বিশেষ প্রতিবেদক:
ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির প্রার্থী কারা হচ্ছেন- তা নিয়েই রাজনৈতিক মহলে চলছে আলোচনা। দুই সিটিতে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীক পেতে দলীয় মনোনয়ন সংগ্রহ করেছেন ২০ জন। বিএনপির ধানের শীষ পেতে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন তিনজন। আওয়ামী লীগ প্রার্থীদের আজ ভাগ্য নির্ধারণ হবে দলের মনোনয়ন বোর্ডের সভায়। সন্ধ্যায় গণভবনে এ সভা হবে। এদিকে ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে বিএনপির মনোনয়ন পেতে একটিমাত্র আবেদন জমা পড়েছে। তাই দক্ষিণ সিটির বিএনপির প্রার্থী প্রায় চূড়ান্ত। তবে ঢাকা উত্তর সিটিতে একাধিক আবেদন পড়ায় সেখানে দলের প্রার্থী নির্ধারণ করা হবে আজ। সন্ধ্যায় দলের পার্লামেন্টারি বোর্ডের বৈঠকে এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে। এ ছাড়া এ দুই সিটিতে প্রার্থী দিচ্ছে জাতীয় পার্টিও। ৩০ ডিসেম্বর দলটি এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে। দুই সিটিতে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশও। প্রার্থীও চূড়ান্ত করেছে সংগঠনটি। দক্ষিণ সিটিতে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হতে দলীয় কার্যালয়ে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন বর্তমান মেয়র সাঈদ খোকন, আওয়ামী লীগের আইনবিষয়ক সম্পাদক নজিবুল্লাহ হিরু, ঢাকা-১০ আসনের এমপি ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস, ঢাকা-৭ আসনের এমপি হাজী মোহাম্মদ সেলিম, ঢাকা মহানগরী আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি হাজী আবুল হাসনাতসহ আটজন। উত্তরের প্রার্থী হিসেবে দলীয় মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন বর্তমান মেয়র আতিকুল ইসলামসহ ১২ জন। অন্যদিকে বিএনপির প্রার্থী হতে দলীয় কার্যালয়ে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন দক্ষিণে মেয়র পদে প্রকৌশলী ইশরাক হোসেন এবং উত্তরে তাবিথ আউয়াল ও ড. আসাদুজ্জামান রিপন।
আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী ২০ জন : ঢাকার দুই সিটিতে মেয়র পদে প্রার্থী হতে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন ফরম নিয়েছেন ২০ জন। এর মধ্যে উত্তরে ১২ ও দক্ষিণে আটজন। গতকাল মনোনয়নপ্রত্যাশীর কেউ কেউ উপস্থিত হয়ে এবং কেউ কেউ প্রতিনিধির মাধ্যমে এসব ফরম ধানমন্ডিতে দলীয় সভানেত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয়ে জমা দিয়েছেন। এ ছাড়া দুই সিটিতে কাউন্সিলর পদে দলীয় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন মোট ১ হাজার ২৩৪ জন।
ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটির প্রার্থীদের দলীয় মনোনয়ন ফরম কেনা ও জমাদানের শেষ দিন ছিল গতকাল। দক্ষিণে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থীরা হলেন- সাঈদ খোকন, অ্যাডভোকেট নজিবুল্লাহ হিরু, হাজী মোহাম্মদ সেলিম, শেখ ফজলে নূর তাপস, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলের সাবেক মহাসচিব এম এ রশিদ, শেখ রাসেল জাতীয় শিশু-কিশোর পরিষদ ঢাকা মহানগরী শাখার উপদেষ্টা মো. নাজমুল হক, বঙ্গবন্ধু পরিষদের সভাপতি আশরাফ হোসেন সিদ্দিকী ও ঢাকা মহানগরী আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি হাজী আবুল হাসনাত।
