অনলাইন ডেস্ক:
মাত্র আট বছর বয়সের একটি শিশু। আবাসিক মাদ্রাসা থেকে মায়ের সঙ্গে বাড়ি চলে যেতে চেয়েছিল। কিন্তু শিক্ষকের তা একটুও মনে ধরেনি, বরং তিনি রেগে শিশুটিকে ঘাড় ধরে ঠেলে এনে বেধড়ক পেটালেন। ভিডিওতে দেখা গেছে, শিশুটিকে একটি ঘরে ঢোকানো হয়। এরপর মাটিতে ফেলে বেত দিয়ে পেটাতে শুরু করেন ওই শিক্ষক। শুরুতে শিশুটির ডান হাত ধরে পেটানো হয়, একপর্যায়ে শিশুটি মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। তখন তার ডান পা টেনে ধরে পায়ের ওপরও পেটাতে থাকেন ওই মাদ্রাসাশিক্ষক। সেই ভিডিও এরইমধ্যে শিশুটির মায়ের কাছেও পোঁছেছে। এই নির্মম দৃশ্য দেখে নিজেকে সামলাতে পারেননি মা। কান্নায় ভেঙে পড়েন মুহূর্তেই।
শুধু মা না, এই নির্যাতনের ভিডিওটি দেখলে যে কেউ ঠিক থাকতে পারবেন না বলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মন্তব্য করছেন অনেকে। ‘ভয়ানক ঘটনা’, ‘অমানসিক নির্যাতন’ মন্তব্যও করছেন তারা। এর তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে ওই শিক্ষকের যথাযথ শাস্তির দাবি জানিয়েছেন। একইসঙ্গে কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যেন এ ধরনের ঘটনা আর না ঘটে, সে বিষয়েও সংশ্লিষ্ট সবাইকে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছেন তারা। মূলত ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়ার পরই শিশু নির্যাতনের এ ঘটনা প্রশাসনের নজরে এসেছে।
শেষপর্যন্ত বুধবার বিকেল ৪টার দিকে ওই শিক্ষক মোহাম্মদ ইয়াহিয়াকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। একইসঙ্গে মামলাও করেছেন শিশুটির বাবা। বিষয়টি সমকালকে নিশ্চিত করেছেন হাটহাজারী মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. তৌহিদ। তিনি জানান, মাদ্রাসাছাত্রকে পেটানোর ঘটনায় অভিযুক্ত শিক্ষককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
এছাড়া হাটহাজারী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রফিকুল ইসলাম বলেন, শিশুটিকে নির্যাতনের অভিযোগে তার বাবা বাদী হয়ে হাটহাজারী থানায় মামলা করেছেন। বৃহস্পতিবার গ্রেপ্তার শিক্ষককে আদালতে হাজির করে তার বিরুদ্ধে রিমান্ড চেয়ে আবেদন করবে পুলিশ।
শিক্ষককে গ্রেপ্তারের আগে এ ঘটনার বিস্তারিত তুলে ধরে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে বিবিসি বাংলা। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ছেলের জন্মদিনে তাকে দেখতে গিয়েছিলেন এক মা। ছেলেটি থাকে চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার এক মাদ্রাসায়। আধ ঘণ্টার মতো ছেলের সঙ্গে সময় কাটিয়ে মা যখন ফিরছেন, আট বছরের শিশুটি তখন মায়ের পিছু পিছু হাঁটতে শুরু করে। কিন্তু মাদ্রাসার এক শিক্ষক শিশুটির ঘাড় ধরে ফিরিয়ে আনেন, তাকে ঠেলতে ঠেলতে ঢোকান এক কক্ষে, তারপর তাকে নৃশংসভাবে পেটাতে শুরু করেন।
হাটহাজারী মারকাযুল কোরআন ইসলামিক একাডেমিতে মঙ্গলবার বিকেলে ঘটে যাওয়া এ শিশু নির্যাতনের ঘটনাটি এখন ইন্টারনেটে ভাইরাল।
রাতেই চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রুহুল আমিন ওই শিশুটিকে মাদ্রাসা থেকে নিয়ে আসেন, আটক করা হয় নির্যাতনকারী শিক্ষককেও। কিন্তু শিশুটির মা-বাবা আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযোগ করতে রাজি না হওয়ায় প্রশাসন একপর্যায়ে ওই শিক্ষককে ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়। তবে অভিযুক্ত শিক্ষকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বুধবারই তাকে বরখাস্ত করেছে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ।
সেরা টিভি/আকিব