সিডনি মর্নিং হেরাল্ড/বিবিসি:
সিডিনে বসবাসকারী বাংলাদেশি বংশদ্ভুত নওরোজ রায়েদ আমিনের বয়স তখন ২৪। তিনি বাংলাদেশ আসার সময় অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে গ্রেফতার হন। বাংলাদেশে এসে হামলার পরিকল্পনা ছিলো তার। সেই মামলায় গতকাল অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী এই বাংলাদেশিকে ৫ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার আদালত। অভিযুক্তকে সিডনি বিমানবন্দর থেকে ক্যামোফ্লেজ পোশাক, ট্যাকটিকাল বুট ও বোমা বানানোর নির্দেশনামূলক বইসহ আটক করা হয়। এ বিষয়ে অস্ট্রেলিয়ার সংবাদমাধ্যম সিডনি মর্নিং হেরাল্ডে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, অভিযুক্ত নওরোজ রায়েদ আমিন (৩০) ইসলামিক স্টেটের (আইএস) সক্রিয় সমর্থক ছিলেন। ২০১৫ সালের মে এবং ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে তিনি বাংলাদেশে অবস্থানরত দুজনের সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বাংলাদেশ ভ্রমণে যাওয়ার পরিকল্পনা নিয়ে আলাপ করেন।
রায়েদ ২০১৬ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশে আসার চেষ্টা করেন। তাকে সিডনি বিমানবন্দরে ট্যাকটিকাল বুট জুতা পরা অবস্থায় আটক করা হয়। তল্লাশিতে তার ব্যাগ থেকে কিছু পেনড্রাইভ, ৩ জোড়া ক্যামোফ্লেজ ট্রাউজার, মিক্সড মার্শাল আর্টে ব্যবহারোপযোগী ১ জোড়া গ্লাভস এবং বাংলাদেশ ও অস্ট্রেলিয়ার মুদ্রা পাওয়া যায়। এ ছাড়াও পেনড্রাইভে মানুষকে হত্যা করা ও আত্মঘাতী বোমা হামলার কিছু ভিডিও ছিল।
রায়েদ সীমান্ত রক্ষা বাহিনীর কর্মকর্তাদের কাছে বলেন, এই উপকরণগুলো তিনি তার বাংলাদেশে অবস্থানরত চাচাতো ভাইকে দেখাবেন, যাতে সে আইএসে যোগ দেওয়া থেকে নিবৃত্ত হয়। তবে রায়েদকে সেই ফ্লাইটে উঠতে দেওয়া হয়নি। পরবর্তীতে তার পাসপোর্ট বাতিল করা হয়।
এর প্রায় দুই বছর পর ২০১৮ সালের জুন মাসে তাকে সিডনির দক্ষিণ-পশ্চিম প্রান্তে অবস্থিত ইঙ্গলবার্নের বাসা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাকে জঙ্গি হামলার প্রস্তুতি অথবা পরিকল্পনা করা এবং জঙ্গি কার্যক্রমকে উৎসাহিত করতে পারে এমন উপকরণ স্বেচ্ছায় রপ্তানি করার প্রচেষ্টার অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়।
নিউ সাউথ ওয়েলসের সুপ্রিম কোর্টের বিচারক পিটার গারলিং জানান, রায়েদ স্বীকার করেছেন যে, তিনি দেশের বাইরে এমন কাউকে খুঁজছিলেন যিনি তাকে বিস্ফোরক কীভাবে ব্যবহার করতে হয়, তা শেখাবেন। তবে রায়েদ দাবি করেন, তিনি অস্ট্রেলিয়া নয়, বাংলাদেশে বিস্ফোরক ব্যবহার করতে চেয়েছিলেন।
বাদী ও বিবাদী উভয় পক্ষের তথ্যপ্রমাণ আমলে নিয়ে বিচারপতি গারলিং বলেন, রায়েদ একজন অপেক্ষাকৃত কমবয়সী যুবক। অপরাধ সংগঠনের সময় তার বয়স ছিল মাত্র ২৪ বছর।
গারলিং আরও জানান, রায়েদ পরবর্তীতে আইএসের এর জীবনদর্শন প্রত্যাখ্যান করেছেন এবং আদালতকে জানিয়েছেন যে, তার আগের সহিংস দৃষ্টিভঙ্গির পেছনে তার ‘অপরিপক্ব ও বাস্তবতা থেকে বিচ্ছিন্ন ব্যক্তিত্ব’ দায়ী।
গারলিং তার রায়ের শেষ অংশে জানান, রায়েদ এখন তুলনামূলকভাবে অনেক পরিপক্ব। বিমানবন্দর থেকে তাকে আটক করার পর তিনি আর কোনো অপরাধমূলক কাজের সঙ্গে যুক্ত হননি।
তিনি রায়েদকে ৫ বছর ৪ মাসের কারাদণ্ড দেন। রায়ে উল্লেখ করেন, তার অপরাধ ‘গুরুতর’। কিন্তু তিনি বাংলাদেশে হামলা চালানোর জন্য প্রকৃতপক্ষে কোনো উদ্যোগ নেননি।
বিচারক তার রায়ে জানান, ‘রায়েদ কোনো অস্ত্র জোগাড় করেননি অথবা অস্ত্রের উৎস খোঁজেননি। যা তাকে আইএস বা অন্য কোনো সংগঠনের মাধ্যমে বাংলাদেশে কোনো ধরণের হিংসাত্মক কার্যক্রমের উপযুক্ত অংশগ্রহণকারী হিসেবে চিহ্নিত করতে পারে।’
গারলিং বলেন, ‘আমার মতে তাকে পুনর্বাসন করার যথোপযুক্ত সম্ভাবনা রয়েছে। তিনি তার মধ্যে থাকা জঙ্গি মতাদর্শকে সম্পূর্ণ ত্যাগ করেছেন কিংবা ত্যাগ করার পথে আছেন।’
সেরা টিভি/আকিব