১৯৯১ সালে এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে নিহত হয়েছিলেন শহীদ নূর হোসেন। গণতন্ত্রের জন্য রাজপথে জীবন দেয়া সেই নূর হোসেন সম্পর্কে জাতীয় পার্টির মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গার বক্তব্য নিয়ে সংসদে কড়া সমালোচনা করেছেন তার নিজ দলেরই প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ। তিনি বলেন, বান্দরকে লাই দিলে গাছের মাথায় ওঠে। আমি যতদিন রাজনীতি করি ততদিন ওর (মসিউর রহমান রাঙ্গা) বয়সও না। ও এই ধৃষ্টতা দেখায় কিভাবে, এই দুঃসাহস কিভাবে পেল? এই সংসদই তাকে লাই দিয়েছে।
মঙ্গলবার (১২ নভেম্বর) রাতে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সংসদ অধিবেশনে পয়েন্ট অব অর্ডারে দাঁড়িয়ে আওয়ামী লীগের সিনিয়র সংসদ সদস্যরা মশিউর রহমান রাঙ্গাকে সংসদে এসে ক্ষমা চাওয়ার দাবি জানান এবং জাতীয় পার্টির অবস্থান জানতে চান।
এরপর সংসদে ফ্লোর নিয়ে মসিউর রহমান রাঙ্গার বক্তব্যের বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ। এ সময় জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদেরও সংসদে উপস্থিত ছিলেন।
কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, সংসদে বিরোধী দলের চিফ হুইপ মশিউর রহমান রাঙ্গা সম্পর্কে বক্তব্য হয়েছে। তার বক্তব্য আমি শুনেছি, আমি সেদিন সভায় ছিলাম না। পরে এটা ভাইরাল হয়ে গেছে। এই বক্তব্য জাতীয় পার্টির বক্তব্য না। এটা কোনো রাজনৈতিক বক্তব্য হতে পারে না। এটা রাঙ্গার নিজস্ব বক্তব্য হতে পারে। এই বক্তব্যের জন্য জাতীয় পার্টি লজ্জিত। আমরা দুঃখিত এবং অপমানিত অনুভব করছি।
তিনি বলেন, নূর হোসেন ’৯০-তে তার জীবন দিয়ে গেছেন। যে যুবক গণতন্ত্রের জন্য জীবন দিতে পারেন, স্বাধীনতার জন্য আন্দোলন সংগ্রাম করতে পারেন সেই সাহসী যুবকের প্রতি আমাদের সম্পূর্ণ শ্রদ্ধা আছে। আমরা কখনো এই ধরনের ধৃষ্টতা দেখাই নাই। এই ধরনের অপমানজনক কথা কখনো বলি নাই। এটা কোনো রাজনৈতিক দলের নেতার বক্তব্য হতে পারে না।
তিনি বলেন, আমি যতদিন রাজনীতি করি ততদিন ওর বয়সও না। সে করেছে যুবদল। কোথায় আন্দোলন করেছে? কোথায় সংগ্রাম করেছে? শুধু তাই না প্রধানমন্ত্রী সম্পর্কেও সে কথা বলেছে। সে গণতন্ত্রের ছবক দেয়। যে লেখাপড়া করে নাই, রাতারাতি কাগজের মালা গলায় দিয়ে পরিবহনে নৈরাজ্য সৃষ্টি করে হঠাৎ করে এখানে এসে বাড়ি-গাড়ির মালিক হয়ে গেছে। সে এ ধরনের ধৃষ্টতা দেখায়। আর তার জবাব দিতে আজ সংসদে দাঁড়াতে হয়। আজকে খুব লজ্জিত। এটা সম্পূর্ণ আমাদের ঘাঁড়ে এসে পড়েছে। আমরা দুঃখিত। নূর হোসেনের গায়ে লেখাটা ছিল একটা পোস্টার। সারা বিশ্বের লোক দেখেছে। এটা ছিল তার মনের কথা।তিনি আরো বলেন, আমরা আওয়ামী লীগের সমর্থন নিয়ে নির্বাচন করেছি। আমাকে যদি প্রধানমন্ত্রী সেদিন পরিচয় করিয়ে না দিতেন, আমার জন্য যদি ভোট না চাইতেন আমি নির্বাচিত হয়ে এই সংসদে আসতে পারতাম না। মানুষ এত অকৃতজ্ঞ হয় কিভাবে? রাঙ্গা সাহেব পাস করেছেন, মনে করছেন তার নিজের জোরে। পিছে যদি আওয়ামী লীগ না থাকত, ওই রংপুরে নামতেও পারতো না। কার কত ভোট আছে আমাদের জানা আছে। আমি দুঃখ প্রকাশ করছি। প্রত্যেকটি মানুষ মনে করে যতদিন শেখ হাসিনা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আছেন ততদিন এই দেশে গণতন্ত্র টিকে থাকবে। ততদিন এই দেশের মানুষ শান্তিতে থাকবে এবং এই দেশের উন্নয়ন অব্যাহত থাকবে।