কৃষ্ণবর্ণের ছেলের নাম রাখা হলো কাজল। দুরন্ত, চঞ্চল কাজলের ছেলেবেলায় অনেকটা সময় কাটে নানা বাড়ি মোহনগঞ্জে। এখান থেকেই জীবনের অর্থ খুঁজে পেয়েছিলেন গল্পের জাদুকর হুমায়ূন। চাঁদনী রাতের মায়া, ময়ূরাক্ষীর কলতান বা বৃষ্টির ধ্বনি সবই ধরা দেয় সেদিনের বাংলা সাহিত্যের অন্যতম রুপকারের লেখনীতে। হিমুর উদভ্রান্ত জীবন, রুপার নির্মোহ ভালোবাসা, রহস্যাবৃত মিসির আলী কিংবা শুভ্রর সরলতা খুঁজে পেয়েছেন মামা শেখ ফজলুল করিমের কাছে।
গল্প, উপন্যাসেও হাতড়ে বেড়াতেন শৈশবের আইসক্রীম, বাবার কেনা ঘোড়া ও বাল্যবন্ধু শংকরের মায়ের দেয়া ফুটবল। শ্রাবণ মেঘের দিন পেরিয়ে এইসব দিনরাত্রিতে যখন কোথাও কেউ নেই তখন হুমায়ূন আহমেদ লেখেন আমার ছেলাবেলা। জন্ম, বেড়ে উঠা থেকে শুরু করে ব্যক্তি জীবনের নানান ঘটনা তুলে আনেন সুনিপুণ লেখনীতে।
হুমায়ূন আহমেদ তার দীর্ঘ চার দশকের সাহিত্যজীবনে বহু পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। তার মধ্যে একুশে পদক, বাংলা একাডেমি পুরস্কার, হুমায়ূন কাদির স্মৃতি পুরস্কার, লেখক শিবির পুরস্কার, মাইকেল মধুসূদন দত্ত পুরস্কার, জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ও বাচসাস পুরস্কার উল্লেখযোগ্য।
তাঁর অন্যতম উপন্যাস হলো নন্দিত নরকে, মধ্যাহ্ন, জোছনা ও জননীর গল্প, মাতাল হাওয়া ইত্যাদি। তাঁর নির্মিত কয়েকটি চলচ্চিত্র হলো দুই দুয়ারী, শ্রাবণ মেঘের দিন, ঘেঁটুপুত্র কমলা (সর্বশেষ) ইত্যাদি।
তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক হিসাবে দীর্ঘকাল কর্মরত ছিলেন। লেখালিখি এবং চলচ্চিত্র নির্মাণের স্বার্থে তিনি অধ্যাপনা ছেড়ে দেন। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পাকিস্তানী সেনাবাহিনী তাঁকে আটক করে এবং নির্যাতনের পর হত্যার জন্য গুলি চালায়। কিন্তু তিনি অলৌকিকভাবে বেঁচে যান।
২০১২ সালের ১৯শে জুলাই তিনি আমাদের ছেড়ে যান। মরণব্যাধি ক্যানসারের চিকিৎসায় যুক্তরাষ্ট্রে যাবার পর সেখানেই তিনি মারা যান। মাত্র ৬৪ বছর বয়সেই তিনি চলে যান না ফেরার দেশে। ২৪শে জুলাই নুহাশপল্লীর লিচুতলায় চিরনিদ্রায় শায়িত করা হয় এই কিংবদন্তিকে।
পৃথিবীতে আজো ফিনিক ফোটা জোছনা আসে। শ্রাবণ মাসে টিনের চালে বৃষ্টির সেতার বাজে। কিন্ত সেই অলৌকিক সঙ্গীত শোনার জন্য নেই একজন হুমায়ূন আহমেদ।
সেরা টিভি/আকিব