সেরা টেক ডেস্ক:
পৃথিবীতেই শুধু ভূমিকম্প হয় না, সৌরজগতের অন্য অংশেও মাটি কেঁপে ওঠে। যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা প্রতিষ্ঠান নাসার বিজ্ঞানীরা দাবি করেন যে গত এক মাসে তারা তিনবার মঙ্গল গ্রহের মাটি কেঁপে ওঠার প্রমাণ পেয়েছেন।
গত ১৮ সেপ্টেম্বর মার্কিন মহাকাশ সংস্থা নাসার ইনসাইট ল্যান্ডার মঙ্গলযানটি মঙ্গলের সমতলে বসে ছিল। এরপরই যানটির ভূমিকম্প নির্দেশক যন্ত্রে (সিসমোমিটার) ধরা পড়ে কম্পন। গত ১৮ সেপ্টেম্বর ইনসাইট ল্যান্ডার মঙ্গল গ্রহে এক হাজার দিন পূর্ণ করেছে। সেদিন ইনসাইট ল্যান্ডার মঙ্গল গ্রহে সবচেয়ে বড় এবং দীর্ঘতম ভূমিকম্পের সাক্ষী হয়েছে। কম্পনের তীব্রতা ছিল ৪.২। এগুলি প্রায় দেড় ঘন্টা স্থায়ী হয়েছিল। এর আগেও এখানে ৪.২ এবং ৪.১ মাত্রার দু’টি ভূমিকম্প প্রত্যক্ষ্য করেছে নাসার মঙ্গল যানটি।
বিজনেস ইনসাইডারের প্রতিবেদনে বলা হয়, অবাক করার বিষয় হল, পৃথিবীর মতো কয়েক মিনিটের কম্পন নয়, মঙ্গলের মাটিতে এই ভূমিকম্প হয়েছে টানা দেড় ঘণ্টা। এর আগে গত ২৫ আগস্ট দু’টি ভূমিকম্পের তীব্রতা ছিল ৪.২ এবং ৪.১ ম্যাগনিটিউড। কিন্তু সেগুলি এতক্ষণ স্থায়ী হয়নি। এর আগে ২০১৯ সালে এই মঙ্গলযান সর্বোচ্চ ৩.৭ মাত্রার ভূমিকম্প পর্যবেক্ষণ করেছিল। ইনসাইট ল্যান্ডারের দায়িত্বে থাকা প্রধান বিজ্ঞানী ব্রুস ব্যানার্ড বলছেন, ‘মনে হচ্ছে, মঙ্গলে ছোট ভূমিকম্পের সংখ্যা অপেক্ষাকৃত কম। তবে সংখ্যার দিক থেকে লাল গ্রহে কম ভূমিকম্প হয়। এটি রহস্যময়।’ মঙ্গল গ্রহে এই বড় ধরনের ভূমিকম্প সেখানকার রহস্য উন্মোচনে বিজ্ঞানীদের সাহায্য করতে পারে। যেভাবে এক্স-রে ও সিএটি স্ক্যান কাজ করে, সেভাবে বিজ্ঞানীরা ভূতরঙ্গ বিশ্লেষণ করে মঙ্গল গ্রহের কোরের গঠন সম্পর্কে জানতে পারবেন।
বিজ্ঞানীরা আশা করছেন, মঙ্গলের অভ্যন্তরে আরও বিস্তারিত তথ্য পেলে গ্রহটির জন্ম কীভাবে হয়েছিল এবং সময়ের সঙ্গে এটি কীভাবে বিকশিত হয়েছিল, সে সম্পর্কে সূত্র মিলতে পারে। অন্য গ্রহে প্রাণের সন্ধানের জন্য সেই জ্ঞান জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। ইনসাইট মঙ্গলযানটি এখন পর্যন্ত সব মিলিয়ে ৭০০–এর বেশি ভূমিকম্প শনাক্ত করেছে। এই তথ্য থেকে মঙ্গলের গঠন সম্পর্কে অনেক তথ্য পাওয়া গিয়েছে। বিজ্ঞানীরা জানতে পেরেছেন, তাদের ধারণার চেয়ে মঙ্গলের ভূত্বক অনেক পাতলা। এটি গ্রহাণুর প্রভাবে হয়েছে। মঙ্গলের ভূত্বক শুষ্ক ও ভঙ্গুর হওয়ায় এখানে পৃথিবীর চেয়ে বেশিক্ষণ ভূমিকম্প হয়। সম্প্রতি বিজ্ঞানীরা এই ভূমিকম্পের তথ্য ব্যবহার করে জানতে পেরেছেন, মঙ্গল গ্রহের গলিত কোর রয়েছে।
নাসার বিজ্ঞানীরা ভূমিকম্পের উৎস কী ছিল এবং ভূমিকম্পের তরঙ্গ কোন দিকে চলেছে সেই নিয়ে এখন গবেষণা করছেন। বিজ্ঞানীদের মতে উৎস হয়তো সারবেরাস ফোসায়ে, যা ইনসাইট ল্যান্ডার থেকে প্রায় ১৬০৯ কিলোমিটার দূরে। গবেষকরা নিশ্চিত যে লাভা অবশ্যই লক্ষ লক্ষ বছর আগে এখানে প্রবাহিত হয়েছিল। এটি ৯৭০০ কিলোমিটার দূরে ভ্যালেস মেরিনারিস থেকে আসতে পারে বলেও সম্ভাবনা রয়েছে। যা একটি বিশাল ক্যানিয়ন সিস্টেম।
সেরা টিভি/আকিব