ইন্টারন্যাশনাল ডেস্ক:
ঘটনাটি সদ্য ঘটলেও অভিজ্ঞতাটি বিশ্বরাজনীতির ইতিহাসে মোটেও নতুন নয়। অতীতের বহু রাজনীতিবিদের মতোই আর্মির আনুগত্যের চরম মূল্য দিচ্ছেন মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সু চি। শুধু আটকই নয়, আর্মির নির্দেশে বিচারের মুখোমুখিও হচ্ছেন একদা গণতন্ত্রের নেত্রী থেকে আর্মির পদলেহী সু চি।
সর্বশেষ প্রাপ্ত খবরে প্রকাশ, মিয়ানমারের ক্ষমতা থেকে উৎখাত হওয়া নেত্রী অং সান সু চির বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে দেশটির পুলিশ। তার বিরুদ্ধে আমদানি-রপ্তানি আইন ভঙ্গের অভিযোগ আনা হয়েছে। একইসঙ্গে আগামী ১৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত তার বন্দিত্ব জারি রাখার বিষয়েও আবেদন করেছে পুলিশ। দেশটির পুলিশের নথিপত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে এ খবর দিয়েছে সংবাদ সংস্থা রয়টার্স।
পহেলা ফেব্রুয়ারি ক্ষমতা দখলের সঙ্গে সঙ্গে আটক হওয়ার মাত্র আটচল্লিশ ঘণ্টার মধ্যে তাকে দাঁড় করানো হলো বিচারের কাঠগড়ায়। শেষ বয়সে ক্ষমতা ও গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার আন্দোলনের বদলে তাকে ব্যস্ত হতে হচ্ছে জীবন ও রাজনৈতিক ক্যারিয়ার বাঁচানোর অগ্নি পরীক্ষায়।
রাজনৈতিক ক্যারিয়ারের বারোটা তিনি আগেই বাজিয়ে ছিলেন দেশের সেনাবাহিনীর শর্তহীন আনুগত্যের মাধ্যমে। বিশুদ্ধ গণতন্ত্রের বদলে তিনি আর্মির সঙ্গে আপোষ ও ক্ষমতার ভাগাভাগি করেছিলেন। পুরো বিশ্বের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে নিঃশর্ত সমর্থন দিয়েছিলেন আর্মির গণহত্যা ও বর্বরতার পক্ষে।
এতো কিছু করেও শেষরক্ষা হয়নি তার। নির্বাচনে জিতেও বসতে পারেননি ক্ষমতায়। বরং বন্দি হয়ে বিচারের সম্মুখীন হয়েছেন তিনি। পর্বততুল্য জনপ্রিয়তা থেকে গভীর খাদে পড়েছেন তিনি, যা থেকে হৃৎগৌরবে পুনরুত্থান ঘটা তার পক্ষে আদৌ সম্ভব হবে বলে মনে হয় না।
আর্মি যে কখনোই রাজনীতিবিদের বন্ধু হয়না, মিয়ানমারের ঘটনা ও সু চির করুণ পরিণতি সেকথা আবারো প্রমাণ করলো। অতীতে বিভিন্ন দেশে যেসব রাজনৈতিক নেতা আর্মির আনুগত্য ও পদলেহন করেছে, তাদেরকে কাজের শেষে ছুঁড়ে ফেলে দেওয়া হয়েছে। সু চি তেমনি দুর্ভাগ্যের শিকারে পরিণত হয়েছেন।
সন্দেহ নেই, আর্মির ক্ষমতা দখল ও সু চির পরিণতি খুবই দুঃখজনক বিষয়। কিন্তু ইতিহাসে বার বার এমনটিই হয়েছে। মিয়ানমারে কেবল সামরিক শাসনই হয়নি, সু চি যুগেরও অবসান ঘটেছে। অচিরেই আর্মি নিজেদের পছন্দের নতুন কোনো নেতাকে সামনে নিয়ে আসবে এবং তাকে কেন্দ্রে রেখে গণতন্ত্রের পুনরুজ্জীবনের খেলা শুরু হবে। দুঃখজনকভাবে সু চি পরিণত হবেন বাতিল ও অপ্রয়োজনীয় অস্তিত্বে।
সেরা টিভি/আকিব