ইন্টারন্যাশনাল ডেস্ক:
ষষ্ঠদশ শতকে বাংলায় আসা পর্তুগাল-বাংলাদেশের সম্পর্ক বহু পুরনো। ইতিহাসবিদদের মতে পর্তুগিজরা সর্বপ্রথম বাংলাতে এসেছিল। মূলত ব্যবসার সুবিধার জন্য পর্তুগিজ নাবিকরা চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহার করতেন। তৎকালীন সময়ে তারা চট্টগ্রামের ওপর নিজেদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে। তবে মোগল এবং আরাকানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে বেশিদিন সেই নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখতে পারেনি পর্তুগিজরা। সপ্তদশ শতকের মধ্যেই তারা চট্টগ্রামের উপর নিয়ন্ত্রণ হারায়। যদিও এখনও পর্যন্ত তৎকালীন পর্তুগিজ বংশধরেরা চট্টগ্রামের পুরাতন অংশে বসবাস করছেন।
পর্তুগিজরা সর্বপ্রথম বাংলা ভাষার ব্যাকরণ রচনা করে। পর্তুগিজ ধর্মযাজক ম্যানুয়েল দ্য আসসুম্প সাঁও প্রথম বাংলা ভাষার সেই ব্যাকরণ রচনা করেন। সুদীর্ঘ পথচলায় পর্তুগাল ও বাংলাদেশের মধ্যে অত্যন্ত বন্ধুসুলভ সম্পর্ক বিদ্যমান।
দুদেশীয় সম্পর্ক অত্যন্ত প্রাচীন হলেও বাংলাদেশ ও পর্তুগালের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক অর্থনৈতিক, ব্যবসায়িক কার্যক্রম আশানুরুপ প্রসারিত হয়নি। যদিও ২০১০ সালে দ্বৈত-কর পরিহার করতে দুই দেশের মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। ওই চুক্তিতে দুই দেশের মধ্যে ব্যবসায়িক সম্পর্ক আরও জোরদার করার কথা বলা হলেও এখনও পর্যন্ত দুদেশের বাণিজ্য তেমন প্রসারিত হয়নি।
ষষ্ঠদশ শতকে ব্যবসায়ের উদ্দেশ্যে পর্তুগিজ নাবিকরা বাংলাদেশে এলেও বাংলাদেশিদের পর্তুগালে আগমন শুরু ১৯৯১ সালের পর থেকে। এরপর থেকেই ধীরে ধীরে পর্তুগালে বাড়তে থাকে বাংলাদেশিদের সংখ্যা। পর্তুগালে বসবাসরত বেশিরভাগ বাংলাদেশিই আবার কোনো না কোনো ব্যবসায়ের সাথে সম্পৃক্ত। অনেকেই গল্পের ছলে বলে থাকেন ষষ্ঠদশ শতকে পর্তুগিজরা এই দেশে ব্যবসা করতে গিয়েছিলেন আর বিংশ শতাব্দীতে আমরা তাদের দেশে ব্যবসা করতে আসছি।
পর্তুগাল-বাংলাদেশ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক, পর্তুগালে বসবাসরত বাংলাদেশ কমিউনিটি এবং অভিবাসন বিষয়ে সরকারের ভাবনা নিয়ে সম্প্রতি কথা হয়েছে পর্তুগালের সরকারে থাকা রাজনৈতিক দল সোশ্যালিস্ট পার্টির পোর্তো শহর থেকে নির্বাচিত এমপি থিয়াগো বারবোজা রিবেইরোর সাথে। পর্তুগালের সরকারি দল সোশ্যালিস্ট পার্টির নীতিনির্ধারণীর অন্যতম সদস্য তিনি। এছাড়াও সরকারের সামাজিক নিরাপত্তাবিষয়ক উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করছেন। গ্রীষ্মকালীন ছুটির আগে ১৮ জুলাই (বুধবার) ছিল পর্তুগালের সংসদ অধিবেশনের শেষ দিন। অধিবেশন শেষে সংসদ ভবনের ‘সালা লিসবন’ হলে আলোচনায় পর্তুগালের বসবাসরত বাংলাদেশিদের প্রাণের দাবি বাংলাদেশে পর্তুগালের স্থায়ী দূতাবাস খোলার ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হয়।
এসময় বাংলাদেশি অভিবাসীদের ব্যপারে তার ধারনা জানতে চাইলে তিনি বলেন বাংলাদেশের মানুষেরা সেরা মানুষ এবং বাংলাদেশ কমিউনিটি পর্তুগালের অভিবাসী কমিউনিটিগুলোর মধ্যে সর্বশেষ্ঠ। আমার ব্যক্তিগতভাবে বহু বাংলাদেশির সাথে পরিচয় হয়েছে এবং একসাথে কাজ করেছি। বাংলাদেশের মানুষেরা সৎ, পরিশ্রমী ও অন্যদের ব্যাপারে যত্নবান বলে আমি মনে করি। নিজেদের কমিউনিটির উন্নয়নেও বাংলাদেশিরা বেশ আন্তরিক। এক কথায় বলতে গেলে ‘বাংলাদেশ ইজ দ্য বেস্ট’। ভবিষ্যতেও বাংলাদেশিরা পর্তুগালে আসবেন এবং পর্তুগাল হবে তাদের সেকেন্ড হোম।
সেরা নিউজ/আকিব