স্পোর্টস ডেস্ক:
বাংলাদেশ ক্রিকেটের একটা বড় অধ্যায় মাশরাফি বিন মর্তুজা। ওই অধ্যায়ের একটা বড় চ্যাপ্টার অধিনায়ক মাশরাফি। বাংলাদেশেরা ক্যাপ্টেন ফ্যান্টাসটিকের ঘোষণার অনুযায়ী, জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে শুক্রবার অধিনায়ক হিসেবে খেলেছেন শেষ ম্যাচ। ম্যাশ যেভাবে নেতৃত্ব শুরু করেছিলেন, আর যেখানে শেষ করলেন তা সেরা নিউজের পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো:
২৩ জুন ২০০৯: নেতৃত্ব গ্রহণ
ইংল্যান্ডে অনুষ্ঠিত ২০০৯ টি২০ বিশ্বকাপের পর মোহাম্মদ আশরাফুলকে সরিয়ে মাশরাফিকে অধিনায়ক ঘোষণা করে বিসিবি। বিস্মিত মাশরাফি প্রতিক্রিয়ার একপর্যায়ে বলেন, ‘অধিনায়ক হওয়ার আকাঙ্ক্ষা আমার কখনোই ছিল না। আমি অন্যের নেতৃত্বে খেলতেই পছন্দ করি।’ অধিনায়কত্বের প্রথম দায়িত্ব হিসেবে পরে জুলাইয়ের ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফর।
১০ জুলাই, ২০০৯ :শুরুতেই ধাক্কা
ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে টেস্ট, ওয়ানডে এবং টি২০-তে নেতৃত্ব দেওয়ার কথা তার। সফর শুরু হয় কিংস্টন টেস্ট দিয়ে। কিন্তু তৃতীয় দিন সকালেই হাঁটুর চোটে পড়লে মাঠ ছাড়তে হয়। ম্যাচের, সফরের এবং অধিনায়কত্বেরও সমাপ্তি ঘটে যায় ওখানেই।
অক্টোবর ২০০৯ :কেবলই আসা-যাওয়া
দুই মাস মাঠের বাইরে থাকার পর অক্টোবরে জিম্বাবুয়ে সিরিজের দলে ফেরেন। ওয়ানডে অধিনায়কত্বের অভিষেক হওয়ার কথা ২৭ অক্টোবর। কিন্তু এর পাঁচ দিন আগে ফিটনেসজনিত কারণে আবারও ছিটকে পড়েন। এরপর জানুয়ারিতে ভারত-শ্রীলংকাকে নিয়ে আয়োজিত ত্রিদেশীয় সিরিজের জন্য প্রাথমিক দলে আবার যুক্ত করা হয় তাকে। কিন্তু ২০০৯ সালের শেষ দিনে আবারও আনফিটের কারণে সরিয়ে নেওয়া হয়। আসা-যাওয়ার খেলা আরেকবার চলে জানুয়ারিতে। খেলার মতো ফিট হয়ে ওঠায় ২৭ জানুয়ারি তার নাম রেখে ঘোষণা করা হয় নিউজিল্যান্ড সফরের স্কোয়াড; কিন্তু এবার আটকে যান জ্বরের কারণে।
৮ জুলাই ২০১০ :অবশেষে ওয়ানডে অভিষেক
ছয় মাস পর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফিরে ফেব্রুয়ারিতে খেলেন ঢাকায় ইংল্যান্ডের বিপক্ষে, জুনে শ্রীলংকায় এশিয়া কাপে। দুটি প্রতিযোগিতায়ই ছিলেন একাদশের একজন, অধিনায়ক ছিলেন সাকিব আল হাসান। তবে জুলাইয়ে ইংল্যান্ডে ফিরতি সফরে যাওয়ার ঠিক আগের দিন আচমকাই মাশরাফিকে ফের অধিনায়ক ঘোষণা করে বিসিবি, অথচ দু’দিন আগে ঘোষিত দলের নেতৃত্বে ছিলেন সাকিবই। দ্বিতীয় দফার দায়িত্বে ওয়ানডেতে প্রথমবার নেতৃত্ব দেওয়ার সুযোগ পান। ৮ জুলাই নটিংহামে টস করেন অ্যান্ড্রু স্ট্রসের সঙ্গে। টস জিতলেও দল ম্যাচ হেরে গিয়েছিল ৬ উইকেটে।
৩০ সেপ্টেম্বর, ২০১৪ :তৃতীয় দফা অধিনায়ক
২০১০ সালে দ্বিতীয় দফা অধিনায়কত্ব পেয়ে মাত্র ৭টি ওয়ানডেতে নেতৃত্ব দিতে পেরেছিলেন। এরপর আরেকবার চোটে পড়েন। ফিটনেসের কারণে বাদ পড়েন ২০১১ বিশ্বকাপ থেকেও। বিশ্বকাপের পর দলে ফিরলেও ততদিনে সাকিব নিয়মিত অধিনায়ক হয়ে গেছেন। আবার সাকিব-যুগ পেরিয়ে মুশফিকুর রহিমও দায়িত্ব পেয়েছেন। তবে ২০১৫ বিশ্বকাপ সামনে রেখে আরেকবার ভাবনায় চলে আসেন মাশরাফি। ২০১৪ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর মুশফিককে সরিয়ে আসন্ন জিম্বাবুয়ে সিরিজের জন্য মাশরাফিকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। নভেম্বরে জিম্বাবুয়ে সিরিজ দিয়ে শুরু হয়ে সবচেয়ে দীর্ঘ ও দেশের ইতিহাসের সফল নেতৃত্ব-পর্ব।
