বাংলাদেশি এক তরুণ অস্ট্রেলিয়ার শীর্ষ তরুণ ধনীদের তালিকায় এসেছেন। এটা দারুণ অনুপ্রেরণা। একটি সফটওয়্যার সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ও সহপ্রতিষ্ঠাতা হিসেবে কর্মরত ৩৮ বছর বয়সে আশিক আহমেদ অস্ট্রেলিয়ার শীর্ষ ধনীর তালিকায় অবস্থান করে নিয়েছেন।
তবে আশিক জানান তিনি কখনও টাকার চিন্তা করেননি কিংবা শীর্ষ ধনী হওয়ার কথাও ভাবেননি। তিনি কেবল নিজের কাজটা ঠিকঠাক করে গেছেন। প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠে তিনি একই রকম আগ্রহ নিয়ে নিজের কাজটুকু করে গেছেন। আর এতেই এসেছে এতবড় সাফল্য।
সম্প্রতি সামনে আসে অস্ট্রেলিয়ার শীর্ষ তরুণ ধনীদের তালিকা। এই তালিকাটি প্রকাশ করেছে ব্যবসা ও অর্থবিষয়ক দৈনিক ‘অস্ট্রেলিয়ান ফিনানশিয়াল রিভিউ’। অস্ট্রেলিয়ার শীর্ষ তরুণ ধনীর ওই তালিকায় বাংলাদেশের আশিক আহমেদের নাম দেখে অনেকেই চমকে উঠেন। তিনি ২৫তম অবস্থানে রয়েছেন। আশিক ডেপুটি হিসাব রক্ষণাবেক্ষণকারী একটি সফটওয়্যারের প্রধান নির্বাহী (সিও) ও সহ-প্রতিষ্ঠাতা। বয়স ৩৮ বছর। আশিকের সম্পদের পরিমাণ ১৪৮ মিলিয়ন ডলারের। অর্থাৎ এক হাজার ২৫০ কোটি টাকারও বেশি। আশিক জানিয়েছেন, তিনি ঘণ্টাভিত্তিক বেতনে কাজ করতেন। তখন তিনি অনুধাবন করেন রোস্টারের ক্ষেত্রে হিসাব রাখা বেশ সমস্যা। এ সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে গণিত, বিজ্ঞান ও কর্মক্ষেত্রের অভিজ্ঞতার সমন্বয়ে প্রতিষ্ঠা করে ফেলেন ‘ডেপুটি’ নামের সফটওয়্যারটি। ২০০৮ সালে সফটওয়্যারটি তৈরির পর থেকে তাকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। তালিকায় স্থান পাওয়ার বিষয়ে আশিক বলেন, এটা আমার জন্য দারুণ একটি ব্যাপার। তবে আমি কখনোই শুধু অর্থ উপার্জনের উদ্দেশ্য নিয়ে কাজ করিনি, কখনো করবও না। বরং শুরু থেকেই আমাদের লক্ষ্য ছিল সমস্যার সমাধান করা। উল্লেখ্য, ডেপুটি এমন একটি সফটওয়্যার যা ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীদের কাজের সূচি (রোস্টার) তৈরি, বেতনের হিসাব রাখা এবং সার্বিকভাবে কর্মী ব্যবস্থাপনা অত্যন্ত সহজ করে দেয়। আশিক বলেন, প্রবাসে গেলেই রাতারাতি বড়লোক হয়ে যাওয়া যাবে কিংবা মোটামুটি শীর্ষ ধনী না হলেও মোটা অঙ্কের টাকা কামানো যাবে শুধু এই চিন্তাভাবনা যেন আমরা না রাখি। টাকা অবশ্যই আমাদের জীবনের গুরুত্বপূর্ণ অংশ, কিন্তু শুধু টাকার পেছনে দৌড়ালে আপনি টাকার পেছনেই থাকবেন, সামনে যাওয়া হবে না আর। অস্ট্রেলিয়ায় বাঙালি এই তরুণের জীবনের গল্পটা আর সবার চেয়ে এই দিক থেকেই আলাদা। ১৭ বছর বয়সে দেশটিতে পাড়ি জমান। এখন তার বয়স ৩৮। জীবনের ২০ বছর তিনি একটা দেশে কাটিয়ে দিলেন। দেখেছেন নানা বাঁকবদল। শুরুর দিকের দিনগুলো সহজ ছিল না। ফাস্টফুড চেইন শপে কাজ করতেন। বার্গার, পিজ্জা বিক্রি করার কাজ। ঘণ্টাভিত্তিক এই কাজ করে তার খরচ উঠত। এ সময় তিনি একটি বিশেষ দিক লক্ষ্য করেন। এভাবে যারা ঘণ্টাভিত্তিক পার্টটাইম কাজ করেন, তাদের হিসাব রাখা সময়সাপেক্ষ ও জটিল। আশিক এই সমস্যার সমাধান খুঁজতে থাকলেন মনে মনে। একসময় তৈরি করে ফেলেন ‘ডেপুটি’ নামের সফটওয়্যারটি। এই সাফল্যকে তিনি দেখছেন, কাজের একটা ফলাফল হিসেবে। তার লক্ষ্য কখনো অর্থকেন্দ্রিক ছিল না বলেই তিনি জানান।