আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
চীনে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা হু হু করে বাড়ছে। এক দিনের ব্যবধানে মৃতের সংখ্যা দ্বিগুণ বেড়ে ২৬ থেকে প্রায় অর্ধশতে দাঁড়িয়েছে। দেশটির সীমান্ত ছাড়িয়ে এশিয়ার অন্য দেশ, ইউরোপ, অস্ট্রেলিয়া ও আমেরিকা মহাদেশের ১২টি দেশে এরই মধ্যে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে।
চীনেই আক্রান্তের সংখ্যা এক হাজার দুইশ ছাড়িয়ে গেছে। সব দেশ মিলে এ সংখ্যা এক হাজার ৩০০ ছাড়িয়েছে। তবে চীন বাদে অন্য দেশে শনাক্ত রোগী কম হওয়ায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) এখন বিশ্বজুড়ে জরুরি অবস্থা জারি করছে না। প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে বিভিন্ন দেশ যার যার মতো উদ্যোগ নিয়েছে। চীন সারাদেশে আক্রান্ত রোগী শনাক্তে বাস, ট্রেনে তল্লাশি শুরু করেছে। আক্রান্ত কাউকে পেলে সঙ্গে সঙ্গে আলাদা করে ফেলা হচ্ছে। চীনজুড়ে সাড়ে ৪০০ সামরিক মেডিক্যাল কর্মী নিয়োগ করা হয়েছে।
এদিকে চীনের স্বায়ত্তশাসিত গোলযোগপূর্ণ এলাকা হংকং জারি করেছে জরুরি অবস্থা। হুবেই প্রদেশের উহানে সিনহুয়া হাসপাতালের ৬২ বছর বয়সী চিকিৎসক লিয়াং উডংয়ের মৃত্যুর খবর জানিয়ে টুইট করেছে চীনের গ্লোবাল টেলিভিশন নেটওয়ার্ক। উহান শহর থেকেই এই ভাইরাস ছড়ানো শুরু হওয়ায় এ শহরের সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন রয়েছে। ফলে সেখানে ৫০০ জনেরও বেশি বাংলাদেশি আটকা পড়েছেন। খবর এএফপি, রয়টার্স ও বিবিসির
উহান ছাড়াও চীনের আরও ১২টি শহরে সব ধরনের গণপরিবহন বন্ধ রাখা হয়েছে। এএফপি জানায়, কেবল চীনের ১৩ শহরেই আক্রান্তের সংখ্যা ১২৮৭ জন। সংক্রমণ প্রতিরোধে যে ৪৫০ সামরিক মেডিকেল কর্মী নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, তারা এর আগে সার্স ও ইবোলা প্রতিরোধের কাজে অভিজ্ঞ। সব মিলে চীন করোনাভাইরাস মোকাবিলায় সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তাদের পদক্ষেপের প্রশংসা করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। যুক্তরাষ্ট্রে দ্বিতীয় করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সন্ধান পাওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই টুইটারে তিনি বলেন, ‘করোনাভাইরাস প্রতিরোধে চীন কঠিন পরিশ্রম করছে। যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে আমি চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।’
চীনের বাইরে থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, সিঙ্গাপুর, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, তাইওয়ান, নেপাল, ফ্রান্স, মালয়েশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র ও অস্ট্রেলিয়া- এই ১১ দেশে আক্রান্ত ব্যক্তির সন্ধান পাওয়া গেছে। ভারতে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত সন্দেহে সাত ব্যক্তিকে আলাদা করে পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও চিকিৎসা করা হচ্ছে
উহান থেকে ১৯ জানুয়ারি আসা এক চীনা নাগরিকের শরীরে করোনাভাইরাসের উপস্থিতি পাওয়ার কথা নিশ্চিত করেছে অস্ট্রেলিয়া। দেশটির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রেন্ডন মারফি বলেছেন, ‘চীনের বাইরেও যে পরিমাণ আক্রান্তের খোঁজ মিলছে, আর উহান থেকে অস্ট্রেলিয়ায় আসা মানুষের সংখ্যা বিবেচনায় এটা অসম্ভব নয় যে, আমরা এ ধরনের আরও কিছু আক্রান্ত ব্যক্তির খোঁজ পাব।’
শুক্রবার সন্ধ্যায় ফরাসি কর্তৃপক্ষ ইউরোপে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত প্রথম ব্যক্তি শনাক্ত হওয়ার খবর নিশ্চিত করে। যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন জানিয়েছে, তারা প্রাণঘাতী এ ভাইরাসে আক্রান্ত সন্দেহে ৬৩ জনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালাচ্ছেন। এর মধ্যে দুই ব্যক্তির শরীরে ভাইরাসটির উপস্থিতি নিশ্চিত হওয়া গেছে। আক্রান্ত দুই ব্যক্তিই উহান থেকে যুক্তরাষ্ট্রে এসেছিলেন বলে জানান তারা।
এদিকে চীনে পড়তে যাওয়া এক শিক্ষার্থীর দেহে করোনাভাইরাস শনাক্তের কথা জানিয়েছে নেপাল। শুক্রবার এক ঘোষণায় দেশটির স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ একথা জানায়।
শনিবার সংবাদ সম্মেলনে মালয়েশীয় কর্তৃপক্ষও তিন নাগরিকের শরীরে ভাইরাসটির উপস্থিতি শনাক্তের তথ্য দেয় বলে স্ট্রেইট টাইমস জানিয়েছে। জাপান জানিয়েছে, তারা শনিবার করোনাভাইরাসে আক্রান্ত তৃতীয় রোগীকে শনাক্ত করেছে।
গত সপ্তাহে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) নতুন এ করোনাভাইরাসের কারণে চীনে জরুরি পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে বলে ঘোষণা করে। তবে এখনই আন্তর্জাতিকভাবে উদ্বেগজনক পরিস্থিতি সৃষ্টি করেনি বলে জানিয়েছিল তারা। শনিবার তারা বলেছেন, আন্তর্জাতিকভাবে জরুরি অবস্থা ঘোষণার আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে না।
চীনা নববর্ষের ১৫ দিনব্যাপী ছুটির মধ্যে দেশটির কোটি কোটি মানুষ একপ্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে যাতায়াত করলে ভাইরাসটি ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। বেইজিংয়ে উৎসব ও মন্দিরের মধ্যে মেলা নিষিদ্ধ এবং চলচ্চিত্র মুক্তি স্থগিত করা হয়েছে। শনিবার থেকে পরবর্তী নির্দেশ না পাওয়া পর্যন্ত বন্ধ হয়ে গেছে সাংহাইয়ের ডিজনিল্যান্ডও।
হংকংয়ের প্রশাসক ক্যারি লাম শনিবার জরুরি অবস্থা জারি করেছেন। সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপে তিনি বলেন, হংকংয়ে যাতে এই ভাইরাস ঢুকতে কিংবা ছড়াতে না পারে, আমরা জরুরি ভিত্তিতে তা নিয়ে কাজ শুরু করেছি।
সেরা নিউজ/আকিব