ফেব্রুয়ারি-মার্চ ২০১৫ :নেতার আবির্ভাব
অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডের মাটিতে বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনাল খেলবে বাংলাদেশ- এমন কিছু ছিল অভাবনীয়। কিন্তু সেটিই করে দেখায় অভিজ্ঞ ও তারুণ্যের মিশেলে গড়া বাংলাদেশ দল। যেখানে একজন ক্যারিশমেটিক অধিনায়ক হিসেবে মাশরাফিকে আবিষ্কার করে বিশ্ব ক্রিকেট। হয়ে ওঠেন দেশের ক্রিকেটের অবিসংবাদিত অধিনায়ক।
এপ্রিল ২০১৫ :অপ্রতিরোধ্য জয়যাত্রা
বিশ্বকাপ সাফল্যের পর অব্যাহত থাকে বাংলাদেশ দলের সাফল্য। দেশের মাটিতে টানা তিনটি ওয়ানডে সিরিজে হারায় পাকিস্তান, ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকাকে। অধিনায়ক মাশরাফি উঠে যান সাফল্যের চূড়ায়।
অক্টোবর ২০১৬ :অধিনায়ক ক্রেজ
একের পর এক সিরিজ বা টুর্নামেন্টে অধিনায়ক মাশরাফি এতটাই ভাস্বর হয়ে ওঠেন যে, কেবল নেতৃত্বের কারণেই বাংলাদেশের ক্রিকেটের প্রধান চরিত্র হয়ে ওঠেন তিনি। ২০১৬-এর ১ অক্টোবরে মিরপুরে আফগানিস্তানের বিপক্ষে খেলার সময় এক দর্শক গ্যালারির বাধা টপকে মাঠের ভেতর মাশরাফির কাছে ছুটে যান।
জুন, ২০১৭ :বৈশ্বিক টুর্নামেন্টের প্রথম সেমি
বাংলাদেশের কোনো জাতীয় দল এখন পর্যন্ত আইসিসির টুর্নামেন্টে একবারই সেমিফাইনাল খেলেছে। ২০১৭ সালের জুনে ইংল্যান্ডে হওয়া সেই চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি সাফল্যের অধিনায়ক ছিলেন মাশরাফি।
মে ২০১৯ :প্রথম ট্রফি জয়
দ্বিপক্ষীয় সিরিজে একাধিক জয় পেলেও তিন বা এর বেশি দেশ নিয়ে আয়োজিত কোনো টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন হতে পারছিল না বাংলাদেশ। ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে দুবাইয়ে অনুষ্ঠিত এশিয়া কাপের ফাইনালে উঠেও হতাশা নিয়ে মাঠ ছাড়তে হয়েছিল। অবশেষে অধরা সেই ট্রফি ধরা দেয় ২০১৯ বিশ্বকাপের আগমুহূর্তে। আয়ারল্যান্ডে আয়োজিত ত্রিদেশীয় ওই আসরের ফাইনালে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারায় মাশরাফির দল।ৎ
জুন-জুলাই ২০১৯ :হতাশার বিশ্বকাপ
ছোটখাটো আক্ষেপ বাদে তৃতীয় দফার অধিনায়কত্বে প্রায় পাঁচ বছরই সাফল্যের মধ্যে ছিলেন মাশরাফি। কিন্তু দুই বছর আগে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সেমিফাইনাল খেলার স্মৃতি ছিল যে দেশে, সেই ইংল্যান্ডে গিয়েই হতাশায় ডোবেন মাশরাফি। গ্রুপ পর্বে আট ম্যাচ খেলে মাত্র তিনটি জয় পায় বাংলাদেশ। বোলার মাশরাফি ছিলেন বিবর্ণ, পান মাত্র ১ উইকেট। তবে অধিনায়ক মাশরাফিকে নিয়ে প্রশ্ন ওঠেনি কখনোই।
মার্চ ২০২০ :শেষের বাঁশি
বিশ্বকাপের পর জিম্বাবুয়ে সিরিজেই প্রথমবার খেলতে নামলেন। সিরিজ শুরুর আগে ইঙ্গিত দিয়েছিলেন নেতৃত্ব চালিয়ে যাওয়ার। কিন্তু সবাইকে চমকে দিয়ে নেতৃত্ব ছাড়ার ঘোষণা দিলেন ৫ মার্চ, সিলেটে। পেছন ফিরে তাকালে দেখা যাবে, ২০০৯ সালের ২৩ জুন প্রথমবার নেতৃত্ব পেয়ে চমকে গিয়েছিলেন মাশরাফি নিজেই।
সেরা নিউজ/আকিব