যে কারনে মিরপুর থেকে নিখোঁজ হয়েছিলেন ৩ স্কুলছাত্রী - Shera TV
  1. [email protected] : sheraint :
  2. [email protected] : theophil :
যে কারনে মিরপুর থেকে নিখোঁজ হয়েছিলেন ৩ স্কুলছাত্রী - Shera TV
শনিবার, ১৯ জুলাই ২০২৫, ১১:১২ অপরাহ্ন

যে কারনে মিরপুর থেকে নিখোঁজ হয়েছিলেন ৩ স্কুলছাত্রী

সেরা টিভি
  • প্রকাশের সময় : বুধবার, ৬ অক্টোবর, ২০২১

স্টাফ রিপোর্টার:

কক্সবাজার থেকে ফেরার পথে উদ্ধার প্রায় এক সপ্তাহ নিখোঁজ থাকা পল্লবীর তিন কলেজছাত্রী উন্নত জীবনের আশায় জাপান যেতে চেয়েছিলেন। তারা জানিয়েছেন, পরিবারের কড়া বিধিনিষেধে এক ঘেয়েমি জীবন থেকে বাঁচতে প্রথমে তারা কক্সবাজার যান। সেখান থেকে নৌপথে জাপানে পাড়ি জমানোর পরিকল্পনা ছিল তাদের। তবে দেশ ছাড়ার আগেই তাদের উদ্ধার করে র‍্যাব। র‌্যাব জানায়, গত ৩০ সেপ্টেম্বর বাসা থেকে নগদ টাকা, স্বর্ণালংকার ও নিজেদের সার্টিফিকেট নিয়ে বেরিয়ে যান স্নেহা আক্তার (১৬), কাজী দিলখুশ জান্নাত নিশা (১৫) ও কানিজ ফাতেমা (১৬) নামের এই তিন কলেজছাত্রী। কেউ যাতে সন্দেহ না করে, সেজন্য কলেজ ড্রেস ও ব্যাগ নিয়ে বের হন তারা।

বুধবার সন্ধ্যায় গণমাধ্যমকে এসব তথ্য জানান র‍্যাব-৪ এর অধিনায়ক (সিও) অতিরিক্ত ডিআইজি মো. মোজাম্মেল হক।

জিজ্ঞাসাবাদে তারা র‌্যাবকে জানান, করোনা মহামারিতে দীর্ঘ দেড় বছর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকাকালীন তারা ঘরে আবদ্ধ ছিলেন। এসময় তারা জাপানি সংস্কৃতির প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়েন। এরই মধ্যে রাজধানীর দিয়াবাড়ীতে ঘুরতে গিয়ে হাফসা চৌধুরী নামে এক নারীর সঙ্গে তাদের সাক্ষাৎ হয়। নানা বিধিনিষেধের বেড়াজালের এক ঘেয়েমি জীবন থেকে বাঁচতে তিন বান্ধবী হাফসার সঙ্গে কক্সবাজার থেকে নৌপথে জাপান যাওয়ার পরিকল্পনা করেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যেন অবস্থান চিহ্নিত করতে না পারে সেজন্য হাফসার পরামর্শে তারা নিজেদের ই-মেইল, ফেসবুক ও ব্যবহৃত মোবাইল গাবতলীতে নষ্ট করে ফেলেন। এরপর বাসে কুমিল্লা ময়নামতি যান। নিজেদের পরিচয় গোপন রাখতে পথিমধ্যে তারা চুল কেটে পশ্চিমা বেশভূষা ধারণ করেন। কুমিল্লার ময়নামতি ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় পৌঁছে তারা কেডস্, পোশাক ও একটি মোবাইল কেনেন। কিন্তু মোবাইল কিনলেও তারা সিম না কিনে ওয়াইফাই ব্যবহার করেন।

