শুক্রবার (২৪ জুলাই) স্থানীয় সময় দুপুর ১টা ৪০ মিনিটে (বাংলাদেশ সময় বিকেল ৪টা ৪০) জুমার আজান দেওয়া হয়। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়েব এরদোগানের ভেরিফাইড ফেসবুক পেজ থেকে জুমার নামাজ সরাসরি সম্প্রচার করা হয়।
এখন থেকে আয়া সোফিয়ায় প্রতিদিন ধ্বনিত হবে আজানের সুর। ইতোমধ্যে আয়া সোফিয়ায় নিয়োগ দেওয়া হয়েছে দুই জন ইমাম ও চার জন মুয়াজ্জিন।
জুমার নামাজ স্থানীয় সময় দুপুর আড়াইটার দিকে শেষ হয়। এর আগে খতিব সাহেব খুতবায় আয়া সোফিয়ার প্রেক্ষাপট নিয়ে বক্তব্য রাখেন। নামাজের পর মোনাজাত শেষ হয় ২টা ৩৭ মিনিটে।
শুক্রবার জুমার নামাজে ইমামতি করেন, বসোনিয়া বংশোদ্ভূত বিশিষ্ট আলেম ও কারি ফারুহ মিশতাওয়ার। তিন সন্তানের জনক শায়খ ফারুহ ১৯৭১ সালে জম্মগ্রহণ করেন। শায়খ ফারুহ মাত্র ১১ বছর বয়সে হেফজ সম্পন্ন করেন। ২০১৩ সালে ইস্তাম্বুলের প্রসিদ্ধ ইয়ানি মসজিদের ইমাম হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৫ সালে তিনি কুয়েতের কেরআন প্রতিযোগিতায় তুরস্কের প্রতিনিধিত্ব করে প্রথম স্থান অধিকার করেন।
ধারণা করা হচ্ছে, জুমার নামাজে এক লাখের বেশি মানুষ অংশ নিয়েছেন। জুমার নামাজের মূল মসজিদে দেশটির বিরোধী দলীয় নেতারাও নামাজে অংশ নিয়েছেন।
এর আগে বৃহস্পতিবার তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোগান ও তার স্ত্রী আয়া সোফিয়া মসজিদের নতুন নামফলক উম্মোচন করেন।
আয়া সোফিয়ায় জুমার উপলক্ষে শুধু তুর্কিরা নয়, সারাবিশ্বের মুসলমানদের মধ্যে অন্যরকম এক আনন্দ-অনুভূতি কাজ করছে। ইস্তাম্বুলের ঐতিহাসিক এই স্থাপনাটিকে পুনরায় মসজিদ হিসেবে চালু করতে ব্যাপক জাঁকজমক পূর্ণ আয়োজন করেছে কর্তৃপক্ষ। বড় জনসমাগমের কারণে কিছু রাস্তা বন্ধ করে দেওয়া হয় সকাল থেকেই।
সামাজিক দূরত্ব ও ইসলামি বিধি-বিধান মেনে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে জুমার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। উপস্থিত মুসল্লিরা মসজিদের ভেতরে, চত্বরে ও আশেপাশের রাস্তায় নামাজে অংশ নিয়েছেন।
জুমার নামাজ আদায়ের পাঁচটি স্থান নির্ধারণ করা হয়। যার মধ্যে দুইটি স্থান নির্ধারিত ছিলো নারীদের জন্য।
জুমার নামাজ উপলক্ষে মসজিদটি সকাল ১০টায় দর্শণার্থীদের জন্য খুলে দেওয়া হয়। এর আগে থেকেই মুসল্লিরা প্রবেশপথগুলোতে ভীড় জমান। ১১ চেক পয়েন্ট দিয়ে কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে মুসল্লিরা মসজিদে প্রবেশ করেন।
মসজিদটি শনিবার ফজর পর্যন্ত খোলা থাকবে। যাতে আগত দর্শনার্থীরা নামাজের জন্য পর্যাপ্ত সময় পান।
এর আগে বৃহস্পতিবার ইস্তাম্বুলের গভর্নর আলী ইয়ারলিকায়া স্থানীয় গণমাধ্যমে বলেন, ‘আমরা জানি, দর্শনার্থীদের আয়া সোফিয়ায় নামাজ আদায় করা সবচেয়ে বড় আকাঙ্ক্ষা।’ এই চাহিদা সঠিকভাবে মেটানোর জন্য প্রয়োজনীয় সতর্কতা অবলম্বন করা হচ্ছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
