অনলাইন ডেস্ক:
দিনে দুপুরে এক যুবককে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা। এক দল যুবক যখন সেই যুবককে কোপাচ্ছিল তখন সেখানে দেখা যায় এক তরুণীকে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ওই হত্যাকাণ্ডের ভিডিও ছড়িয়ে পড়ার পর আলোচনায় আসেন সেই তরুণী। ২০১৯ সালে ২৬ জুন দেশজুড়ে তোলপাড় করা ওই হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকায় আদালত যে ছয়জনকে প্রাণদণ্ড দেয় তাদেরই একজন মিন্নি।
বরগুনা শহরে শাহনেওয়াজ রিফাত শরীফ নামে ওই যুবককে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। ওই ঘটনায় প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষী থেকে আসামি হওয়া সেই তরুণী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নি। রিফাতকে হত্যার পর জানা যায় মিন্নি তার স্ত্রী। ওই হত্যাকাণ্ডের অন্যতম পরিকল্পনাকারী। মামলার প্রধান আসামি মো. সাব্বির আহম্মেদ নয়ন ওরফে নয়নবন্ড ২০২০ সালের ২ জুলাই পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হন।
২০২০ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর বরগুনা জেলা ও দায়রা জজ আদালত মিন্নিসহ ৬ জনকে ফাঁসির আদেশ দেন। ফাঁসির আদেশ হওয়ার পর ২০২০ সালের ২৯ অক্টোবর বরগুনা জেলা কারাগার থেকে মিন্নিকে গাজীপুরের কাশিমপুর মহিলা কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়। মিন্নি এই কারাগারের কনডেম সেলে আছেন।
মিন্নির মৃত্যুদণ্ডের আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করা হয়েছে। তবে করেনাভাইরাসের কারণে হাইকোর্ট বন্ধ থাকায় এতদিন আপিল শুনানি করা হয়নি। এখন কোর্ট খোলায় দ্রুত সময়ের মধ্যে এই আপিল শুনানি নিস্পত্তি হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
জানা গেছে, কারাগারের কনডেম সেলে মিন্নি সুস্থ আছেন। কারাবিধি অনুযায়ী মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের সাধারণত কনডেম সেলে রাখা হয়। ওই সেলে সাধারণ একজন আসামি থাকার কথা। তবে কাশিমপুর মহিলা কারাগারে অতিরিক্ত আসামি থাকার কারণে একটি কনডেম সেলে তিনজন কয়েদিকে থাকতে হচ্ছে।
কারাগারের একটি সূত্র বলছে, করোনার কারণে কারাগারে হাজতি ও কয়েদির সঙ্গে দেখা-স্বাক্ষাত করা একেবারেই নিষেধ। তবে প্রতি সপ্তাহে পরিবারের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলার সুযোগ পেয়ে থাকেন হাজতি বা কয়েদিরা। মিন্নিও সেই সুযোগটা নিয়ে থাকেন। পরিবারের সঙ্গে দেখা-স্বাক্ষাত না হলেও প্রতি সপ্তাহে টেলিফোনে কথা বলে থাকেন।
তবে মিন্নিকে বারবার নির্দোষ দাবি করে আসা তার বাবা মো. মোজাম্মেল হোসেন কিশোর জানান, মিন্নির জন্য পরিবারের সবাই মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছে। মেয়ের জন্য চিন্তা করতে করতে মিন্নির মা নানা রোগে আক্রান্ত।
কারাগারে মিন্নির শারীরিক অবস্থা ভালো নেই দাবি করে বাবা মোজাম্মেল হোসেন কিশোর বলেন, ‘মিন্নির বুকে ব্যথা ও মাথা ব্যথাসহ অন্যান্য অনেক উপসর্গ আছে। মিন্নি খেতে পারে না, ঘুমাতে পারে না। সব সময় অসুস্থ থাকে। তাই খুবই দুর্বল হয়ে গেছে। দীর্ঘদিন কারাগারে থাকার কারণে তাকে চেনাই এখন দুষ্কর।’
কিশোর বলেন, ‘আমরা আর ওর ভাই-বোনরা মিন্নির শূন্যতা নিয়ে আছি। পরিবারের সবাই মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছি। পুরো বাড়িতে মিন্নির স্মৃতি খুঁজে ফিরি। মেয়ের শোকে তার মা বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়েছে।’
মিন্নির বাবার ভাষ্য, মিন্নি ওই হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনার সঙ্গে জড়িত ছিল না। এটা কেউ প্রমাণও করতে পারেনি। কুচক্রী মহল মিন্নিকে এই মামলায় জড়িয়ে ফাঁসির দণ্ডে দণ্ডিত করেছে। মিন্নিও আমার কাছে বলেছে, সে সম্পূর্ণ নির্দোষ। উচ্চ আদালতে বেকসুর খালাস পাবে বলেও মনে করেন তিনি।
সেরা টিভি/আকিব