এদিকে, গত শনিবার (২ অক্টোবর) রাতে নিখোঁজ শিক্ষার্থী দিলখুশ জান্নাত নিশার বড় বোন অ্যাডভোকেট কাজী রওশন দিল আফরোজ বাদী হয়ে পল্লবী থানায় একটি মামলা করেন। মামলায় তিনি আসামি করেন মো. তরিকুল্লাহ (১৯), মো. রকিবুল্লাহ (২০), জিনিয়া ওরফে টিকটক জিনিয়া রোজ (১৮) ও শরফুদ্দিন আহম্মেদ অয়নকে (১৮)।

এ ঘটনায় বেশ চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়, যার পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশের পাশাপাশি র‍্যাব-৪ এর একটি গোয়েন্দা দল এ বিষয়ে ছায়া তদন্ত শুরু করে। র‍্যাব-৪ এর গোয়েন্দা দল গোপন তথ্যের ভিত্তিতে ও কক্সবাজারে থাকা র‍্যাব-৪ এর টিমের মাধ্যমে জানতে পারে, নিখোঁজ তিন তরুণী মঙ্গলবার (৫ অক্টোবর) রাত আনুমানিক ৯টার দিকে ছদ্মবেশে কক্সবাজার থেকে বাসে ঢাকার উদ্দেশে রাওনা দিয়েছেন। এমন তথ্যের ভিত্তিতে র‍্যাব-৪ এর একটি আভিযানিক দল বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে আবদুল্লাহপুরের বেড়িবাঁধ এলাকা থেকে নিখোঁজদের উদ্ধার করে।

ঘটনার অনুসন্ধান ও ভিকটিমদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ শেষে র‍্যাব জানিয়েছে, তারা তিনজন বান্ধবী। মিরপুরের একটি কলেজে লেখাপড়া করেন। বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম অপসংস্কৃতিতে আসক্ত হয়ে পড়ে। দিন দিন লেখাপড়ার প্রতি তারা আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন। ফলে তাদের পরিবার পড়ালেখার জন্য ও ধর্মীয় বিধি-বিধান মেনে চলার জন্য চাপ দিতো। কড়া বিধিনিষেধের ফলে একটা সময় তারা পরিবারের প্রতি বিরক্ত হয়ে পড়েন।

র‍্যাব আরও জানায়, তাদের নিজেদের পরিবারের নিয়ম-কানুন ভালো লাগতো না এবং এসব সামাজিক ও ধর্মীয় নিয়ম-কানুন তাদের কাছে অত্যাচার মনে হতো। তারা মূলত উচ্চাভিলাষী জীবনযাপনের স্বপ্ন দেখতেন। তারা জাপানি সংস্কৃতির প্রতি আসক্ত হয়ে পড়েন। জাপানি সিনেমা-সিরিয়াল, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান দেখে জাপানি ভাষাও কিছুটা আয়ত্ত করেন। দেশ ছেড়ে জাপান যাওয়ার পরিকল্পনার কারণ হিসেবে জাপানি সংস্কৃতিতে নারী-পুরুষের সমঅধিকার, স্বাধীনতা, দত্তক হওয়ার সুযোগ এবং অন্যান্য ধর্মীয় ও সামাজিক বিধিনিষেধ না থাকার কথা উল্লেখ করেন।

র‌্যাবের ভাষ্য, দুই মাস আগে তিন বান্ধবী তরিকুলের সঙ্গে দিয়াবাড়ী এলাকায় ঘুরতে গিয়ে হাফসা চৌধুরী নামে এক নারীর সঙ্গে তাদের পরিচয় হয়। ওই নারীর সঙ্গে আলোচনার একপর্যায়ে তারা জাপানে যাওয়ার ইচ্ছার কথা জানান। হাফসা চৌধুরী তাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগের জন্য ফেসবুকে বন্ধু হয়। মেসেঞ্জারে নিয়মিত চ্যাটিংয়ে তারা হাফসার সঙ্গে কক্সবাজার রুট দিয়ে নৌপথে জাপান যাওয়ার পরিকল্পনা করেন। সেই উদ্দেশে গত ৩০ সেপ্টেম্বর বাসা থেকে বেরিয়ে যান।

