স্টাফ রিপোর্টার:
করোনার বিস্তার রোধে আজ বৃহস্পতিবার থেকে সাত দিনের কঠোর লকডাউনে যাচ্ছে দেশ। সর্বাত্মক লকডাউন নিশ্চিত করতে বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তা করতে মাঠে নামছেন সেনা ও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সদস্যরা। গতকাল বুধবার আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, করোনার বিস্তার রোধে আরোপিত বিধিনিষেধ বাস্তবায়নের জন্য ‘ইন এইড টু সিভিল পাওয়ার’- এর আওতায় ১ থেকে ৭ জুলাই পর্যন্ত সারাদেশে সশস্ত্র বাহিনী মোতায়েন থাকবে। জেলা ম্যাজিস্ট্রেটরা স্থানীয়ভাবে সেনা মোতায়েনের বিষয়ে প্রয়োজনীয় সমন্বয় করবেন বলেও বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়। বিধিনিষেধ কার্যকরে বিজিবির পাশাপাশি উপকূলে মোতায়েন থাকবে কোস্টগার্ড।
এর আগে গতকাল মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে লকডাউনের কঠোর বিধিনিষেধ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। এ ছাড়া পুলিশের পক্ষ থেকে হুঁশিয়ারি করে বলা হয়েছে, জরুরি কারণ ছাড়া আজ থেকে ঘরের বাইরে বের হলেই গ্রেপ্তার করা হবে। প্রয়োজনে লকডাউনের প্রথম দিন পাঁচ হাজারও গ্রেপ্তার হতে পারে। বিধিনিষেধ অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে এবার দণ্ডবিধির ২৬৯ ধারা অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে পুলিশ। এ ধারার মামলায় সর্বোচ্চ ছয় মাসের সাজা, জরিমানা বা উভয় দণ্ডই হতে পারে। এ ছাড়া লকডাউনে সীমিত পরিসরে সোমবার থেকে পরবর্তী চার দিন ব্যাংক খোলা থাকবে। লেনদেন হবে সকাল ১০টা থেকে দুপুর দেড়টা পর্যন্ত। এ ছাড়া লকডাউনের মধ্যে খোলা থাকবে তৈরি পোশাক কারখানা। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, হাসপাতাল, ওষুধের দোকান, সংবাদপত্রসহ জরুরি পরিষেবা চালু থাকবে। সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, প্রথমে সাত দিনের কঠোর বিধিনিষেধ থাকলেও তা আরও এক সপ্তাহ বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের গতকালের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা থেকে ৭ জুলাই মধ্যরাত পর্যন্ত কঠোর বিধিনিষেধ বলবৎ থাকবে। এসব বিধিনিষেধ বাস্তবায়নে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সেনাবাহিনীও মাঠে থাকবে। সব সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি অফিস বন্ধ থাকবে। সড়ক, রেল ও নৌপথে গণপরিবহনসহ সব ধরনের যন্ত্রচালিত যানবাহন এবং অভ্যন্তরীণ উড়োজাহাজ চলাচল বন্ধ থাকবে। শপিংমল, মার্কেটসহ সব দোকানপাট এবং পর্যটনকেন্দ্র, রিসোর্ট, কমিউনিটি সেন্টার ও বিনোদন কেন্দ্র বন্ধ থাকবে। জনসমাবেশ হয় এ ধরনের সামাজিক, রাজনৈতিক ও ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান করা যাবে না। অতি জরুরি প্রয়োজন (ওষুধ-নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য ক্রয়, চিকিৎসাসেবা, মৃতদেহ দাফন/সৎকার) ছাড়া কেউ কোনোভাবে ঘরের বাইরে বের হতে পারবে না। নির্দেশ অমান্যকারীর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
যা খোলা থাকবে :আইনশৃঙ্খলা ও জরুরি পরিষেবা (কৃষিপণ্য-উপকরণ-খাদ্যশস্য-খাদ্যদ্রব্য পরিবহন, ত্রাণ বিতরণ, স্ব্বাস্থ্যসেবা, করোনা টিকাদান, রাজস্ব আদায় কার্যাবলি, বিদ্যুৎ-পানি-গ্যাস-জ্বালানি, ফায়ার সার্ভিস, টেলিফোন, ইন্টারনেট, গণমাধ্যম, বেসরকারি নিরাপত্তাব্যবস্থা, ডাকসেবা, ব্যাংক, ফার্মেসি, ফার্মাসিউটিক্যালসসহ জরুরি পণ্য-সেবার সঙ্গে সংশ্নিষ্ট অফিসের কর্মচারী ও যানবাহন প্রাতিষ্ঠানিক পরিচয়পত্র প্রদর্শন সাপেক্ষে যাতায়াত করতে পারবে)। পণ্য পরিবহনে নিয়োজিত ট্রাক, লরি, কাভার্ডভ্যান, কার্গো ভেসেল নিষেধাজ্ঞার আওতাবহির্ভূত থাকবে। বন্দরগুলো (বিমান, সমুদ্র, নৌ, স্থল) ও সংশ্নিষ্ট অফিস নিষেধাজ্ঞার আওতাবহির্ভূত থাকবে। শিল্পকারখানা স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় চালু থাকবে। কাঁচাবাজার-নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত উন্মুক্ত স্থানে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ক্রয়-বিক্রয় করা যাবে। টিকা কার্ড প্রদর্শন সাপেক্ষে টিকা গ্রহণের জন্য যাতায়াত করা যাবে। খাবারের দোকান, হোটেল-রেস্তোরাঁ সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত খাবার বিক্রি (অনলাইনে কেনা বা খাবার নিয়ে যাওয়া) করতে পারবে। আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চালু থাকবে। বিদেশগামী যাত্রীরা তাদের আন্তর্জাতিক ভ্রমণের টিকিট প্রদর্শন করে গাড়িতে যাতায়াত করতে পারবেন।
বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট, বাংলাদেশ ব্যাংক ও ধর্ম মন্ত্রণালয় তাদের সংশ্নিষ্ট প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা জারি করেছে। করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে গত সোমবার থেকেই সারাদেশে গণপরিবহন, শপিংমল, মার্কেটসহ বেশ কিছু কার্যক্রম বন্ধ করা হয়েছে।
সেরা টিভি/আকিব