ইস্তাম্বুলের গভর্নর অফিস থেকে দ্রুত ও সহজে মসজিদে প্রবেশের জন্য দর্শণার্থীদের কোনো ধরণের ব্যাগ না নিয়ে আসার অনুরোধ জানিয়েছিলেন।
মসজিদ কমপ্লেক্সে আগত দর্শনার্থীদের শরীরে তাপমাত্রা পরীক্ষা করা হয়। এ উপলক্ষে ১৭টি স্বাস্থ্য পরীক্ষা কেন্দ্র স্থাপন করা হয়। যেখানে ৭৩৬ জন স্বাস্থ্যকর্মী ১০১টি গাড়ি ও একটি হেলিকপ্টারের সমন্বিত একটি অ্যাম্বুলেন্স ইউনিট সক্রিয় ছিলো।
আয়া সোফিয়ায় জুমা উপলক্ষে ইস্তাম্বুল মেট্রোপলিটন মিউনিসিপ্যালিটিও (আইবিবি) ব্যাপক উদ্যোগ গ্রহণ করে। মসজিদে যাতায়াতের জন্য ২৫টি শাটালার ট্রেন ফ্রি করে দেওয়া হয়। মসজিদ সংলগ্ন এলাকার পার্কিং ফ্রি করা হয়।
মিউনিসিপ্যালিটি কর্তৃপক্ষ ২৫ হাজার পানির বোতল, মাস্ক, জীবাণুনাশক এবং জায়নামাজ সরবরাহ করেছে।
দেশি-বিদেশি পর্যটকদের কাছে তুরস্কের সর্বাধিক দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে আয়া সোফিয়া অন্যতম। ১৯৮৫ সালে জাদুঘর হিসেবে স্থাপনাটি ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্য তালিকার অন্তর্ভুক্ত হয়।
ইস্তাম্বুলে অবস্থিত এই ঐতিহাসিক স্থাপনাটি ৯১৬ বছর টানা চার্চ হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। আর ১৪৫৩ সাল থেকে শুরু করে ১৯৩৫ সাল প্রায় পাঁচশত বছর ধরে মসজিদ হিসেবেই পরিচিত ছিল এটি। এরপর ৮৬ যাবত এটা জাদুঘর হিসেবে পরিচিত ছিল।
গত ১০ জুলাই তুর্কি আদালতের রায়ে ১৯৩৪ সালের তৎকালীন মন্ত্রী পরিষদের জাদুঘরে রুপান্তরিত করার আদেশটি রহিত করার পর আয়া সোফিয়াকে পুনরায় মসজিদ হিসেবে চালু করার সিদ্ধান্ত হয়।
এরপর ১৬ জুলাই তুরস্কের ধর্ম বিষয়ক অধিদপ্তর এটি মসজিদে রূপান্তরিত হওয়ার পরে আয়া সোফিয়া পরিচালনার জন্য সংস্কৃতি ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে একটি সহযোগিতা চুক্তি স্বাক্ষর করে।
ওই চুক্তির অধীনে দেশটির সংস্কৃতি ও পর্যটন মন্ত্রণালয় আয়া সোফিয়ার সংস্কার ও সংরক্ষণের কাজ তদারকি করবে এবং ধর্ম বিষয়ক অধিদপ্তর ধর্মীয় সেবা তদারকি করবে বলে সিদ্ধান্ত হয়। ইতোমধ্যে ঐতিহাসিক এই স্থাপনাটি বিনামূল্যে পরিদর্শনের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। যেখান থেকে নিয়মিত ৪ মুয়াজ্জিনের কণ্ঠে ধ্বনিত হবে সুমধুর আজানের সুর। তবে আয়া সোফিয়ায় নামাজের সময় অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের স্থাপনা ও নিদর্শনগুলো কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখা হবে।
এ দিকে আয়া সোফিয়াকে মসজিদে রূপান্তরের বিষয়ে বিশ্বব্যাপী অনেকেই পক্ষ-বিপক্ষ মত দিয়েছেন। তুরস্কের বিরোধী দলীয় নেতা মেরাল আখসেনার আয়া সোফিয়াকে মসজিদে রূপান্তর করার পক্ষে মত দিয়েছেন। তবে তিনি আয়া সোফিয়া নিয়ে রাজনীতি না করার মতামতও তুলে ধরেছেন।