উত্তরে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থীরা হলেন- আতিকুল ইসলাম, শহীদুল্লাহ ওসমানী, ভাসানটেক থানা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি অবসরপ্রাপ্ত মেজর মোহাম্মদ ইয়াদ আলী ফকির, ১৫ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সদস্য ও শহীদ পরিবারের সন্তান অধ্যাপক মো. জামান ভূঁইয়া, সামাজিক সংগঠন ‘একটি পরিকল্পিত নগরী’র চেয়ারম্যান কুত্বুউদ্দিন নান্নু, যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আলাউদ্দিন মোহাম্মদ, আওয়ামী লীগের সাবেক ধর্মবিষয়ক উপকমিটির সদস্য জেরিন সুলতানা কান্তা, যুবলীগ নেতা খায়রুল মজিদ, যুব মহিলা লীগ নেত্রী রেহেনা ফরহাদ আইভি ও আওয়ামী লীগের গ্রিস শাখার সহসভাপতি মোহাম্মদ ইদ্রিস আলী মোল্লা, হেলেনা জাহাঙ্গীর ও আদম তমিজী হক।
গতকাল ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয়ে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্যে মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের তাদের কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে মনোনয়ন ফরম কিনতে ও তা জমা দিতে দেখা যায়। দুপুরে ঢাকা দক্ষিণে বর্তমান মেয়র সাঈদ খোকন মনোনয়নপত্র জমা দিতে আসেন। বেলা সাড়ে ১১টায় দলীয় মনোনয়ন পাবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করে সাঈদ খোকন সাংবাদিকদের বলেন, ‘বাবার অবর্তমানে আমার অভিভাবক প্রিয় নেত্রী শেখ হাসিনা। বৃহস্পতিবার দলীয় মনোনয়ন ফরম তুলে প্রধানমন্ত্রীকে সালাম করতে গণভবনে গিয়েছিলাম।’
আর গতকাল বিকাল ৩টার পর ঢাকা উত্তরের মেয়র আতিকুল ইসলাম তাঁর কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে মনোনয়ন ফরম জমা দিতে আসেন। আতিকুল ইসলাম এ সময় সাংবাদিকদের বলেন, ‘নয় মাস দায়িত্ব পালনকালে কিছু কর্মসূচি ঘোষণা করেছি। উত্তর সিটির উন্নয়নে বেশ কিছু কাজ হাতে নিয়েছি। এর মধ্যে অনেকটিই অসমাপ্ত। এসব কাজ সম্পন্ন করতে চাই।’
বিকালে ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপসের পক্ষে তাঁর মনোনয়নপত্র জমা দেন ধানমন্ডি, মোহাম্মদপুর, হাজারীবাগ ও নিউমার্কেট থানার নেতারা। আর হাজী মোহাম্মদ সেলিম নিজেই ধানমন্ডি কার্যালয়ে এসে গতকাল মনোনয়নপত্র জমা দেন। অ্যাডভোকেট নজিবুল্লাহ হিরু বিকালে মনোনয়নপত্র জমা দেন। এ ছাড়া মেয়র পদে এদিন আরও মনোনয়নপত্র জমা দেন হেলেনা জাহাঙ্গীরসহ অন্য প্রার্থীরা। তবে আওয়ামী লীগ নেতারা জানান, স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ডের সভায় দলীয় নেত্রী সিদ্ধান্ত নেবেন শেষ পর্যন্ত চূড়ান্ত মনোনয়ন কারা পাবেন।
দক্ষিণে বিএনপির প্রার্থী ইশরাক, উত্তরের সিদ্ধান্ত আজ : ঢাকার দুই সিটি নির্বাচনে মেয়র পদে বিএনপির মনোনয়ন পেতে দলের তিন নেতা আবেদনপত্র জমা দিয়েছেন। এর মধ্যে দক্ষিণে একটিমাত্র আবেদন জমা পড়ায় সেখানকার প্রার্থী প্রায় চূড়ান্ত। তিনি হলেন অখ ঢাকা সিটির সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার ছেলে ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেন। তবে ঢাকা উত্তর সিটিতে একাধিক আবেদন পড়ায় সেখানে দলের প্রার্থী নির্ধারণ করা হবে আজ। সন্ধ্যার পর দলের পার্লামেন্টারি বোর্ডের বৈঠকে এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে। ঢাকা উত্তর সিটিতে দলের বিশেষ সম্পাদক ও চেয়ারপারসনের আন্তর্জাতিকবিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসাদুজ্জামান রিপন এবং দলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য সাবেক মেয়র প্রার্থী তাবিথ আউয়াল প্রার্থী। ফলে পার্লামেন্টারি বোর্ডের এ বৈঠক ডাকা হয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পার্লামেন্টারি বোর্ডের একাধিক সদস্য জানান, শেষ পর্যন্ত তাবিথ আউয়ালেরই দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
