নির্যাতনের তথ্য আড়াল করতে বুয়েট শিক্ষার্থীদের ওয়েবসাইট বন্ধ - Shera TV
  1. [email protected] : akibmahmud :
  2. [email protected] : f@him :
নির্যাতনের তথ্য আড়াল করতে বুয়েট শিক্ষার্থীদের ওয়েবসাইট বন্ধ - Shera TV
সোমবার, ০৬ মে ২০২৪, ১১:০৮ অপরাহ্ন

নির্যাতনের তথ্য আড়াল করতে বুয়েট শিক্ষার্থীদের ওয়েবসাইট বন্ধ

সেরা টিভি
  • প্রকাশের সময় : বৃহস্পতিবার, ১০ অক্টোবর, ২০১৯

অনলাইন ডেস্ক:

‘নিরাপত্তা’র কারণ দেখিয়ে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বা সিএসই বিভাগের শিক্ষার্থীদের চালু করা ওয়েবপেজটি ব্লক করে দিয়েছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ বিটিআরসি।

শুধু সিএসই বিভাগের ওয়েবপেজ ব্লক করার কথা বলা হলেও, বুয়েটের ওয়েব সাইটেই সকাল থেকে প্রবেশ করা যায়নি।

বিটিআরসির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ জহুরুল হক বলেছেন, নিরাপত্তার জন্য যতদিন প্রয়োজন ততদিন ব্লক থাকবে ওয়েবসাইটটি।

তবে কর্তৃপক্ষের এমন সিদ্ধান্তের পর আন্দোলনরত শিক্ষার্থী এবং বিশ্লেষকদের অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন, কর্তৃপক্ষ নির্যাতনের অভিযোগ ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করছে কি না।

ওয়েবসাইটে যা ছিল

বুয়েটের সিএসই বিভাগের একটি গবেষণা প্রকল্পের অংশ হিসেবে ২০১৬ সালের শেষে ওয়ান-স্টপ অনলাইন রিপোর্টিং সিস্টেম সংক্ষেপে ‘ইউ রিপোর্টার’ নামে একটি সার্ভার গড়ে তোলে বিভাগের শিক্ষার্থীরা।

এতে বুয়েটের শিক্ষার্থীরা নিজের পরিচয় গোপন রেখে অভিযোগ জানাতে পারেন।

সিএসই বিভাগের অধ্যাপক মোস্তফা আকবর জানিয়েছেন, বিভিন্ন সময় আবাসিক হলে শিক্ষার্থীরা যে ধরণের হেনস্থা ও নিপীড়নের শিকার হয়, সে সম্পর্কে নিজের পরিচয় প্রকাশ না করে, একজন শিক্ষার্থী অভিযোগ করে প্রতিকার পেতে পারবে, এমন ধারণা থেকে ঐ সার্ভার গড়ে তোলা হয়।

বুধবার পর্যন্ত সেখানে ১০৬টি অভিযোগ এসেছে, যার অনেকগুলোই জমা পড়েছে আবরার ফাহাদ নিহত হবার পর।

ওয়েবসাইট ব্লক করার যে কারণ দেখাচ্ছে বিটিআরসি

বিটিআরসি বুধবার বাংলাদেশের ইন্টারন্যাশনাল ইন্টারনেট গেটওয়ে অপারেটর এবং ইন্টারনেট সেবা প্রদানকারী আইএসপি প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন বরাবর চিঠি লিখে ঐ ওয়েবপেজ ব্লক করার নির্দেশ দেয়।

বিটিআরসির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ জহুরুল হক জানিয়েছেন, ‘নিরাপত্তা’র কারণে ওয়েবপেজটি বন্ধ করা হয়েছে। তিনি বলেন, নিরাপত্তার কারণে যতদিন প্রয়োজন, ততদিন বন্ধ থাকবে ওয়েবপেজটি।

শিক্ষার্থীদের আন্দোলন থেমে গেলে নিষেধাজ্ঞা উঠে যেতে পারে বলে ইঙ্গিত দেন তিনি।

এদিকে, বুয়েটে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা মনে করেন, তাদের ওপর ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো যাতে আর প্রকাশ না পায়, টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ সে উদ্দেশ্যে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

নাম ও বিভাগ প্রকাশ করতে চান না আন্দোলনরত এমন একজন ছাত্রী বলছিলেন, “ওয়েবপেজটিতে আমরা আমাদের ওপর ঘটে যাওয়া নির্যাতনের বিষয়গুলো শেয়ার করতে পারতাম। এখন সেটা বন্ধ করে দেয়া মানে আমাদের মত প্রকাশে বাধা দেয়া।”