র‍্যাব-৪ এর অধিনায়ক অতিরিক্ত ডিআইজি মোজাম্মেল হক বলেন, ‘বাসা থেকে বেরিয়ে তারা প্রথমে গাবতলী যায়। সেখানে নিজেদের মোবাইল ও ফেসবুক নিষ্ক্রিয় করে। পরে নৌকাযোগে নদী পার হয়ে আমিনবাজার এলাকায় গেলে হাফসার দুজন লোক কালো রঙের নোহা গাড়িতে তাদের অজ্ঞাত একটি জায়গায় নামিয়ে দেয়। সেখান থেকে সিএনজিযোগে তাদের কমলাপুর রেলস্টেশনে গিয়ে ট্রেনে চট্টগ্রামে যাওয়ার পরামর্শ দেয়।’

‘তিন বান্ধবী তাদের কথামতো কমলাপুর রেলস্টেশনে গিয়ে চট্টগ্রামগামী কোনো ট্রেন না পেয়ে বাসে কুমিল্লার ময়নামতি যায়। পথে তারা নিজেদের পরিচয় গোপনের উদ্দেশ্যে ও পশ্চিমা সংস্কৃতির আদলে নিজেদের চুল কেটে ফেলে পশ্চিমা বেশভূষা ধারণ করে। কুমিল্লার ময়নামতি ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় পৌঁছে তারা কেডস, পোশাক ও একটি মোবাইল কেনে। সেখান থেকে তারা পুনরায় বাসযোগে চট্টগ্রাম সিনেমা প্লেস বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে দুটি মোবাইল কিনে বাসে কক্সবাজারে পৌঁছায়’ বলেন র‍্যাব কর্মকর্তা মোজাম্মেল হক।

তিনি আরও বলেন, ‘মোবাইল কিনলেও আত্মগোপনে থাকার জন্য তারা কোনো সিম কেনে না। ১ অক্টোবর কক্সবাজার পৌঁছে তারা ৫ অক্টোবর পর্যন্ত কক্সবাজারের কলাতলির একটি হোটেলে অবস্থান করে ওয়াইফাই সংযোগ ব্যবহার করে। এরপর ২ অক্টোবর কক্সবাজার সি-বিচ এলাকায় বেড়াতে গেলে হাফসার লোক পরিচয়ে আসিফ ও শফিক নামের দুজন তাদের কাছে থাকা স্বর্ণালংকার ও কিছু নগদ টাকা নিয়ে নেয়। এ ঘটনায় তারা আতঙ্কিত হয়ে হোটেলে অবস্থান নেয় ও হোটেলের আশপাশে র‍্যাবের উপস্থিতি টের পেয়ে ৫ অক্টোবর রাত ৯টার দিকে ছদ্মবেশে বাসে কক্সবাজার থেকে রওয়ানা হয়। সেখান থেকে তারা ঢাকার আব্দুল্লাহপুরের বেড়িবাঁধ এলাকায় পৌঁছালে র‍্যাবের একটি দল তাদের উদ্ধার করে র‍্যাব-৪ কার্যালয়ে নিয়ে আসে।’

হাফসা নামের নারীকে শনাক্তের ব্যাপারে র‍্যাব-৪ এর অধিনায়ক বলেন, ‘হাফসার কোনো মোবাইল নম্বর অথবা অন্য তথ্য না থাকায় এখন পর্যন্ত তাকে শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। তবে হাফসা ও তার সহযোগীদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রেখেছে র‍্যাব।’

উদ্ধার তিন ছাত্রীকে পরিবারের উপস্থিতিতে পল্লবী থানায় হস্তান্তরের প্রক্রিয়া চলছে বলেও জানান র‍্যাবের এ কর্মকর্তা।

সেরা টিভি/আকিব

Please Share This Post in Your Social Media

এই ক্যাটাগরীর আরও সংবাদ
© All rights reserved by Shera TV
Developed BY: Shera Digital 360