপ্তাহের শুরুতে সহিংসতা উস্কে দেয়ার জন্য ট্রাম্পের অভিসংশনের জন্য আইনপ্রণেতারা এগোতে পারেন।’
স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি ছাড়াও ডেমোক্র্যাটিক সিনেট লিডার চাক শুমার ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং পরিষদের প্রতি অফিস থেকে ট্রাম্পকে সরানোর জন্য ২৫ সংশোধনী আহ্বানের অনুরোধ জানিয়েছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের ২৫তম সংশোধনীতে রয়েছে ‘প্রেসিডেন্ট ক্ষমতা হস্তান্তর করতে না পারলে ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং মন্ত্রিসভার অধিকাংশ সদস্য তাকে ‘দায়িত্ব পালনে অপারগ’ঘোষণা করতে পারেন।’ নিয়ম অনুযায়ী, তখন ক্ষমতা চলে যাবে ভাইস প্রেসিডেন্টের হাতে।
তবে নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জো-বাইডেন ট্রাম্পকে সরাতে অস্বীকার করছেন। তিনি বলেন, ‘এটা কংগ্রেসের কাজ। আমাদের সামনে ছয় মাস সময় থাকলে তাকে সরানোর জন্য সব ধরনের পদক্ষেপ নিতাম। আরেকবার তাকে অভিসংশন করতাম, ২৫তম সংশোধনী আহ্বান করতাম। কিন্তু আমি এখন প্রেসিডেন্ট হিসেবে নিয়ন্ত্রণ নেয়ার বিষয়ে এবং এজেন্ডা সামনে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছি।’
আগামী ২০ জানুয়ারি প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব শুরু করার বিষয়ে তার ফোকাস উল্লেখ করে বাইডেন জানান, দায়িত্ব গ্রহণ করার পর তার অগ্রাধিকার হবে করোনাভাইরাস পরাজিত করা , নিরপেক্ষ এবং ন্যায়সঙ্গতভাবে ভ্যাকসিন বণ্টন করা এবং অর্থনীতিকে পুনরুজীবিত করা।
বাইডেনের এসব মন্তব্য এমন এক সময়ে এলো যখন ডোনাল্ড ট্রাম্প বাইডেনের অভিষেক অনুষ্ঠানে না থাকার ঘোষণা দিয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রে ১৫০ বছরের ইতিহাসে এটা হবে প্রথম ঘটনা। শপথ অনুষ্ঠানে ট্রাম্পের না আসার ঘোষণার প্রসঙ্গে বাইডেন জানিয়েছেন, শপথ অনুষ্ঠানে ট্রাম্প না থেকে যদি ভাইস প্রেসিডেন্ট পেন্স থাকেন তাহলে তিনি সম্মানিত বোধ করবেন। বাইডেন ট্রাম্পের ঘোষণাকে বলেন, কয়েকটি বিষয়ের মধ্যে এটি একটি যেটা ট্রাম্প এবং আমি একমত হয়েছি। এসময় বাইডেন বলেন, ‘এটা ভালো যে তাকে (ট্রাম্পকে) দেখতে হবে না।’
যুক্তরাষ্ট্রের ৪৬তম নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জো-বাইডেন ৩ নভেম্বরের নির্বাচনে জয়লাভের পর থেকেই ট্রাম্পের সমালোচনার পাশপাশি নতুন প্রশাসন কী কী পদক্ষেপ নেবেন সেটার ওপর জনগণের দৃষ্টি আকর্ষণ করছেন।
ট্রাম্পকে যদি ফের অভিসংশন করা হয় তাহলে তিনি হবেন ইতিহাসের একমাত্র প্রেসিডেন্ট যাকে দ্বিতীয়বার অভিসংশন করা হবে। হাউস ট্রাম্পকে ২০১৯ সালে একবার অভিশংসিত করেছিল। তবে রিপাবলিক সংখ্যাগরিষ্ঠ সিনেট তাকে অফিস থেকে বের হয়ে যাওয়ার বিষয়টি প্রতিরোধ করে। ট্রাম্পকে ফের অভিশংসিত করা হলে ২০২৪ সালে পুনরায় তিনি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন না।
সেরা টিভি/আকিব