“এখানে বাধা আসার কিছু ছিল না, এখানে অনৈতিক কিছু হচ্ছে না। অথবা আমরা এমন কিছুও করিনি যা ক্ষোভ জন্ম দিতে পারে। যে কারণে কর্তৃপক্ষের এই সিদ্ধান্তে আমরা ক্ষুব্ধ ও বিস্মিত।”

ইমা নামের আরেকজন ছাত্রী, যিনি নিজের এই নামটিই শুধু জানিয়েছেন বিবিসিকে, তিনি বলছিলেন, “এটা ছিল সাধারণ শিক্ষার্থীদের একটা প্ল্যাটফর্ম, যারা খুনিদের হাতে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। কারো কাছ থেকেই সেই প্ল্যাটফর্ম কেড়ে নেয়া ঠিক কাজ হয়নি। আমরা চাইনা আমাদের ওপর অত্যাচার চলুক।”

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে কর্তৃপক্ষ নির্যাতনের অভিযোগ ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করছেন।

অভিযোগ ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা?

২০১৬ সালের শেষ দিকে প্রতিষ্ঠা হবার পর নয়ই অক্টোবর পর্যন্ত সিএসই বিভাগের ওই সার্ভারে ১০৬টি অভিযোগ জমা পড়েছে।

এসব অভিযোগের প্রায় সবগুলোই নির্যাতনের শিকার শিক্ষার্থীদের অভিজ্ঞতার বর্ণনা।

নির্যাতনের যেসব অভিযোগ এসেছে, তার মধ্যে অনেকগুলোই ফৌজদারি অপরাধের মধ্যে পড়ে।

অভিযোগ ধরে অপরাধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবার বদলে কর্তৃপক্ষের ওয়েবসাইট ব্লক করার সিদ্ধান্তের মাধ্যমে অভিযোগের জায়গা বন্ধ করে দেয়ার সমালোচনা করেছেন অনেকে।

মানবাধিকার কর্মী সুলতানা কামাল বলছেন, “বিচার ব্যবস্থার একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও মৌলিক স্তম্ভ হচ্ছে অভিযোগ দিতে পারা। এটিকে বিচারের ‘অভিজ্ঞমতা’ বলে। বুয়েটের ওয়েবসাইটটি বন্ধ করার মাধ্যমে বিচারের সেই অভিজ্ঞমতা বন্ধ করে দিল কর্তৃপক্ষ।”

“সেটি যখন কর্তৃপক্ষ ইচ্ছা করে বন্ধ করে দিয়েছে, এখন আমরা যদি বলি যে নির্যাতনের অভিযোগ যাতে না আসে বা অভিযোগ ধামাচাপা দেয়া যায়, সে উদ্দেশ্যে করা হয়েছে, তাহলে ভুল হবে না। একইসঙ্গে যাতে অভিযোগগুলোর ব্যপারে ব্যবস্থা নিতে না হয়, বিচার না করতে হয়, হয়ত সেজন্যই ওয়েবসাইট ব্লক করা হয়েছে।”

অভিযোগের ব্যপারে কী ব্যবস্থা নিয়েছে বুয়েট?

সিএসই বিভাগের অধ্যাপক মোস্তফা আকবর বলেছেন, আবরার ফাহাদ নিহত হবার আগ পর্যন্ত প্রাপ্ত অভিযোগগুলো সম্পর্কে বুয়েটের উপাচার্য, রেজিস্টার এবং ছাত্র কল্যাণ পরিচালককে চিঠি দিয়ে জানানো হয়েছে।

“সে প্রেক্ষাপটে কর্তৃপক্ষ হল প্রশাসনকে সতর্ক করেছেন বলে শুনেছি। তবে কোন ব্যবস্থার কথা শুনিনি।”

তবে, অধ্যাপক আকবর জানিয়েছেন, বিটিআরসি ব্লক না করলেও সিএসই বিভাগ নিজেই ঐ সার্ভার বন্ধের কথা ভাবছে।

“যে গবেষণা প্রকল্পের আওতায় ঐ সার্ভার তৈরি করা হয়েছিল, সেজন্য ‘যথেষ্ট’ কেসস্টাডি পাওয়া গেছে, এখন সংশ্লিষ্ট শিক্ষক সার্ভারটি বন্ধ করে দিতে চান।”

সার্ভার বন্ধে সরকারি বা কর্তৃপক্ষের কোন নির্দেশনা রয়েছে কিনা সে প্রশ্নের কোন জবাব তিনি দেননি।

Please Share This Post in Your Social Media

এই ক্যাটাগরীর আরও সংবাদ
© All rights reserved by Shera TV
Developed BY: Shera Digital 360