ইন্টারন্যাশনাল ডেস্ক:
ভারতের লোকসভায় দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দুই জন প্রয়াত বাংলাদেশি নেতাকে স্মরণ করেছেন। তারা হলেন – ভূপেন্দ্র কুমার দত্ত ও যোগেন্দ্রনাথ মণ্ডল।
বক্তব্যে এ দুই নেতাকে নিয়ে ঐতিহাসিক প্রসঙ্গ উত্থাপন করেছেন মোদি।
তিনি বলেন, ভূপেন দত্ত আর যোগেন মণ্ডল ছিলেন সেই বিরল হিন্দু রাজনীতিবিদদের অন্যতম, ‘যারা দেশভাগের সময় পূর্ব পাকিস্তানে (বাংলাদেশ) থেকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।’
মোদি তার ভাষণে আরো বলেন, ‘পরে তাদের দুজনকেই পূর্ব পাকিস্তান থেকে ভারতে চলে আসতে হয়, আর তাদের মৃত্যুও হয় ভারতেই। ভূপেন্দ্র কুমার দত্ত ভারতের জাতীয় কংগ্রেসের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্যও হন।’
গত ৬ ফেব্রুয়ারি পার্লামেন্টে রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর বিতর্কের জবাব দিতে গিয়ে এ দুই প্রয়াত বাংলাদেশি নেতার ইতিহাস টেনে আনেন মোদি।
উল্লেখ্য, ভূপেন্দ্র কুমার দত্ত ছিলেন যশোরের সন্তান ও স্বাধীনতা সংগ্রামী এক নেতা। আর যোগেন্দ্রনাথ মণ্ডলের জন্ম বরিশালে। তিনি দেশভাগের পর পাকিস্তান সরকারের প্রথম আইনমন্ত্রী ছিলেন।
হঠাৎই মোদি এ দুই বাংলাদেশির নেতাকে কেন স্মরণ করলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী? এ প্রশ্ন ছুড়েছেন অনেকে।
বিশ্লেষকরা জানিয়েছেন, বির্তকিত এনআরসি সংশোধনী আইনের স্বপক্ষে যুক্তি দিতে গিয়েই মোদি এ দুই নেতার প্রসঙ্গ উল্লেখ করেছেন।
সে সময় পাকিস্তান গঠন পর্বে সংবিধান প্রণয়নসহ মন্ত্রিসভায় ভূপেন্দ্র কুমার দত্ত ও যোগেন্দ্রনাথ মণ্ডলের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন।
এরপর পাকিস্তান সরকারের সঙ্গে বিভিন্ন নীতিতে দ্বিমত পোষণ করে এ দুই নেতা প্রতিবাদ করেন ও সংসদ সদস্য পদ থেকে পদত্যাগ করেন।
ভূপেন্দ্র কুমার দত্ত পাকিস্তানের সংবিধান সভা থেকে আর যোগেন্দ্রনাথ মণ্ডল সে দেশের প্রথম মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করেছিলেন।
ব্রিটিশ তাড়াও আন্দোলনের সশস্ত্র স্বাধীনতা সংগ্রামী ছিলেন ভূপেন্দ্র কুমার দত্ত। বিপ্লবী সংগঠন অনুশীলন সমিতির সক্রিয় সদস্যও ছিলেন ভূপেন্দ্র। জীবনের প্রায় ২৩ বছর জেলে কাটিয়েছেন তিনি।
জেলে টানা ৭৮ দিন অনশনের ইতিহাস এ রাজনীতিবিদেরই রয়েছে।
দেশভাগের পর পূর্ব পাকিস্তানেই (বাংলাদেশ) থেকে যান ভূপেন এবং দেশের সংবিধান রচনার কাজেও যোগ দেন।
১৯৬২ সালে রাজনীতি ত্যাগ করে ভূপেন দত্ত ভারতে চলে আসেন। ১৯৭৯ সালে ভারতেই তার মৃত্যু হয়।
এদিকে রাজনীতিতে সক্রিয় যোগেন্দ্র নাথ মণ্ডল দেশভাগের পর পাকিস্তানের প্রথম আইন ও শ্রমমন্ত্রীর দায়িত্ব পান। দেশের কেবিনেট মন্ত্রী হিসেবে ১৯৪৭ সালে তিনি করাচিতেও যান।
কিন্তু মাত্র তিন বছরের মধ্যেই হতাশ ও বীতশ্রদ্ধ হয়ে তিনি মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করেন।
১৯৫০ সালের ৯ অক্টোবর তৎকালিন প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলী খানের কাছে পদত্যাগপত্র লিখে রাজনীতিকে বিদায় জানান যোগেন্দ্র।
ভারতের পার্লামেন্টে মোদি যোগেন মণ্ডলের সেই চিঠি থেকে কিছু অংশ পুরোটাই উদ্ধৃত করেন এবং তিনি কেন মন্ত্রিত্ব পদ ছেড়ে ভারতে চলে আসেন সে ব্যাখা দেন।
ভারতে আসার পর ১৯৬৮ সালে কলকাতার কাছে বনগাঁতে মারা যান যোগেন্দ্র।
সেরা নিউজ/আকিব