অনলাইন ডেস্ক:
অব্যবস্থাপনা-প্রতারণার আখড়ায় পরিণত হয়েছে বিদেশি মালিকানাধীন স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা অমান্য করে একাধিক গ্রাহকের কাছ থেকে গৃহ ঋণে অতিরিক্ত চার্জ আদায় করে তোপের মুখে পড়েছে ব্যাংকটি। কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ বিষয়ে ব্যাখ্যা চাইলে উপযুক্ত বক্তব্য প্রদান করতে পারেনি ব্যাংকটি।
অবশেষে গ্রাহকের ঋণ হিসাবে সুদ বাবদ অযৌক্তিকভাবে আদায়কৃত অতিরিক্ত অর্থ ৩০ জানুয়ারির মধ্যে গ্রাহকগণের হিসাবে ফেরত প্রদান করতে নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে জানা যায়, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সার্কুলার অমান্য করে ব্যাংকটি গৃহ ঋণে গ্রাহকদের সঙ্গে প্রতারণা করে আসছে। দীর্ঘদিন ধরে ব্যাংকটি বিতরণকৃত ঋণসমূহে একবারের পরিবর্তে বছরে একাধিকবার ঋণের সুদহার বৃদ্ধি করেছে। একাধিক গ্রাহকের অভিযোগের ভিত্তিতে সুদহারের অস্বাভাবিক বৃদ্ধির অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে।
ব্যাংকটি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিআরপিডি সার্কুলার লঙ্ঘণ করে একাধিক গ্রাহকদের ঋণ হিসাবে হঠাৎ সুদ বৃদ্ধির হার দশমিক ৫০ শতাংশের অধিক বৃদ্ধি করে। যা বিআরপিডি সার্কুলার নং ০৫/১৮-এর নির্দেশনা বিরোধী।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের এক গ্রাহক বলেন,স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক শুধু আমার সঙ্গেই নয় একাধিক গ্রাহকের সুদ হার বৃদ্ধি করেছে। গৃহঋণের সুদহার বৃদ্ধির সময় আমাকে নোটিস প্রদান না করেই সুদহার বৃদ্ধি করেছে।
তিনি আরও বলেন, আমিসহ আরও অসংখ্য গ্রাহকের কাছ থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনাকে অমান্য করে ব্যাংকটি অধিক হারে অতিরিক্ত সুদ আদায় করে চলেছে। তাই এ বিষয়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবে আমি বাংলাদেশ ব্যাংকে অবহিত করেছি।
অন্যদিকে অস্বাভাবিক ঋণের সুদহার বৃদ্ধির অভিযোগে ব্যাংকের সিইও বরাবর কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে পাঠানো এক চিঠিতে বলা হয়, স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক গৃহ ঋণ স্কিমে অতিরিক্ত সুদ আদায়ের বিষয়ে ব্যাংকটির কাছে ব্যাখা চাওয়া হলে উপযুক্ত ব্যাখ্যা দিতে পারেনি ব্যাংকটি। তাই ব্যাংকটির গৃহ নির্মাণ ঋণ এবং সাদিক (ইসলামী গৃহ নির্মাণ ঋণ) গৃহ নির্মাণ ঋণের গ্রাহকদের সুদ হিসাবায়নে প্রয়োজনীয় সংশোধন পূর্বক সুদ বাবদ আদায়কৃত অতিরিক্ত অর্থ ৩০ জানুয়ারি-২০২০-এর মধ্যে গ্রাহকদের হিসাবে ফেরত প্রদান করা এবং এ সংক্রান্ত বিশদ বিবরণী কেন্দ্রীয় ব্যাংককে পাঠাতে বলা হয়েছে। সে সঙ্গে ব্যাংকের সব ঋণের ক্ষেত্রেই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা অনুসরণ করতে বলা হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক কর্মকর্তা বলেন, গ্রাহকদের বিদ্যমান ঋণ হিসাবে সুদ হারের আকস্মিক ঊর্ধ্বমুখী পরিবর্তনের প্রবণতা পরিহার প্রসঙ্গে গত ২০১৮ সালের ৩০ মে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। ব্যাংকটি সেই প্রজ্ঞাপন অমান্য করে গ্রাহকের ঋণের সুদের হার অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি করেছে।
সূত্রে আরও জানা যায়, পরিবর্তনশীল সুদহার বিশিষ্ট মর্টগেজ গৃহ নির্মাণ ঋণে ৩ হাজার ৬০৭ জন গ্রাহককে ঋণ বিতরণ করা হয়েছিল। এর মধ্যে বেশ কিছু ঋণ সমন্বয় করা হলেও বেশির ভাগ ঋণই চলমান রয়েছে। ব্যাংকের তথ্য মতে দেখা যায়, ব্যাংক কর্তৃক বছরে ঋণসমূহে একবারের পরিবর্তে বছরে ২ বার ঋণের সুদহার বৃদ্ধি করা হয়েছে, যা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা পরিপন্থি।
২০১৮ সালের ৩০ মের পর হতে ৩ হাজার ৪৩৮ জন গ্রাহকের সুদ হার প্রথম বারের মতো বৃদ্ধি পেয়েছে। এর মধ্যে ২৮৪ জন গ্রাহকের সুদ হারের বৃদ্ধির হার দশমিক ৫০ শতাংশের অধিক হওয়ায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রজ্ঞাপন অমান্য করেছে।
অন্যদিকে একই তারিখের পর থেকে ১ হাজার ৮১৩ জন গ্রাহকের সুদ হার তৃতীয় বারের মতো বৃদ্ধি পেয়েছে। এর মধ্যে ১ হাজার ৮১২ জন গ্রাহকের ক্ষেত্রে সুদ বৃদ্ধির হার দশমিক ৫০ শতাংশের অধিক হয়েছে।
সূত্রে আরও জানা যায়, স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের স্কিম বৈশিষ্ট্য বিআরপিডি সার্কুলারের সঙ্গে অসঙ্গতি রয়েছে। অন্যদিকে সাদিক গৃহ নির্মাণ ঋণের ক্ষেত্রেও স্টান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক একইভাবে বিআরপিডি সার্কুলারের নির্দেশনা লঙ্ঘন করেছে।
এ বিষয়ে স্টান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার (সিইও) নাসের এজাজ বিজয়ের বক্তব্য জানার চেষ্টা করেও তার বক্তব্য পাওয়া সম্ভব হয়নি।