গতকাল রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলের সিনিয়র যুগ্মমহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদের হাতে মনোনয়নের আবেদন ফরম জমা দেন তাঁরা। আজ সন্ধ্যায় গুলশানে চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে অনুষ্ঠেয় দলের পার্লামেন্টারি বোর্ডের বৈঠকে প্রার্থী চূড়ান্ত করা হবে। এর আগে বৃহস্পতিবার ব্যাপক শোডাউন করে তাঁরা দলীয় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেন। দলের মনোনয়ন পেলে শেষ সময় পর্যন্ত মাঠে থাকার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন বিএনপির সম্ভাব্য দুই মেয়র প্রার্থী তাবিথ আউয়াল ও ইশরাক হোসেন। গতকাল নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে মনোনয়ন ফরম জমা দেওয়ার পর তাঁরা সাংবাদিকদের কাছে এ প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। কিন্তু ড. আসাদুজ্জামান রিপন বলেন, ‘অবাধ-সুষ্ঠু নয়, নির্ঘাৎ একটি প্রহসনের নির্বাচন হবে এটি। কাজেই এ নির্বাচনে অংশ নিয়ে লাভ নেই। এ নির্বাচন ছেড়ে চলে আসা উচিত বিএনপির।’
ঢাকা উত্তর সিটিতে মনোনয়নপ্রত্যাশী তাবিথ আউয়াল বলেন, ‘আমি প্রকাশ্যে বলতে চাচ্ছি, নির্বাচন আমাদের, জনমত আমাদের। নির্বাচন থেকে আমরা সরবই না। আমরা শেষ পর্যন্ত, শেষের পরেও মাঠে থেকে লড়াই করে নির্বাচনের ফল ছিনিয়ে আনব এবং দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে মুক্তি করার পরই আমরা মাঠ থেকে সরব।’
দক্ষিণের মনোনয়নপ্রত্যাশী ইশরাক হোসেন দলীয় নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে বলেন, ‘বারবার গণতন্ত্রের ওপর আঘাত এসেছে এবং গণতান্ত্রিক লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের সূচনা হয়েছিল। ইনশা আল্লাহ গণতন্ত্র ফিরে আসবে আমাদের মাঝে।’
এর আগে বিকাল ৪টার দিকে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিএনপির সিনিয়র যুগ্মমহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদের কাছে ১ লাখ টাকা জামানতসহ মনোনয়নপত্র জমা দেন প্রার্থীরা। অন্যদিকে বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমানের নেতৃত্বে সংরক্ষিত (মহিলা) কাউন্সিলর, দলের ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহানের নেতৃত্বে উত্তর এবং দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আবদুস সালামের নেতৃত্বে দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে কাউন্সিলর মনোনয়নপ্রত্যাশীদের বাছাইয়ের জন্য তিনটি কমিটি গঠিত হয়েছে। এ কমিটিগুলো দুই সিটির নির্বাচনে দলের ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থী চূড়ান্ত করবেন। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের জন্য কাউন্সিল পদে ২২০, সংরক্ষিত (মহিলা) কাউন্সিলর পদে ৬০ এবং উত্তর সিটিতে কাউন্সিলর পদে ১৬২ ও সংরক্ষিত (মহিলা) কাউন্সিল পদে ৩৪টি মনোনয়ন ফরম জমা পড়েছে।
সেরা নিউজ/আকিব