অনলাইন ডেস্ক:
ঢাকা থেকে চিলাহাটি-হলদিবাড়ি দিয়ে ভারতের নিউ জলপাইগুড়ি পর্যন্ত ট্রেন চলাচল আগামী ২৬ মার্চ শুরু হবে। ভারত-বাংলাদেশ দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী ঢাকা থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে এই নতুন রুটের রেল যোগাযোগ উদ্বোধন ঘোষণা করবেন। ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে ২২০০ টাকা। এর সঙ্গে যোগ হবে ৫০০ টাকা ট্রাভেল ট্যাক্স।
রেলপথ মন্ত্রী অ্যাডভোকেট নুরুল ইসলাম সুজন রবিবার পঞ্চগড় জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে ঐতিহাসিক ৭ মার্চ জাতীয় দিবসের আলোচনা অনুষ্ঠানে এসব তথ্য জানিয়েছেন।
উত্তর অঞ্চলের মানুষ চিলাহাটি স্টেশন থেকে যাতায়াত করতে পারবে বলে জানান মন্ত্রী। সেক্ষেত্রে তাদের জন্য কয়েকটি বগি নির্ধারণ করা থাকবে। কেবল নিউ জলপাইগুড়ি থেকে চিলাহাটি যাতায়াত করতে পারবে তারা। ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে ৭০০ টাকা সঙ্গে ৫০০ টাকায় ট্রাভেল ট্যাক্স যোগ হবে।
গত বছরের ১৭ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে অনুষ্ঠিত ভার্চুয়াল বৈঠকের মাধ্যমে নীলফামারী জেলার চিলাহাটি ও ভারতের কোচবিহার জেলার হলদিবাড়ি হয়ে ভারত বাংলাদেশ রেল যোগাযোগ পুনরায় চালু করা হয়।
ওই দিন বেলা সাড়ে ১১টায় দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর ওই বৈঠক শুরু হয়। পরে দুই নেতার ভাষনের পর পরই ৫৫ বছর পর এই রেল সংযোগের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন ঘোষনা করা হয়। পরে বেলা ১২ টা ৪৬ মিনিটে চিলাহাটি রেল স্টেশন থেকে ৩২টি ওয়াগনের একখানা পণ্যবাহি ট্রেন ভারতের উদ্যেশ্যে যাত্রা শুরু করে। রেলপথ মন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন বাঁশি বাঁজিয়ে ও পতাকা নেরে ওই ট্রেনের যাত্রা শুরু করেন।
সূত্র মতে ব্রিটিশ আমল থেকে অবিভক্ত ভারতের যোগাযোগের অন্যতম রেলপথ ছিলো চিলাহাটি-হলদিবাড়ি রুট। এই পথ দিয়ে নিয়মিত চলাচল করতো দার্জিলিং থেকে খুলনা হয়ে কলকাতা পর্যন্ত একাধিক যাত্রিবাহী ও পণ্যবাহী ট্রেন। ১৯৬৫ সালে পাক-ভারত যুদ্ধের পর পথটি বন্ধ করে দেয়া হলে স্থবির হয়ে পড়ে নীলফামারীসহ আশপাশ জেলার ব্যবসা-বাণিজ্য।
তখন থেকে ব্যবসায়ীসহ এলাকার মানুষের দাবি ছিল পুণঃরায় রেলপথ চালুর। এমন দাবিতে জেলা শহরসহ বিভিন্ন উপজেলায় মানববন্ধনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালিত হয়। এরই প্রেক্ষিতে দীর্ঘ ৫৫ বছর পর পথটি পুণরায় চালুর উদ্যোগ নেয় দুই দেশের সরকার।
নীলফামারীর চিলাহাটি থেকে ভারতের হলদিবাড়ি সীমান্ত পর্য়ন্ত বাংলাদেশ অংশের ৬ দশমিক ৭২ কিলোমিটার রেললাইন বসানোর কাজ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। ৮০ কোটি ১৭ লাখ টাকা ব্যয়ের ওই প্রকল্পে রেল লাইন স্থাপন ছাড়াও বসানো হয়েছে চার কিলোমিটার লুপ লাইন, আটটি লেভেল ক্রসিং ও নয়টি ব্রীজসহ অন্যান্য অবকাঠামো। সব নির্মাণকাজ শেষে পরীক্ষামূলক ট্রেন চালানো হয়েছে বাংলাদেশ অংশে। এরপর চিলাহাটি রেল স্টেশনকেও আধুনিক সাজে সাজানোর পরিকল্পণা নিয়েছে রেলপথ মন্ত্রণালয়।
বাংলাদেশের পাশাপাশি ভারত হলদিবাড়ি থেকে বাংলাদেশের সীমান্ত পর্যন্ত তিন কিলোমিটার রেললাইন স্থাপনসহ প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণ কাজ শেষ করে।
চিলাহাটি-হলদিবাড়ি রেল লিংক স্থাপনের প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী আব্দুর রহীম বলেন, ‘১৯৬৫ সালে পাক-ভারত যুদ্ধের পর এ পথটি বন্ধ হয়। এরপর বর্তমান সরকার ২০১৫ সালে বন্ধ থাকা রেল লিংক পুণরায় চালুর উদ্যোগ নেয়। সে লক্ষ্যে চিলাহাটি-হলদিবাড়ি রেল লিংকটি স্থাপনের সিদ্ধান্ত হয় ২০১৮ সালে। ২০১৯ সালের ২১ সেপ্টেম্বর নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেন বর্তমান রেলপথমন্ত্রী এবং ভারতীয় হাইকমিশনার। উদ্বোধনের পর এ পথে বাংলাদেশ থেকে ভারত, নেপাল, ভুটান পর্যন্ত যাত্রিবাহী এবং পণ্যবাহী ট্রেন চলাচল করতে পারবে।
তিনি বলেন, ঢাকা থেকে ভারতের দার্জিলিং যাওয়ার জন্য এটি একটি বেস্ট রুটে পরিণত হবে। সে কারণে প্রধানমন্ত্রী সিদ্ধান্ত নিয়েছেন আগামী ২৬ মার্চ থেকে এ পথে যাত্রিবাহী ট্রেন পরিচালনা করা হবে।
সেরা টিভি/আকিব